জেলবন্দিদের জায়গা হয়েছে এ রাজ্যের পাঠ্যবইয়ে। শিক্ষাকে তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি কর্পোরেটদের হাতে। আর অবৈজ্ঞানিক বক্তব্য চালু করা হচ্ছে সিলেবাসে। শিক্ষাকে সাধারণের সাধ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য- দুই সরকারেরই এই শিক্ষানীতিকে রুখতে হবে।
শনিবার ঘাটাল শহরের শিলাবতী মাঠে সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। এসএফআই’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ৩৬তম সম্মেলন উপলক্ষে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘এরা শিক্ষার অধিকার ভুলিয়ে দিতে তৎপর। এরা শিক্ষার পরিকাঠামো নষ্ট করে বেসরকারি কর্পোরেট বেনিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করছে। অবৈজ্ঞানিক কাল্পনিক বুজরুকির সিলেবাস চালুর জন্য আর্থিক বরাদ্দ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একেই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বলে কাঁসর বাজাচ্ছে।’’
রাজ্যের তৃণমূল সরকারের শিক্ষানীতির তীব্র সমালোচনা করেন মীনাক্ষী। বস্তুত, রাজ্য কেন্দ্রের দেখানো পথেই চলছে। তিনি বলেন, ‘‘শিশু এবং পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের খাবার লুট হয়েছে। রেশনে লুট হয়েছে। প্রসূতি মায়ের পাতের পুষ্টি লুটে নিয়েছে। আর রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী বেহিসাবি টাকার হিসাব দেখাতে গিয়ে বলছেন যে তাঁর মেয়ে নাকি টিউশনি করে এই আয় করেছেন!’’
মীনাক্ষী শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলেছেন সজোরে। তিনি বলেছেন, ‘‘শিক্ষা মন্ত্রী কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে ভুয়ো শিক্ষকদের চাকরি দিয়েছেন। যোগ্যরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন।’’
উল্লেখ্য রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী আবার তৃণমূলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে নিজেরও নামও পাঠ্যবইয়ে ঢুকিয়েছেন।
মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘এমন বেইমানদের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াইতে ছাত্র এবং যুবরা অংশ নেবে কৃষক শ্রমিক খেতমজুর সহ অন্য অংশগুলির সঙ্গে।’’ সব অংশকে শিক্ষা বাঁচানোর, রাজ্য বাঁচানোর, দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন যুবনেত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের বিশ্বাস ও আবেগকে নিয়ে ফের ধর্মের জিগির তোলা হচ্ছে। উদ্দেশ্য রাজনীতিতে ফায়দা তোলা। আমাদের দেশে বহু মন্দির মসজিদ গির্জা সহ নামান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে,আরেও হতে পারে। কিন্তু সেটি প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বা কোনেও সরকারের কাজ নয়। বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি পালন করেনি মোদী সরকার। তাহলে ক্ষমা চাইতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগে বলুন দেশে কয়টা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, কয়টি আইআইটি বানিয়েছেন। গবেষণা, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি উন্নয়নে কত বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। কেবল বাড়িয়েছেন জ্বালানি তেল, রান্নার গ্যাস, জীবনদায়ী ঔষধ সহ খাদ্য বস্তুতে। ভারত দ্রারিদ্র সীমার নীচে নামতে নামতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নিচে গিয়ে ঠেকেছে।’’
এসএফআই’র সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধর বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে শিক্ষার পরিকাঠামো বামফ্রন্ট যতটা বিস্তার করেছিলো তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার তাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র ও ছাত্রসংসদ ফিরিয়ে আনার লড়াইতে আমাদের কমরেডরা শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন। আমরা বলি, হিম্মত থাকলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে দেখাক এই সরকার।’’
তিনি মনে করিয়েছেন যে রাজ্যে ৮২০৭টি বিদ্যালয়ে তালা চাবি ঝুলতে চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ জঙ্গলমহল মিলিয়ে সেই সংখ্যা ১০৮০টি। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে কর্মসংস্থান কমল রাজ্যে ১৯ হাজার ৮০২টি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক রনিত বেরা। সভাপতিত্ব করেন সুকুমার মাঝি।
ঘাটাল শহরের টাউন হলে সলিল চৌধুরী তরুণ মজুমদার নামাঙ্কিত নগর, কমরেড পারসন খেড়িয়া-কমরেড অনির্বাণ হাজরা মঞ্চে সম্মেলনে শ্লোগান উঠেছে, ‘রুখে দাও সিলেবাসের বিকৃতি, শিক্ষার আঙিনায় অর্থের দাপট, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি।’ স্লোগান উঠেছে, ‘শিক্ষা বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, বিভেদ রুখে স্বদেশ গড়ো’।
Comments :0