Letter Journalists CJI

‘নিউজক্লিক’: দেশের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি সাংবাদিকদের

জাতীয়

‘নিউজক্লিক’-র সাংবাদিকদের বাড়ি ঢুকে তল্লাশির ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের দাবি উঠল। সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন এই দাবিতে একসঙ্গে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে।

কেবল সংবাদ ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল প্রকাশনা রয়েছে এমন সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলির সংগঠন ডিজিপাব, প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া, উইমেন‘স প্রেস ক্লাব ফাউন্ডেশনের মতো একাধিক সংগঠন এই চিঠি পাঠিয়েছে বুধবার। চিঠিতে তাঁরা প্রধানবিচারপতিকে বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের বড় অংশকেই শাস্তির মুখে পড়ার হুমকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’’

‘নিউজক্লিক’-র উদাহরণ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘খেয়াল খুশিমতো সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। কোন ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ করা যাবে তা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। তৈরি হওয়া উচিত গাইডলাইন।’’ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘শাসনকে একটি মৌলিক সত্য স্মরণ করানোর দায়িত্ব বিচারবিভাগের- আমরা প্রত্যেকেই সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ।’’ 

মঙ্গলবার সংবাদ ওয়েবসাইট ‘নিউজক্লিক’-র সাংবাদিকদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায় দিল্লি পুলিশ। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদকের নামে বরাদ্দ বাসভবনও বাদ যায়নি তল্লাশি থেকে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোবাইল ও ল্যাপটপ। রাতে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ ও এক আধিকারিককে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার পাশাপাশি শ্রমজীবী বিভিন্ন অংশের লড়াই তুলে ধরার জন্য জনপ্রিয় ‘নিউজক্লিক’। বুধবার এই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে ‘চীনের প্রচার’ বা ‘দেশবিরোধী’ একটি প্রতিবেদনও চিহ্নিত করতে পারেনি দিল্লি পুলিশ। 

এদিনই কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মনে করিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিচের সারিতে। তিনি বলেছেন, ‘‘বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বিজেপি সরকার। যারা সরকারের জনবিরোধী ভূমিকা বিশ্লেষণ করছে, ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষের মত প্রকাশ করছে, তাদেরই হেনস্তা করছে। এর আগে এমন একাধিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের হেনস্তা করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। এই সরকার চায় কোনও প্রশ্ন করার অধিকার কারও থাকবে না।’’ পশ্চিমবঙ্গেও সাংবাদিক গ্রেপ্তারির সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। 

সাংবাদিকদের ঘরে ঢুকে তল্লাশির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মিছিলের ডাক দিয়েছে কলকাতা প্রেস ক্লাবও। এই মিছিলে অংশ নেবে ক্যালকাটা জার্নালিস্টস ক্লাবও। 

দিল্লিতে প্রধান বিচারপতিকে পাঠানো চিঠিতে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলি একই উদ্বেগ জানিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘মূল অপরাধের অভিযোগের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই এমন ঘটনাতেও সাংবাদিকদের জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সেই উপায় বার করতে হবে বিচারবিভাগকে।’’ উল্লেখ্য, ‘নিউজক্লিক’-র ৪৬ জন সাংবাদিকের বাড়িতে হয়েছে তল্লাশি। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করলে সমাজের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় তার প্রভাব পড়ে।’’ প্রধান বিচারপতিকেই বলা হয়েছে, ‘‘অপরাধের অভিযোগে ধরপাকড় চালানো হচ্ছে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী প্রসঙ্গে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে সরকারের আপত্তি থাকায়। শাস্তির খাঁড়া ঝুলিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে। এই বিষয়টিকেই আপনি বলেছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment