বন্যা বা খরায় আক্রান্ত দেশগুলির ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য হবে আন্তর্জাতিক তহবিল। মিশরের শারম আল শেখের বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনে এই ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ সব দেশ মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তর্জাতিক স্তরে এই সম্মতিকে গুরুত্বপূর্ণ বললেও জানিয়েছেন কেবল সমঝোতাপত্রই যথেষ্ট নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে হলে আরও অনেকদূর যাওয়া প্রয়োজন।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ আয়োজিত ২৭ তম বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন বা ‘কোপ: ২৭’ নির্ধারিত সময়ের থেকেও একদিন বেশি সময় নিয়েছে। বিবাদের নিষ্পত্তি হচ্ছিল না শেষ লগ্নেও। কাঁটা হয়ে ছিল এই পরিবেশের ক্ষতির জন্য গুনাগার দেওয়ার ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল। শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলির সঙ্গে বছরের পর বছর বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনের মঞ্চে এই তহবিল নিয়ে লড়াই চালিয়েছে ভারতের মতো উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলি। এবার গোড়া থেকেই ক্ষতিপূরণ তহবিল নিয়ে আলোচনাকে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচিতে রাখার জন্য চাপ দেয় এই দেশগুলিই।
জলবায়ু ক্ষতিপূরণের এই তহবিল গড়ার পক্ষে যুক্তি কী? উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলি বলে আসছে, ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বেড়েছে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা। তার জন্য দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাস, বায়ুমণ্ডলেই তাপকে আটকে রাখছে এই গ্যাসগুলি। দেখা যাচ্ছে শতাব্দী পার করে শিল্পোন্নত দেশগুলিই পরিবেশের ক্ষতির জন্য দায়ী। নতুন শতাব্ধীতে একের পর এক দেশ খরা বা বন্যার কবলে পড়ছে। ভিটে হারাচ্ছেন মানুষ। জলবায়ুর কারণে উদ্বাস্তু হচ্ছেন। বিপন্ন দেশগুলিকে অর্থ দেওয়ার আন্তর্জাতিক তহবিল গড়তে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করার ঐতিহাসিক দায় অনুযায়ী আর্থিক ভার নিতে হবে। শিল্পোন্নত দেশগুলিকেই দিতে হবে সিংহভাগ অর্থ। না হলে পরিবেশ সম্মেলন করার মানে হয় না।
রবিবার ‘কোপ: ২৭’ সভাপতি এবং মিশরের বিদেশ মন্ত্রী সামিদ শৌকরি জানান চূড়ান্ত সমঝোতা পত্র পেশ করা হয়েছে। সব দেশই সম্মত হয়েছে। এই সম্মেলন ঐতিহাসিক। ভারতও সমঝোতাকে ঐতিহাসিক বলেছে। ভারত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলির দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফল মিলল এই সম্মেলনে।
পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, কতটা ‘ঐতিহাসিক’ তা বোঝা যাবে আসছে বছর। তখন দায় নির্ধারণের কমিটি গড়া হবে। কোন দেশকে তহবিলে কত অর্থ দিতে হবে ঠিক করবে কমিটি। ফের নতুন করে বিবাদ হওয়া মোটেই অসম্ভব নয়।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিজেও সন্দিহান। তিনি বলেছেন, ‘‘সমঝোতায় সকলের একমত হওয়া নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ। তবে জলবায়ু সঙ্কট রোধ করার জন্য কেবল এটিই যথেষ্ট নয়। এখানে পরিবেশের ক্ষতি করলে আর্থিক দায় নেওয়ার কথা বলা রয়েছে। কিন্তু জলবায়ু সঙ্কটে সমুদ্রের জলতল বেড়ে কোন দ্বীপ মানচিত্র থেকে মুছে গেলে তা কিভাবে রোধ করা হবে। আফ্রিকার কোনও দেশ সম্পূর্ণ মরুভূমি হয়ে যাওয়ার মুখে থাকলেও বা তা কিভাবে ঠেকানো যাবে। এই দশকে বিশ্বকে জলবায়ু রক্ষায় আরও আগ্রাসী হওয়ার প্রয়োজন। সময় হাতে বেশি নেই।
Comments :0