MURSHIDABAD RSS MAMATA

মজুরি নিয়ে ক্ষোভের মাঝে তৎপর সঙ্ঘ

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

           শনিবার লালগোলায় বামফ যৌথ মিছিল। রয়েছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মুর্তজা হোসেন।

 

চন্দন দাস ও অনির্বাণ দে: লালগোলা

  সীমান্তের গ্রামাঞ্চল। ওপারে রাজসাহী। গঙ্গা আর পদ্মা এখানে কাছাকাছি। ফাজিলপুরের কোনও উঁচু জায়গা থেকে দুই নদীকেই বইতে দেখা যায়। কোথাও দুই বাংলার দুই নদীর মাঝে ফারাক তিন-সাড়ে কিমির। 
মফিজুল সেখের কথায়, ‘‘নদী থাকলে কী হবে? চাষ কমছে। আমন ছাড়া ধান হয় না। সবাই ভুট্টায় যাচ্ছে। ভুট্টায় কিছু পয়সা পাওয়া যায়। আর পাটের তো দাম নেই।’’ অনেক যুবক বাইরে যান কাজের খোঁজে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভিন রাজ্যে, এমন ঘটনাও আছে। বাইরে যায় কেন সবাই? প্রশ্ন শুনে বাহাদুরপুরের মফিজুল অবাক। বললেন,‘‘যাবে না? তো কী করবে? এখানে মজুরি কত? আর বাইরে, চেন্নাইয়ে, কেরলে? অনেক বেশি মজুরি। মজুরি না বাড়লে সবাই বাইরেই যাবে।’’ সরল অর্থনীতি যুবক মফিজুলের কথায়। 
মজুরি নেই লালগোলায়। মজুরি নেই জঙ্গীপুরের কোথাও। 
আমিনা বিবি বললেন, ‘‘বিড়ির অবস্থাই দেখুন। কত পাই আমরা? এক হাজার বাঁধলে ১১০-১২০ টাকা। কেউ কেউ একটু বেশি পায় শুনেছি। সপ্তাহের টার্গেট দিয়ে চলে যায়। আমরা বেঁধে রাখি। মজুরি বাড়াতে বললে বলে চাহিদা নেই। করলে করো। এই মজুরিতে চলে?’’  দু’বছর অন্তর বিড়ির মজুরি বৃদ্ধির কথা। সে সব কথার কথা হয়ে গেছে। সিপিআই(এম) নেতা সোমনাথ সিংহ রায়ের কথায়,  ‘‘চুক্তি অনুসারে ১৭২টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু কে দেবে? সব মালিকই তৃণমূল নেতা। গত পাঁচ বছর যিনি সাংসদ ছিলেন, সেই খলিলুর রহমানই তো বিড়ির মালিক।’’ 
তাহলে ভরসা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার? মরিয়ম বিবির কথায়, ‘‘বিড়ির মজুরি বাড়িয়ে দিক। বাড়ির লোকের অন্য জায়গার মতো মজুরি করে দিক, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার লাগবে না। মজুরি মারছে মালিক। আর টাকা দিচ্ছে সরকার। ভালো খেলা।’’ 
‘সরকারের টাকা কোনও দলের নয়, কোনও পরিবারের নয়—  সিপিআই(এম), কংগ্রেস প্রচারে বলে যাচ্ছে। কিন্তু মজুরির ফাঁকি আর সরকারের ভাতার সম্পর্ক বুঝতে শিখেছে গ্রাম।
তাই ‘মজুরি মারছে মালিক, আর টাকা দিচ্ছে সরকার’—  জঙ্গীপুরের মাটিতে উপযুক্ত লাইন। এখানে তৃণমূলের প্রার্থী বিড়ির বিরাট মালিক। খলিলুর রহমানের হলফনামা বলছে কলকাতায় তাঁর দুটি ফ্ল্যাট। রাজারহাটে একটি। জেলায় আরও আছে। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণই দশ কোটি টাকার উপর। স্থাবর সম্পত্তিও বিপুল। বিড়ির মজুরি কম রেখে তাঁর মুনাফা।
জঙ্গীপুর লোকসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় নদী ভাঙন এক তীব্র সমস্যা। ভাঙনে অনেক জমি গেছে। অনেকে ঘর ছাড়া হয়েছেন। ঠিকানা বদলে গেছে তাঁদের। সেই নদী ভাঙনের সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব কার এই নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করার প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল, বিজেপি। অথচ দুই দলই আগে বলেছে যে, তারা ভাঙন সমস্যা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
লালগোলায় গণসঙ্গীত শিল্পী কমরেড অজিত পান্ডের পারিবারিক বাসস্থান। ‘কারা মোর ঘর ভেঙেছে স্মরণ আছে...’র রচয়িতা অলক সান্যালও এখানকারই মানুষ। সেখানেই দশ মাস আগে, গত জুলাইয়ে তৃণমূল আর বিজেপিকে হারিয়েছেন গ্রামবাসীরা। লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা করে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। সভাপতি লক্ষ্মী সরকার কংগ্রেসের প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন। সহ সভাপতি জিয়াউর রহমান সিপিআই(এম)-র। জিয়াউর রহমানের কথায়, ‘‘তৃণমূলের চুরির বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসছিলেন। এখনও ফুঁসছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তিনি একশো দিনের কাজ করাচ্ছেন। আমার এলাকায় দেখছি না। তিনি বলেছেন, রেগার বকেয়া মজুরি দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে বকেয়া মজুরি পাননি বলে অনেক মানুষ অভিযোগ জানাচ্ছেন। বিজেপি তো এসবের বিরুদ্ধে বলে না। মানুষ তাই আমাদেরই সমর্থন করছেন।’’ 
এই গ্রীষ্মে জঙ্গীপুর লোকসভা আসনে গত বর্ষার লালগোলার ছবি। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের যৌথ মিছিল, যৌথ সভা চলছে। প্রার্থী কংগ্রেসের মুর্তজা হোসেন। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যা এলাকার অনেক। কিন্তু সিএএ নিয়ে সংসদে ভোটাভুটির সময় জঙ্গীপুরের সাংসদ পার্লামেন্টে ছিলেন না। অথচ মমতা ব্যানার্জি সব সভায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে মুখে খুব সমালোচনা করছেন। অথচ এবারও তিনি তাঁকেই প্রার্থী করেছেন যিনি সিএএ’র বিল পাশের সময় হাজির থাকেননি পার্লামেন্টে। বিজেপি নিয়ে তৃণমূলের এই দু-মুখো নীতির এবার মানুষ জবাব দেবেন।’’
আর বিজেপি? প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ আরএসএস-এর লোক। এখন বিজেপি’র জেলা সভাপতি। গত লোকসভা নির্বাচনে দেখা যায় বিজেপি’র ভোট কিছুটা বেড়ে গেছে। সেবার এক সংখ্যালঘু মহিলাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এবার সঙ্ঘের লোক। জঙ্গীপুরের কোথাও বিজেপি’র কোনও প্রবল প্রচার দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গত বেশ কিছু বছর জুড়ে, মূলত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে ‘কাজ’ চালিয়েছে তারা। তবে ধনঞ্জয় ঘোষের দাবি, ‘‘উন্নয়ন আমাদের প্রধান বিষয়। দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া টাকায় কাজ হয় না। লুট হয়। আর মোদীজী বলেইছেন, সব দুর্নীতিগ্রস্তর বিচার হবে। না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।’’
কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তো শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও ছিল। গত দশ বছরে কোনও দুর্নীতির তদন্তেরই তো বিচার হয়নি। সেখানে সবার শাস্তি হলো কোথায়? প্রশ্ন শুনে ধনঞ্জয় বললেন, ‘‘দাদা, আমার কাছে অনেক লোক এসেছে। অনেক কাজ পড়ে আছে। পরে আসলে আবার কথা হবে। ধন্যবাদ।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment