তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ থেকে আগের তিন মাস ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলির মঞ্চ ইন্ডিয়ার ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি। ইন্ডিয়া নিয়ে উৎসাহ দূরের কথা ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বিরোধী নেতাদের একাধিক সভায় অংশ নেননি, কোনও ভূমিকাও পালন করেননি। ইন্ডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে সমালোচনার ঝাঁজ বাড়িয়েছিলেন। এরাজ্যে ইন্ডিয়াকে বিজেন্ডিয়া বলে বিদ্রূপ করেছিলেন। ভোট পর্ব শুরুর আগে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার পর লাগাতার অসহযোগিতা করেছে মমতার সরকার। পদে পদে বাধা দিতেও ছাড়েনি। কংগ্রেসকে উপহাস করে বলেছিলেন ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪০ আসনেও জিততে পারবে না। ইন্ডিয়া মঞ্চ পোক্ত হয়ে ওঠার পর নরেন্দ্র মোদী যখন ধারাবাহিক ইন্ডিয়াকে আক্রমণ করছিলেন ইন্ডি জোট বলে সেই সময় মমতা ব্যানার্জিও ইন্ডিয়া সম্পর্কে অনুরূপ অবস্থান নিচ্ছিলেন। একেবারে গোড়র দিকে ইন্ডিয়া মঞ্চ তৈরি হবার সময় থাকলেও পরে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন। আসন নিয়ে বোঝাপড়ার সময়ই তিনি ইন্ডিয়া থেকে সরে গিয়ে জানিয়ে দেন পশ্চিমবঙ্গে আর কাউকে দরকার নেই তৃণমূল একাই যথেষ্ট। রাজ্যে সব আসনে তৃণমূলই লড়বে।
তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণের পর থেকেই তিনি ভোল পালটাতে শুরু করেন। আসলে তখন থেকেই দেশময় চর্চা শুরু হয়ে যায় মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরছে না। হাওয়া বুঝে তৃণমূল একলা চলা, পরোক্ষে বিজেপি ঘেঁষা অবস্থান থেকে সরে ইন্ডিয়ার দিকে পা বাড়াতে থাকেন। তিনি নিজেই বলেছেন ২০১৪ সালে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে সেটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। ২০১৯ সালেও বিজেপি ক্ষমতায় আসার বিষয়টা তাঁর জানা ছিল। এবারও গোড়ার দিকে তিনি নিশ্চিত ছিলেন মোদীই তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাই ইন্ডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে বিজেপি-কে বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু হাওয়া যখন ঘুরতে শুরু করে বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার আশা যখন মিলিয়ে যেতে শুরু করে তখন মমতা ব্যা নার্জিও ইন্ডিয়ার গুণ গাইতে শুরু করে দিয়েছেন। তৃতীয় দফার ভোটের পর প্রায় প্রতি সভাতেই নিয়ম করে এনডিও’র হারের এবং ইন্ডিয়ার জেতার কথা বলছেন। সর্বশেষ এমনও বলে দিলেন ইন্ডিয়া ক্ষমতায় এলে তিনি বাইরে থেকে সমর্থন করবেন।
তৃণমূল কোনোদিনই আদর্শবাদী, নীতিনিষ্ঠ দল নয়। বরাবরই তাদের সুবিধাবাদী অবস্থান। ক্ষমতার লোভ ও ধান্দার রাজনীতির স্বার্থে তারা যে কোনও দলের সঙ্গে ঘর করতে পারে। জন্ম থেকে বিজেপি-’ সঙ্গেই তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা। আরএসএস-বিজেপি’র স্বার্থে তাদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করে তৃণমূল। মূল বোঝাপড়া রাজ্যে ক্ষমতায় থাকতে তাদের বিজেপি সাহায্য করবে আর কেন্দ্রে ও অন্যরাজ্যে বিজেপি-কে সাহায্য করবে তৃণমূল। এই বোঝাপড়া অনুযায়ী গোড়ায়, ত্রিপুরায় বিজেপি-কে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি বিরোধীদের জোটকে ভেঙে তছনছ করার চেষ্টা করেছে। বহু ক্ষেত্রে অকারণে প্রার্থী দিয়ে বিরোধী ভোট কেটে বিজেপি-কে জিতিয়েছে। পদে পদে বিরোধী ঐক্য বানচাল করার কাজে বিজেপি’র এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছে। এবারও ইন্ডিয়া জোটে ঢুকে বিজেপি’র হয়ে দালালি করাই তৃণমূলের লক্ষ্য। যা করছে সেই লক্ষ্যকেই সামনে রেখে। প্রথমে ইন্ডিয়ায় ছিল, মাঝে দূরে সরে গেছে, এখন আবার ঝোঁপ বুঝে কোপ মারতে ঢুকতে চাইছে। সাধু সাবধান।
'INDIA' MAMATA
সাধু সাবধান
×
Comments :0