Malda

কাঁধে বোমা, মালদহের স্কুলে ঢুকে পড়ল বন্দুকবাজ

রাজ্য

স্কুলে বোমা কাঁধে বন্দুকবাজ। টেলিভিশনের পর্দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বুধবার রাজ্যের একটি স্কুলে বুধবার এই দৃশ্য দেখা গেল। 
ধরা পড়ে যাওয়া বন্দুকবাজের নাম দেবকুমার বল্লভ। সে পুরাতন মালদহর মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী রেবা বল্লভ এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা। বিজেপি’র টিকিটে জিতলেও পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে প্রায় এক বছর রেবা বল্লভ ও তাঁর ছেলে রুদ্র বল্লভ নিখোঁজ। ধৃত দেবকুমার বল্লভ স্ত্রী ও ছেলের খোঁজে লাগাতার থানায় ঘুরতে ঘুরতে নাকি নাজেহাল হয়ে গেছে। তাঁদের সন্ধান পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বারংবার দেখা করেছে দেবকুমার বল্লভ। কোনও ফল না হওয়ায় বিষয়টিকে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নজরে আনতে সোশাল মিডিয়ায় খোলা পিস্তল দেখিয়ে ভিডিও ভাইরাল করেছে দেবকুমার বল্লভ। আর সে ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর ফের গুলিভর্তি পিস্তল হাতে এদিন সে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের খুনের হুমকি দিয়ে বসল। মনে করা হচ্ছে, স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজে পেতে প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াতেই সে মরিয়া।
শাসক দলের দাসত্ব করতে গিয়ে পুলিশ যে এখন কার্যত চূড়ান্ত অপেশাদার হয়ে পড়েছে, তা এদিনের ঘটনায় আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে। মানুষের আস্থা হারিয়েছে পুলিশ। এদিন কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই এদিন মালদহর ডিএসপি দৌড়ে এসে ওই বন্দুকধারীর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছেন। স্কুল চলাকালীন কী করে একজন আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ভিতরে ঢুকলেন তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন উঠছে। এতবড় ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদবের একটাই উত্তর, ‘আমরা সেই বন্দুকবাজকে গ্রেপ্তার করেছি।’
প্রশ্ন উঠেছে বেআইনি অস্ত্র, বোমা দেবকুমার কোথায় পেলেন? মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ছিল, বেআইনি সব অস্ত্র উদ্ধার করবে তাঁর সরকার!  
বুধবার দুপুরে পুরাতন মালদহর মুচিয়া অঞ্চলের চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে ব্যাগে ভর্তি বোমা আর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ে ওই বন্দুকবাজ। স্কুলের গেট পেরিয়ে বাধাহীনভাবে সে সপ্তম শ্রেণির একটি ক্লাসে ঢুকে পড়ে। তখন সেখানে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। সপ্তম শ্রেণিতে যখন বন্দুকবাজ ঢুকেছিল তখন ক্লাসে বাংলা পড়াচ্ছিলেন শিক্ষিকা প্রতিভা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘ক্লাসে ঢোকার সময়ই আমি ওই ব্যক্তিকে দেখি। তাঁর হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল, তিনি অভিভাবক। আমি তাঁকে স্কুলে আসার কারণ জিজ্ঞাসাও করি। কিন্তু তিনি উত্তর দেননি। আমি সবে মাত্র ক্লাসে বাচ্চাদের লিখতে দিয়েছি। ওই ব্যক্তি পিস্তল হাতে ক্লাসে ঢুকে পড়েন। আমার দিকে পিস্তল তাক করে চুপ করে বসে থাকার নির্দেশ দেন। ভয়ে তখন বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করেছে। আমিও হতভম্ব। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে ওই ব্যক্তি বলে চলেছেন, তাঁর ছেলেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। পুলিশ তাঁর ছেলেকে উদ্ধার করে দিচ্ছে না। তাই তিনি গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য পুলিশ ওই ব্যক্তিকে কবজা করে। আমরা সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।’
এই ঘটনায় পড়ুয়ারা মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। এর ওপর ওই বন্দুকবাজ শিক্ষিকার টেবিলের ওপর সাজানো শুরু করে পেট্রোল বোমা। এই ঘটনার খবর শুধু স্কুলেই নয়, গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিভাবকদের সঙ্গে এলাকার সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন স্কুলে। আসে মালদহ থানার পুলিশ। চলে আসেন পুলিশ সুপার সহ জেলা পুলিশের কর্তারাও। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে ওই বন্দুকবাজকে ধরেন ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) আজহারউদ্দিন খান। পরে পুলিশ বন্দুকবাজকে গ্রেপ্তার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর সঙ্গের থাকা আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ব্যাগ। পুলিশের সামনে অবশ্য এদিন ওই বন্দুকবাজকে মারধর শুরু করে স্থানীয় মানুষজন।  
এই ঘটনায় স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে গেল। 
স্কুলের শিক্ষক দেবাশিস শীল জানান, ‘প্রায় এক বছর আগে দেবকুমার বল্লভের স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে রুদ্র নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপর তাদের কোনও খোঁজ নেই। স্ত্রী-সন্তানকে খুঁজে পেতে দেবকুমার বল্লভ একাধিকবার পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন। কাজ হয়নি। আজ তিনি স্কুলের মেইন গেটের পাশে ছোট দরজা দিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়েন। আমি তাঁকে দেখতে পাই। তাঁর স্কুলে আসার কারণ জানতেও চাই। কিন্তু তখনই তিনি পিস্তল বের করে সপ্তম শ্রেণির কক্ষে ঢুকে পড়েন। তখন ওই কক্ষে প্রায় ৮০ জন পড়ুয়া ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম, পিস্তলটি খেলনা। পরে আমাদের ভুল ভাঙে। তাঁর ব্যাগে কয়েকটি পেট্রোল বোমাও ছিল। সেগুলি পরে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। তবে ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা আতঙ্কে রয়েছি। আজ যে কোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। ওই ব্যক্তি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও তিনি যে পুরোপুরি মস্তিষ্ক বিকৃত, তা বলা যাবে না।’
এসএফআই-এর জেলা সভাপতি কৌশিক মৈত্র ও সম্পাদক চিরঞ্জিত মণ্ডল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই ঘটনা জেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের ঘটনা আগে কাগজে পড়লেও আমাদের রাজ্যে কখনো দেখিনি। শুধু এই ঘটনা নয়, গত ১৮মার্চ গাজোলের একটি স্কুলে ঢুকে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে একদল দুষ্কৃতী। অন্যদিকে ২৫ এপ্রিল সকালে ওল্ড মালদহ ব্লকের এক নবম শ্রেণির ছাত্রীর মরদেহ পাওয়া যায় এলাকা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কালিয়াচক ৩ ব্লকের আকন্দবাড়িয়া অঞ্চলের এক চাষের জমি থেকে। তাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ।

Comments :0

Login to leave a comment