Doctors Strike

দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু গর্জে উঠল দেশ

জাতীয়

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সোমবার দিল্লির প্রায় সব ক’টি সরকারি হাসপাতাল সহ এইমস্, নিমহ্যান্স সহ আরও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে জরুরি পরিষেবা বাদে সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় অংশ। রবিবারেই আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের ডাক দেয় ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস্ (ফোর্ডা)। এই ডাকে সাড়া দিয়েই দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের  ওপিডি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রাখা হয়। আপাৎকালীন বিভাগ খোলা রাখলেও বন্ধ রাখা হয় ওয়ার্ড ডিউটি। এই ঘটনার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে সোমবার ও মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয় এসএফআই। পাশাপাশি, মঙ্গলবার দিল্লির বঙ্গভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে এসএফআই, মহিলা সমিতি ও ডিওয়াইএফআই। 
ফোর্ডা’র ডাকে সাড়া দিয়েই সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দিল্লির এইমস্’এ পূর্ণাঙ্গ ধর্মঘট পালন করেছে ওই হাসপাতলের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ)। এইমস দিল্লিতে অবস্থিত আরডিএ’র সাধারণ সম্পাদক রঘুনন্দন দীক্ষিত বলেছেন,‘‘নির্যাতিতার পরিবারের জন্য আমরা ক্ষতিপূরণের দাবি করছি। যেখানে মানুষ জীবন বাঁচাতে যান, সেখানেও যে এমন বীভৎস ঘটনা ঘটতে পারে তা আমাদের ভাবনারও বাইরে। যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজের সেবা করতে চান, সরকারকে তাদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের মধ্যেই যাতে রোগীদের কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হতে হয় তার জন্য আগাম পরিকল্পনার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন এইমস কর্তৃপক্ষ। এই নির্দেশিকায় হাসপাতালের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে একটি অ্যাকশান প্ল্যান জমা দিতে বলা হয়। পাশাপাশি কোনোরকম জরুরি পরিষেবা যাতে বন্ধ না রাখা হয় তার জন্য পরিষ্কার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে। এছাড়াও সীমিতভাবে ওপিডি পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। একান্তই জরুরি প্রয়োজনে অপারেশন হবে এমন রোগীকেও ফেরানো হবে না বলেই জানানো হয়। এছাড়াও আইসিইউ পরিষেবা আগের মতোই বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এইমস ছাড়াও এদিন সকাল ৯টা থেকেই ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালিত হয়েছে দিল্লির মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ, আরএমএল হাসপাতাল, লেডি হার্ডিং মেডিক্যাল কলেজ, ভিএনএমসি, সফদর জঙ হাসপাতাল, দীন দয়াল উপাধ্যায় হাসপাতাল, গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান বিহেভিওর, অটল বিহারী বাজপেয়ী ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সাইন্সেস অ্যান্ড অ্যালাইড সাইন্সেস, ড. বাবাসাহেব আম্বেদকার মেডিক্যাল কলেজ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টিবি অ্যান্ড রেস্পিরেটরি ডিসিসে। এদিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব অপূর্বা চন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে, এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন আরডিএ’র নেতৃবৃন্দ। দিল্লির পাশপাশি, বেঙ্গালুরুর নিমহ্যান্স হাসপাতালেও বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করা সহ রক্তদান শিবির সংগঠিত করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের বড় অংশ। এছাড়াও রাজস্থানের জয়পুরের এসএমএস মেডিক্যাল কলেজ ও উত্তর প্রদেশের একাধিক হাসপাতালে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদিন হায়দরাবাদের গান্ধী হাসপাতালেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের বড় অংশ। কেরালার সমস্ত সরকারি হাসপাতালে এদিন ব্যাপক বিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।   
এই ঘটনায় সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অপরাধীকে দ্রুত আইনি হেপাজতে না আনা হলে শুধু আউটডোর বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রেখেই ক্ষান্ত থাকবেন না চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছেন দিল্লির বর্ধমান মহাবীর মেডিক্যাল কলেজ ও সফদর জঙ হাসপাতালের আন্দোলনরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে এদিন ফোর্ডা’র সভাপতি অবিরল মাথুর বলেছেন,‘‘এদেশে চিকিৎসকদের উপর এতদিন যাবৎ যত হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে এই ঘটনা সব থেকে বীভৎস। এর থেকে খারাপ কিছু হয়েছে বলে আমাদের মনে পড়ে না।’’ ফোর্ডা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সর্বেশ পান্ডে এদিন বলেছেন,‘‘কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সচিবকে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের দাবিগুলি জানিয়েছি। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালকে সরাতে হবে, এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে, একটি ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টের অধীনে এই ঘটনায় মামলা দায়ের করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের পাশ করা আইন প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি তৈরি করতে হবে।’’ 
প্রায় একই সুরে এদিন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জুনিয়র ডক্টরস নেটওয়ার্ক’র জাতীয় পরিষদের সদস্য ডাঃ ধ্রুব চৌহান বলেছেন, ‘‘অন্য সময় চিকিৎসকদের উপর এমন একাধিক আক্রমণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এবারে যে ঘটনা সামনে এসেছে তা সহ্যের বাইরে। নির্যাতিতার জন্য ন্যায় সুনিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে। ফোর্ডা ইতিমধ্যে সমস্ত সরকারি হাসপাতালের জরুরি পরিষেবা বাদে অন্য সমস্ত পরিষেবা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত স্তরেও, এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিতার প্রতি সংহতিতে দেশের সমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আমরা কালো ফিতে পরতে অনুরোধ করছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment