Argentina Beat France

মেসির হাতেই বিশ্বকাপ

খেলা

Argentina Beat France

প্রায় চার দশকের স্বপ্ন। আর্জেন্টিনার মানুষের। লিওনেল মেসির দু’দশকের স্বপ্ন। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে শ্বাসরোধী ম্যাচে অবশেষে সেই স্বপ্নের উড়ান। বিশ্বকাপে চুম্বন করলেন মেসি। দেশকে তাঁর যা দেওয়ার ছিলো, দিয়ে দিলেন। এক রূপকথার অনন্য সমাপ্তি।

শক্তির বিচারে তুল্যমূল্য ছিলো ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা। টক্কর সমানে সমানে হবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার অবাধ দাপটে। ফাইনালের প্রথমার্ধে এরকম একপেশে খেলা দেখবো ভাবতেই পারিনি। ফ্রান্সকে পুরোপুরি নাকানিচোবানি খাইয়ে ছেড়েছে আর্জেন্টিনা। যার ফলাফল লিওনেল মেসির পেনাল্টি ও দি মারিয়ার গোলে ২-০ এগিয়ে যায় লা অ্যালবেসেলেস্তেরা।


শুরু থেকেই আর্জেন্টিনা যেভাবে চেপে ধরলো, নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে ফ্রান্সের বক্সে বারবার ঢুকে পড়তে লাগল, তাতে মনোবলে চিড় ধরে ভারানেদের। আর্জেন্টিনা সেন্ট্রাল ইনসাইড দিয়ে আক্রমণ করার পরিবর্তে, দি মারিয়া যেহেতু ফাইনালে শুরু থেকে খেলছিল, তাই ডাউন দ্য মিডলে যেই বল ধরছিল, সেই ফুটবলারই বামপ্রান্তে বল ঠেলে দিচ্ছিল। যাতে কৌন্ডেকে পরাস্ত করে দি মারিয়া বক্সে ঢুকে ফাইনাল পাস বাড়াতে পারেন মেসি বা আলভারেজের উদ্দেশ্যে। ঠিক এইভাবেই পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২২ মিনিটে। দি মারিয়া ঝটকা মেরে ঢুকে পড়েন বক্সে। তাঁকে পিছনে দিয়ে বাধা দেন ডেম্বেলে। নির্ঘাৎ পেনাল্টি।


ভিএআরও পেনাল্টি সিদ্ধান্ত দেয়। মেসি হুগো লরিসকে উল্টো দিকে ফেলে আর্জেন্টিনাকে ১-০ এগিয়ে দেন। মেসি শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সেটা বোঝা গিয়েছিলেন ম্যাচের এক মিনিটে। কী সুন্দর একটি বল বানিয়ে দিয়েছিলেন, যেটা থেকে গোল হয়নি যদিও।



ম্যাচের ৩৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম একপ্রকার। গোলটা অনেকটা ব্রাজিলের খেলার শৈলীর সঙ্গে মেলে। ঠিক যে সময়টায় সক্রেটিস-জিকোরা খেলতেন, তাঁরা এমন অনেক গোল করেছেন। গোলটা কিভাবে হল? গোলের পথটা মসৃণ করেন মেসিই। তিনি চকিতে টাচে বলটা দেন আলভারেজকে। তাতেই ফ্রান্সের ফুটবলাররা কেটে যায়। আলভারেজ বল বাড়িয়ে দেন ম্যাক অ্যালিস্টারকে। সামনে পুরোপুরি ফাঁকা জমি। ম্যাক অ্যালিস্টার কিছুটা বল নিয়ে এগিয়ে, ডি মারিয়াকে বল দেন। বাঁ পায়ের প্লেসমেন্টে বল জালে জড়িয়ে দেন। ২-০ এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পুরো ৪০ মিনিট আর্জেন্টিনা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফ্রান্স কার্যত খেলতে পারেননি। শেষ পাঁচ মিনিটে কিছুটা চেষ্টা করে ম্যাচে ফেরার। কিন্তু ফ্রান্সকে প্রথম ৪৫ মিনিটে টেকনিক্যালি ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা।


প্রথমার্ধে খেলা দেখার পর মনে হয়েছিল ম্যাচটা একপেশে ভাবে শেষ হবে। আর্জেন্টিনা ব্যবধান বাড়াবে। একই ছন্দেই শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। চার-পাঁচটা টাচে আক্রমণে উঠে যাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল কয়েকটা। তবে সেগুলি পরিণত হয়নি গোলে। গ্রিজম্যান ছন্দে না থাকায় ফ্রান্স খেলতে পারছিল না। এমবাপেরও সাপোর্ট পেতে অসুবিধে হচ্ছিল। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দেশঁ। ফ্রান্স কয়েকটা পরিবর্তন আনেন দলে। প্রথমার্ধে মার্কাস থুরাম ও মুয়ানিকে নামানোর পর দ্বিতীয়ার্ধে দেশঁ একইসঙ্গে দু’টি পরিবর্তন করেন। কামাভিঙ্গার সঙ্গে নামিয়ে দেন কিংসলে কোম্যানকে।



এই দু’টি পরিবর্তনে খেলা ঘোরে। আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি ডি মারিয়াকে তুলতেই ফ্রান্স ঘুরে দাঁড়ায়। স্বমহিমায় ফেরেন এমবাপে। মুয়ানিকে আটকাতে গিয়ে বক্সে ফাউল করেন ওটামেন্ডি। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পটকিক থেকে জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন এমবাপে। এরপর কোম্যান মেসির কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে ডানদিক বরাবর বল নিয়ে উঠে থুরামকে দেন। থুরামের কাছে এমবাপে পেতেই চলতি বলেই শট নেন। বল জালে। দু’টি মাটি ঘেঁষা শটে গোল করলেন এমবাপে। বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি হতে চলেছেন মেসির উত্তরসুরি। শেষ দিকে মেসির একটি দুর্ধর্ষ শট বাঁচিয়ে দেন লরিস।  



ম্যাচের প্রথম অতিরিক্ত সময়ে আর কোনও গোল হয়নি। দ্বিতীয় অতিরিক্ত সময়ে ১০৮ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে যায় ফের আর্জেন্টিনা। মেসি সুন্দর ফলো আপে গোলটি দেয়। এই গোলই জয়সূচক হবে বলে যখন ভাবা হচ্ছে তখনই ফের মোচড়। মন্টিয়েলের হাতে বল লাগায় ফ্রান্স পেনাল্টি পায়। এমবাপে হ্যাটট্রিক করে ফ্রান্সকে সমতা ফেরান। ফাইনালে হ্যাটট্রিক বিরল। তারপরেও জয় পেয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। যদি না এমি মার্টিনেজ দুর্ধর্ষ সেভ না করতেন। মুয়ানির শট এগিয়ে এসে পা লম্বা করে রুখে দেন।


এরপর টাইব্রেকারে যায় ম্যাচ। টাইব্রেকারে মন্টিয়েল গোল করতেই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা ত্রাতা হলেন মেসি নন, এমি মার্টিনেজ। ফ্রান্সের প্রথম শটই তিনি বাঁচিয়ে দেন। কিংসলে কোম্যানের শট বাঁচিয়ে দেন। আর্জেন্টিনার সব শটই গোলে যায়। ঠিক যেভাবে এক মাসের বিশ্বকাপ শেষ হবার কথা ছিল, শিহরণ জাগিয়েই মুকুট মাথায় জয়ী হলো মেসির দেশ। 

Comments :0

Login to leave a comment