Modi OBC

মহিলা বিল: ওবিসি সংরক্ষণের দাবিতে আতঙ্কে মোদী

জাতীয়

মহিলা সংরক্ষণ বিলে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের বিরোধীদের দাবি এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে বারে বারে নতুন সংসদ ভবনে ঢুকতে না দেওয়ার বিরোধীদের অভিযোগে প্রবল অস্বস্তিতে মোদী সরকার। সোমবার মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থানে দলীয় দুই সভায় প্রধানমন্ত্রীর মোদীর বক্তব্যে সেই আতঙ্কই ফুটে উঠল। মোদী এদিন ভোপালে দলীয় কর্মীদের ‘কার্যকর্তা মহাকুম্ভ’ এবং জয়পুরে জনসভা ‘পরিবর্তন সংকল্প মহাসভা’য় বক্তৃতা করেন। 

রাজস্থানের সমাবেশে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, গত পাঁচ বছরে অশোক গেহলট সরকার পুরো সময়টাই নষ্ট করেছেন। পাঁচ বছরের কংগ্রেসের সরকারকে শূন্য দেওয়া যায়। তাহলে ভোপালে দলীয় কর্মীদের সভায় নিজেদের সরকারকে কত নম্বর দিলেন প্রধানমন্ত্রী? ভোপালে ৫০ মিনিট বক্তৃতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানের রাজ্য সরকার পরিচালনায় নম্বর দেওয়া তো দূরের কথা, একবারও নাম করেননি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনসঙ্ঘের সময় থেকে আজও পর্যন্ত এখানে তারা শক্তিশালী। ২০ বছর ধরে সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। মধ্য প্রদেশ বিজেপি’কে অনেক দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও প্রায় ২০ বছরের শিবরাজ সিং চৌহানের সরকারের একটা প্রকল্প সম্পর্কে বলতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গ টেনে এনেই এদিন কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা তীক্ষ্ণ আক্রমণ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শিবরাজের নাম আর কাজ দুটোই এড়িয়ে গেছেন। মধ্য প্রদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ঝুট আর শিবরাজের লুট, দুটোরই জবাব চাইছেন। 

বিজেপি মধ্য প্রদেশে ‘জন আশীর্বাদ যাত্রা’ কর্মসূচি চালাচ্ছিল প্রায় এক মাস ধরে। ২৩০টি বিধানসভার মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করে এদিন সেই কর্মসূচির শেষে দলের কার্যকর্তা অর্থাৎ কর্মী সম্মেলনর ডাক দিয়েছিল। তার বাহারি নাম ছিল ‘কার্যকর্তা মহাকুম্ভ’। প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রধান বক্তা। বিজেপি ঘোষণা করেছিল ১০ লক্ষ লোক আনবে। ভোপালের জম্বুরি ময়দানে ডাকা হয় সেই মহাকুম্ভ। বিজেপি সরকার লোকজন আনার জন্য গোটা সরকারি ব্যবস্থাকে লাগিয়ে দেয়। সরকারি বাস এবং অন্যান্য পরিবহণ দিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও লাখ খানেক লোকও হয়নি। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো মহিলাদের উপস্থিতি একেবারেই ছিল না। 

সেই সভায় ভাষণ দিতে উঠে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, এটা জনস্রোত, নতুন শক্তিতে ভরপুর বিজেপি কর্মীরা। এদিনের সভায় যদিও সেই শক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি। বারে বারে প্রধানমন্ত্রীকে চেষ্টা করতে দেখা গেছে জনতাকে উত্তেজিত করে স্লোগান দেওয়ানোর জন্য। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ বক্তৃতা শুনে মনে হবে যেন রাজ্যে বিজেপি’র নয়, সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস। ভাষণ শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করা শুরু করেন মোদী। তারপর প্রায় গোটা বক্তৃতাটাই কংগ্রেসকেই আক্রমণ করে গেছেন। নিজেদের সরকারের সাফল্য, কৃতিত্ব কিছুই বলেননি। শুধু নিজের পিঠ নিজেই চাপড়েছেন অভ্যাসমতো। প্রায় ২০ বছর সরকার চালিয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা যে প্রবল বিলক্ষণ জানেন মোদী। তাই এদিন বলেন, যাদের এখন ২০ বছর বয়স, প্রথম ভোটার, তারা তো শুধু মধ্য প্রদেশে বিজেপি সরকারই দেখেছে। এরপরেই তাঁর দাবি, তারা সৌভাগ্যবান যে কংগ্রেসের সরকার দেখেনি। কংগ্রেসের সরকার কুনীতি, দুর্নীতির সরকার ছিল। মানুষের জীবন বরবাদ করে দিয়েছিল। উল্লেখ্য, মধ্য প্রদেশে শিবরাজ সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্য অভিযোগ দুর্নীতি- লুট। সেটাকেই এদিন এভাবে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। রাজ্যের সরকারের ব্যর্থতা, অপদার্থতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থেকে নজর সরিয়ে বারে বারে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করেছেন। নতুন স্লোগান হাজির করার চেষ্টা করেছেন, ‘আপকি মোদী হ্যাঁয় তো গ্যারান্টি কি পুরি গ্যারান্টি হ্যাঁয়’। কী সেই গ্যারান্টি? মোদীর দাবি সমাজ থেকে অভাব দূর করে দিয়েছেন। সাড়ে ১৩ কোটি মানুষকে তাঁর সরকারের প্রথম পাঁচ বছরেই নাকি গরিবী থেকে বের করে এনেছেন। 

কিন্তু তাতেও যেমন প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন, সেটাই বা পেলেন কোথায়? বক্তৃতার মাঝেই কার্যকর্তারা উঠে যেতে থাকলে অননুকরণীয় ভঙ্গিমায় বলেন, আপনাদের উৎসাহ আমার মাথায়। আমাকে এত ভালোবাসার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের ভালোবাসাই আমার শক্তি। আর ক্রমাগত দুই হাতের ইশারায় বসে যেতে বলছেন! 

মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থানের দুই সমাবেশেই মোদীর বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে ছিল মহিলা সংরক্ষণ বিল। সেই বিল নিয়ে নিজের ঢাক পিটিয়েছেন, কিন্তু তার থেকেও বলেছেন কংগ্রেস এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে। ভোপালের সভায় বলেন, এখানে এত সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছেন আমার বোনেরা মায়েরা। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন মহিলাই উপস্থিত ছিলেন। এমনকি টিভি ক্যামেরাও জনা পঁচিশ-ত্রিশের বেশি দেখাতে পারছিলেন না। মহিলা বিলের প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন। যা কবে চালু হতে পারে তার কোনও নিশ্চয়তাই নেই। কিন্তু তার থেকেও বড় অভিযোগ এনে বলেছেন, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা বাধ্য হয়ে সমর্থন করেছে। এরা সুযোগ পেলেই অর্থাৎ সরকারে এলেই বাতিল করে দেবে। তাই বিজেপিকেই আনতে হবে, এই ছিল সার কথা। কিন্তু তার বক্তৃতায় স্পষ্ট হয়ে যায় আতঙ্ক। তিনি বলেন, মা-বোনেদের বিভাজিত করার চেষ্টা হবে। আপনারা ভ্রমিত হবেন না। একজোট থাকবেন। উল্লেখ্য, বিরোধীরা মহিলা সংরক্ষণ বিলে জোরের সঙ্গে ওবিসি সংরক্ষণের যে দাবি তুলেছেন তা নিয়ে মোদী এবং বিজেপি’র প্রবল অস্বস্তি এদিন আরও একবার প্রকাশ হয়ে গেছে। একইভাবে দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কেও বেকায়দায় পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমত আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের দিন ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে নতুন ভবনের প্রথম অধিবেশনেও তাঁকে ডাকা হয়নি। বিরোধীরা এই নিয়ে সরব হওয়ায় এদিন মোদী বলেছেন, বিরোধীরা আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি হতে দিতে বাধা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মত, এই সব কথায় সরকারের আতঙ্কই প্রকাশ পেয়েছে। 

রাজস্থানের কংগ্রেস সরকারকে এদিন উগ্রপন্থী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে সদয়, তুষ্টিকরণ, দুর্নীতিগ্রস্ত ইত্যাদি বলেছেন। দুই সভাতেই সনাতন ধর্ম প্রসঙ্গ টেনেছেন। কিন্তু মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস কর্মীদের সম্পর্কে যা বলেছেন, তাতে সেখানে দলের দুরবস্থা আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা এখন চুপ করে বসে গেছেন। কংগ্রেস এখন স্লোগান থেকে নীতি আমদানি করছে। কংগ্রেস কর্মীদের আর অধিকার নেই। কংগ্রেসের হয়ে এই কাজ করছেন কয়েকজন আরবান নকশাল। নিজের দলের কর্মীসভায় এসে কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মী পর্যন্ত যখন প্রধানমন্ত্রীকে নামতে হচ্ছে, তখন পরিস্থিতি যে খুবই গুরুতর তা বোঝা যাচ্ছে— মত বিশ্লেষকদের।

Comments :0

Login to leave a comment