Uttarkashi tunnel collapse

আজ নয়, কালও নয়... ওদের ‘ফিরতে’ বড়দিন!

জাতীয়

 প্রধানমন্ত্রী তখন হাওয়ায় ভাসছেন, উড়ছেন তেজসে, হাত নাড়ছেন। দিব্যি খোশমেজাজে সাজগোজ করে, চোখে সানগ্লাস-হাতে হেলমেট নিয়ে তাঁর ‘স্মার্টলুক’ শনিবার ‘ট্রেন্ডিং’। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ভক্তদের হাতের জাদুতে। কিন্তু কোনও জাদুবলে, কোনও বিশেষ ক্ষমতা উত্তরকাশীর সিলকিয়ারা টানেলে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিকের একজনকেও বের করে আনতে পারেনি ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও। উলটে ঘণ্টা-মিনিট ছাড়িয়ে, গত ক’দিনের আপডেটের বন্যা স্তিমিত হয়ে শেষে এদিন জানা গেল, অন্তত কয়েকসপ্তাহ লাগবে শ্রমিকদের বের করে আনতে। 
আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স বলেছেন, ‘‘ক্রিসমাসের আগে নিশ্চয়ই শ্রমিকদের তাঁদের পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব।’’ অর্থাৎ এখনও ঠিক এক মাস বা চার সপ্তাহ। ডিক্স আগে থেকেই এই প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁর কথায় পাত্তা না দিয়ে ‘আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা, আর মাত্র কয়েক মিটার’— এসব প্রচার চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের জীবন বাজি রেখে মোদী ‘গর্বের অনুভূতি’ চেখে দেখতে গেলেন। একবারও উত্তরাখণ্ড আসার সময় হয়নি তাঁর। শ্রমিকদের প্রাণ যখন কার্যত সুতোয় ঝুলছে, তখন প্রধানমন্ত্রী নিজের ফটোশ্যুটের ছবি পোস্ট করছেন। লিখছেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে। দেশের ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি আরও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। গর্বে তাঁর বুক আরও ফুলে উঠেছে এদিন। শ্রমিকদের বেলায় শুধু একটা ফোনেই দায় সারছেন তিনি।   
শ্রমিকদের এবং তাঁদের পরিজনদের সেই রবিবার থেকে প্রতিদিনই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এমন ভাবে প্রচার চালানো হয়েছে, যেন এই বুঝি বেরিয়ে এলেন শ্রমিকরা। প্রথম দিকে তাঁদের বাড়ির লোকজন নিজেদের দুশ্চিন্তা-ক্ষোভ সংবাদমাধ্যমের সামনে উগরে দেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেই সংবাদ উঠে আসে। তারপরই টানেলের উদ্ধারকাজ নিয়ে কী কী খবর করা যাবে না যাবে তা নিয়ে নির্দেশিকা পর্যন্ত জারি করা হয়, যাতে ‘গ্রাউন্ড জিরো’র প্রকৃত খবর সামনে না আসে। পরিজনদের শেখানো বুলি আওড়াতে বাধ্য করা হয়। এখন যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, কিছুতেই কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রমিকদের বের করে আনা যাবে না, সঙ্গে সঙ্গে টানেলের ভিতরে ল্যান্ডলাইন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা ফোনে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন ঠিকই। তবে আদৌ তাঁদের প্রকৃত অবস্থা কতটা সামনে আসবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। 
যে মার্কিন যন্ত্র দিয়ে খনন চলছিল নির্মীয়মাণ ওই সুড়ঙ্গে, সেই অগার মেশিন শুক্রবার রাতেই বিগড়ে যায়। কংক্রিটের জঙ্গল সাফ করতে করতে বারবারই ধাতব কোনও বস্তুতে লেগে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল অগার। যন্ত্রের ব্লেডগুলি দিয়ে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ড্রিলিং হয়, সেই ব্লেডগুলিই ভেঙে গিয়েছে বলে এদিন জানা গিয়েছে। এখন ওই যন্ত্রটিই আটকে রয়েছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। ফলে যে প্রক্রিয়ায় উদ্ধারকাজ এগচ্ছিল, তা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। ‘আর মাত্র ১০ থেকে ১২ মিটার, সুখবর আজই’— গত দু’দিনের টানা এই প্রচারই এদিন কার্যত ধসে গিয়েছে। 
উদ্ধারকারী দলের আধিকারিকরা এখন দু’টি বিকল্প উপায়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এক, উদ্ধারকারীদের এখন ম্যানুয়ালি খুঁড়তে হবে। মনে বাকি ১০ থেকে ১২ মিটার হ্যান্ড ড্রিল দিয়েই খুঁড়তে হবে তাঁদের।  দুই, লম্বালম্বিভাবে মানে টানেলের উপর দিক দিয়ে ৮৬ মিটার ড্রিলিং। এতদিন যে পদ্ধতিতে কাজ চলছিল, তাতে ৫৭ মিটার খুঁড়লে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো যেত। ৪৫ থেকে ৪৭ মিটার পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অগার মেশিনটি বের করে আনতে পারলেই ম্যানুয়ালি খননকাজ শুরু করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা একজন একজন করে ওই ৪৭ মিটার পর্যন্ত যাবেন, তারপর যতটা সম্ভব খননকাজ চালাবেন। তিনি বেরিয়ে আসলে আরেক জন কর্মী ঢুকবেন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা পর্ষদের সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সইদ হাসনাইন এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই উদ্ধারকাজ শেষ হতে এখন অনেক সময় লাগবে। যদিও পরিস্থিতির গভীরতা হালকা করে দেওয়ার ঢঙে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি দাবি করেছেন, অগার মেশিন বের করে আনতে পারলেই উদ্ধারকাজ শুরু হবে। আর পাখি পড়ার মতো ফের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ফোন করে নিয়মিত খবর নিচ্ছেন। হাসনাইন বলেছেন, অন্তত ৩৬ ঘণ্টা লাগবে ওই মেশিন বের করে আনতে। অগার মেশিন দিয়ে যে আর কোনও কাজ হবে না তা-ও বলেছেন তিনি। বলেন, ‘‘অগার ভেঙে গিয়েছে। অগারের কাজ শেষ। পাহাড় অগারকে ফের আটকে দিয়েছে। ফলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী, ৪১ জনকেই আমরা সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরাতে পারব।’’ বিএসএনএল’র ডিজিএম রাকেশ চৌধুরি জানিয়েছেন, যে পাইপের মধ্যে দিয়ে খাবার পাঠানো হয়, ওই পাইপের ভিতর দিয়েই ফোন পাঠানো হয়েছে। ওই ফোনে ইনকামিং এবং আউটগোয়িং দু’টি পরিষেবাই আছে। তাঁরা নির্দ্বিধায় বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment