এসেছিলেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে। তারপর পাকাপাকি থেকে গিয়েছিলেন। সন্তানের জন্মও এপারে, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে। সে সন্তান নাম লিখিয়েছিল সুরক্ষা বাহিনীতে। তার প্রাণ গিয়েছিল সন্ত্রাসবাদী হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে। সরকার ‘শৌর্য চক্র’ দিয়েছিল। এখন ওপারে ফিরতে হচ্ছে মা শামিমা আখতারকে।
পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ ভারতীয়ের মৃত্যুর পর পাকিস্তানী নাগরিকদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে দেশের সরকার। তার মধ্যেই রয়েছেন ‘শৌর্য চক্র’ কনস্টেবল মুদাসির আহমেদ শেখের মা। সন্তানের মৃত্যুর পর স্বামীকে নিয়ে পুরস্কার নিয়েছিলেন শামিমা আখতারই।
২০১০ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে ফিরে আসা বাসিন্দাদের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করেছিল। এদের কাউকে কাউকে সন্ত্রাসবাদীরা একসময় ব্যবহার করেছিল। তাঁরা সেই সংযোগ থেকে বেরতে চাইছিলেন। তার মধ্যেই ছিল শামিমা আখতারের পরিবার।
২০২২ সালে নিহত হয়েছিলেন সন্তান মুদাসির। জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ টিমের সদস্য ওপার থেকে ঢুকে পড়া সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করছিলেন। গুলিতেই নিহত হন তিনি।
জম্মু ও কাশ্মীরে পুনর্বাসন পাওয়া এমন ৬০টি পরিবারকে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হবে পাঞ্জাবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্তের চেকপোস্টে। ক্ষোভ জানাচ্ছেন শামিমা আখতারের দেওর মহম্মদ ইউনুস। তিনি বলেছেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর তো আমাদেরই। তাদের পাকিস্তানী বিবেচনায় ফেরত পাঠানো ঠিক নয়।’’
ক্ষোভ জানিয়েছেন সিপিআই(এম) বিধায়ক এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইউসুফ তারিগামিও। তিনি বলেছেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বহু মানুষ এসেছিলেন। কারণ জম্মু ও কাশ্মীরের সরকার ২০১০ সালে তাঁদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এখন তাঁদের পাকিস্তানী পরিচয় বিচার করে ফেরত পাঠানো অমানবিক। তাঁদের পরিবারের অনেকে জম্মু ও কাশ্মীরে এসে স্থানীদের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এখানকার জীবনের অংশ হয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন। আইন মেনে চলা যে কোনও নাগরিকের মতোই তাঁদের জীবনযাপন। এখন জোর করে তাঁদের ফেরত পাঠালে জনজীবনে যন্ত্রণা বেড়ে যাবে।’’
২০০৬ সালে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় সিপিআই(এম) প্রথম প্রস্তাব পেশ করেছিল এই অংশের জন্য। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসছেন যাঁরা, বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করা হোক তাঁদের জন্য।
মঙ্গলবারই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভা দলনেতা রাহুল গান্ধী সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। বিরোধী বিভিন্ন দলের সাংসদরাও এই দাবিতে সহমত জানিয়েছেন।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে হয়েছে হামলা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলি চালানোয় যুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর জানায়নি কেন্দ্র। তবে সংবাদসংস্থা জানিয়েছে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ ঘিরে বহু ভুয়ো পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে।
যেমন একটি ভিডিও ছেড়ে দাবি করা হয়েছে পাকিস্তানের সেনা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের লিপা ভ্যালিতে ভারতের দু’টি চেকপোস্ট উড়িয়ে দিয়েছে। দেখা গিয়েছে ওই ভিডিও উত্তর আয়ারল্যান্ডের দাবানলের।
আরেকটি ভিডিও-তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে গুরুতর হামলা চালিয়েছে ভারত। দেখা গিয়েছে ২০২৩’র মে-তে পাকিস্তানের পিটিআই নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর বিক্ষোভের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। আবার ভারতীয় সেনা নির্দোষদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে বলেও পোস্ট করা হয়েছে। ‘ফ্যাক্ট চেক’ করে সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে যে এই দাবিও ভুয়ো।
Pahalgam Deportation
প্রাণ দিয়ে ‘শৌর্য চক্র’ সন্তান, মা-কে ফেরানো হচ্ছে পাকিস্তানে

×
Comments :0