Post Editorial

নাগপুরের কর্মসূচি দেশকে কোথায় দাঁড় করাবে?

উত্তর সম্পাদকীয়​


গৌতম দেব
তিনদিকে তিন মহাসমুদ্র মাঝখানে অনেকখানি স্থলাকার জমি– হৈ হৈ করে সেই জমিতে ঢোকা–বেরনো কঠিন। আর যদি বা কেউ ঢোকে বেরনো আরও মুশকিল। পশ্চিম থেকে পূর্বের সীমান্ত পর্যন্ত বিশ্বের আধুনিকতম পর্বতশৃঙ্গ যার বুকের মাঝে শান্ত, সৌম্যাকার- হিমালয় দাঁড়িয়ে আছে। প্রহরীর মত দণ্ডায়মান হিমালয়ের দুই বাহু দুই দিকে প্রসারিত করে এই দেশটার পূর্ব-পশ্চিমে এসে মিলেছে। এই ভূখণ্ডই আমাদের দেশ– ভারতবর্ষ। 
তবে এই ভূখণ্ডের মানুষকে দমবন্ধ করে মারার কোনও বাসনা থেকে প্রকৃতির এই নৈবেদ্য নিবেদিত হয়নি। দুর্গম অগম্য হিমালয়ের উত্তরভাগে নানান গিরিপথ, পাহাড়ি নদী এবং ছোট খাটো অসংখ্য জনপদ আছে– সেখানে আছে নানা উপজাতিভুক্ত মানুষেরা । কঠিনতম  শীত এবং অসহনীয় প্রাকৃতিক অবস্থা ভেদ করে তবু মানুষ বারংবার চেষ্টা করেছে উত্তর থেকে দক্ষিণে পৌঁছাতে। মানুষের মূল ধারাটি বহু বছর ধরে বিবিধ কষ্টকর বাধা বিপত্তি পেরিয়ে মধ্য এশিয়া থেকে সোজা পারস্য সভ্যতার বুক চিরে কাবুল কান্দাহার হয়ে পেশোয়ারের পথ বেয়ে বর্তমান ভারতের কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশ বিশেষ করে সিন্ধু নদের দুপাশে বিস্তীর্ণ উর্বর জমি ধরে ভারতের উত্তর ভাগে প্রবেশ করে তারা। পথে যুদ্ধ, মৃত্যু, অনাহার প্রভৃতির সাথে আছে হিমালয় জোড়া বরফের শীতলতা। আলেকজান্ডার এলেন এবং ফিরেও গেলেন। কিন্তু লাখো লাখো আর্যরা (যে নামে তারা পরিচিত) তাদের দেশে চাষযোগ্য সোনার জমির সন্ধান পায়নি। তাই হিন্দুকুশ পর্বত অথবা সিন্ধু নদের দুপাশ ঘিরে অস্থায়ী উদ্বাস্তুদের মত শিবির করে থাকার পরিবর্তে হাজারে লাখে আর্য মানুষ এই সিন্ধুনদের উপত্যকা জুড়ে চাষ বাস শুরু করলেন এবং নতুন সমাজ অর্থনীতি আনন্দে উপভোগ করলেন।
আর্যরা ভারতে আসার আগে কি ভারতে মানুষ থাকত না? থাকত। কিন্তু গণ্ডগোল হচ্ছে এই থাকা নিয়ে পণ্ডিতদের একমত করা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর পার্টির সাথে একদল মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্য মন্ত্রী থেকে পৌরসভা, পঞ্চায়েত , গ্রামের মাতব্বর সবই পাবেন। যাদের বক্তব্য-  আর্যরাই ভারতে আদিমতম সভ্য মানুষ। তার আগে ভারতবর্ষে যে সব মানুষ থাকত তাদের মানুষ বলে মানতে ভীষণ আপত্তি এই সব পণ্ডিতদের। ওদের বক্তব্য হচ্ছে ভারতে নাগরিক হল কাশ্মীর, পাঞ্জাব থেকে আসা মানুষরা, তাকিয়ে দেখুন ওদের মুখমণ্ডলের দিকে, মানুষগুলোর লম্বা নাকের দিকে, মানুষগুলোর দীর্ঘ উচ্চতা তাকে জাঠ বলুন আর কাশ্মীরীই বলুন ছেলে মেয়ে প্রত্যেকের গায়ের রঙ দেখুন– একটা অধিনায়কোচিত মনোভাব– মেইন লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেস বা চেন্নাই এক্সপ্রেসের দিকে তাকিয়ে দেখুন- যে অনার্যদের জয় করে আর্যদের এই দেশটার উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে হল– এরাই হচ্ছে দ্রাবিড়। এরাও ভারতবাসী। এছাড়া উত্তর ভারতের পূব থেকে পশ্চিমে তাকালে পাওয়া যাবে  অসংখ্য মঙ্গোলয়েড মানুষের মত দেখতে অধিবাসীবৃন্দ। এর সাথে আপনি কি ভাবে বাদ দেবেন ভারতের আদিম মানুষ আদিবাসীদের। আর আছেন অস্ট্রিক গোষ্ঠীভুক্ত মানুষ। অনেকগুলি জাতি গোষ্ঠীর চিহ্ন এবং ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে তাঁরা আছেন। বিজেপির জন্মের বহু আগে থেকে আজও পুরোহিতগিরি করে মন্ত্রোচ্চারণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়- সেই ব্রাহ্মণকুল, যাদের ভাষা একমাত্র বিজেপিই ভাল বোঝে- রাজপ্রাসাদের এবং দেশে দেশে আইফেল টাওয়ারের চূড়ায় উঠে ব্রাহ্মণরা ব্যাখ্যা দিলেন কেন ব্রাহ্মণরা শ্রেষ্ঠ। আগেই সমগ্র মানবজাতি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অনার্যদের। দ্রাবিড়রাও হলুদ কার্ড দেখেছে। আরে বৈশ্য, শূদ্র তো কথাই নেই। আর এই বর্ণবাদ বিজেপিকে খুশি করার পাশাপাশি অসংখ্য মানুষকে অখুশি করেছে , পিটিয়ে হত্যা করেছে।
সঙ্ঘকর্তাদের চূড়ান্ত বক্তব্য হচ্ছে মানুষের  মধ্যে নানান বর্ণভেদের ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং ভগবান। এ কথার পর তারা গীতা থেকে তুলে ধরে ভগবানের বক্তব্য- 
     “চতুর্বর্ণ ময়া সৃষ্ট গুণকর্ম বিভাগশঃ”
অনেক সাধারণ মানুষ আমাদের প্রশ্ন করেন যে আপনারা কেন বিজেপির বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমেছেন? কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে কী পার্থক্য– দুই দলই দেশে বড়লোকদের স্বার্থ সর্বাগ্রে পূরণ করতে চায়। গরিব মানুষকে দেখার ব্যাপারে দুই দলই সমান অবিন্যস্ত। বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারে আছে– ওদের হাতে অর্থবল অনেক বেশি। বিজেপিকে মদত দিচ্ছে আদানিরা আর কংগ্রেসকে মদত দেওয়ার জন্য টাটা, বিড়লা তো আছে। কিন্তু চোখ খোলা রেখে এই প্রশ্নে ঘটনাবলি প্রকাশের তালিকা যদি অনুসন্ধিৎসু মনে বিচার করা যেত তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম যে আম্বানি, গোয়েঙ্কা বিজেপিকে অর্থ দিচ্ছে মানে কংগ্রেসের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে তা নয়। ওদিকে টাটা , বিড়লাও বিজেপিকে অখুশি রাখে না। 
কংগ্রেস আর বিজেপির পার্থক্য বুঝতে গেলে একটু ফিরে দেখতে হয়।  স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশ গঠনের প্রশ্নে যে সব ইস্যুগুলিকে মৌলিক ইস্যু বলে মনে করা হত এবং কংগ্রেস বা নেহরুর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার সেই সব মৌলিক ইস্যুগুলির মোকাবিলায় যে সব পন্থা প্রকরণ গ্রহণ করল এবং স্বাধীন ভারতের নীতি হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরল তা হচ্ছে ভারত পাকিস্তানের মত সাম্প্রদায়িকতার পথ নেবে না– ভারত থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে, সরকার কোনও ধর্মকে তোষণ করবে না। সরকার ধর্ম করবে না ভালো কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম প্রসঙ্গে কী নীতি নেবে?  নেহরুর সাফ উত্তর– ধর্মনিরপেক্ষতা। দ্বিতীয় ইস্যু ভারতকে হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক পথ অথবা মার্কিনীদের ধনতান্ত্রিক পথ– এর মধ্যে একটাকে বাছতে হবে। নেহরুর উত্তর হল মিশ্র অর্থনীতি। সেখানে টাটা বিড়লারা থাকবে আর দুর্গাপুর ইস্পাত, ভিলাই, রৌরকেলা, রেল এবং ভারী শিল্প যা করার ক্ষমতা পুঁজিপতিদের ছিলো না সে সব ক্ষেত্রে সরকার শিল্প-ব্যবসা চালাবে। তৃতীয়ত, বিদেশনীতি। একদল ছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর অধীনে আর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিসমেত আর কয়েকটি দেশ মিলে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে (সিয়াটো)। নেহরু বললেন আমরা কোনও দিকে যাব না। কোনও সুবিধাবাদী মনোভাব থেকে নেহরু বলেননি , আন্তর্জাতিক জনমত এবং বাস্তবতা বিবেচনা করেই নেহরু বললেন আমরা হব জোট নিরপেক্ষ।
আজ কোথায় সেই কংগ্রেস আর কোথায় সেই নীতির স্তবক। দেশে যতটুকু শিল্প হচ্ছিল তারাও হামাগুড়ি দিচ্ছে বিদেশি রাঘববোয়ালের কাছে। অর্থনীতির দিক এবং বিষয়বস্তুর অগ্রাধিকার ঠিক করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউরোপের কয়েকটি মাতব্বর দেশ। 
আম্বানি বা আদানিরা দেশের বাজার ছাপিয়ে বিদেশেও বাজার দখল করতে সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে সুবিধা করে দিচ্ছেন মোদীজী। ইতিমধ্যে আদানিদের শেয়ার বিক্রি সম্পর্কে বিভিন্ন দেশে শেয়ার মার্কেটে বিপুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শেয়ার বাজারেও পশ্চিমী দেশগুলিও বিরক্ত। তাদের অভিযোগ হচ্ছে যে  হিসেবে গরমিল করে শেয়ার বাড়াবার বিষয়টি কারচুপি করে দেখানো হয়েছে।
রাজ্যে রাজ্যে বা দেশে আরএসএস-এর কাজ যদি গভীরভাবে লক্ষ্য করা যায় তাহলে পরিষ্কার হবে যে এ দেশের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ব্যাপারে আরএসএস-এর গভীর সংবেদনশীলতা। যখনই কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনায় সঙ্ঘ পরিবারের সুযোগ হয়েছে তখন তারা প্রথম দাবি উত্থাপন করেছে যে অন্য দপ্তরের থেকে তারা শিক্ষা ও সংস্কৃতি দপ্তরে বেশি উৎসাহী এবং আগ্রহী। সেইজন্য আদবানির মত বড় নেতাকে তারা প্রথম জনতা সরকারের আমলে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে মন্ত্রী করেন এবং দলের সভাপতি মুরলী মনোহর যোশীকে শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী করেন। এ কথা বলার উদ্দেশ্য এই না যে অন্য দপ্তরে তাদের উৎসাহ বা স্বার্থ নেই। বিজেপি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশ জুড়ে আওয়াজ তুলতে চাইছে যে এবং বিশ্বাস করাতে চাইছে যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নেহাতই আনুষ্ঠানিক হবে। আর বিরোধী দল নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত ঝগড়াঝাঁটি করবে নিজেদের মধ্যে। এদেশে বিরোধীদলগুলির অবস্থান এমনই যে রাজনীতি এবং ভূগোলে মিল খাওয়ানো বেশ কঠিন। 
তাই আজ লাল কেল্লা থেকে  মোদী তার ছাপ্পান্ন ইঞ্চি বুকের ছাতি দেখাচ্ছেন এবং দেশবাসীকে স্পর্ধিত হুঙ্কার দিয়ে বলছেন আগামী বছর লালকেল্লার এখান থেকে ভাষণ দেব আমি। ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্র । এ বছর ভারত নির্বাচিত হয়েছিল জি-২০’র সভাপতি হিসেবে। এই যদি মোদীর হুঙ্কার হয় বলা বাহুল্য তার নাতি নাতনিরা এ চ্যানেল ও চ্যানেল এবং এ কাগজ ও কাগজে আরো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছেন। 
বিজেপি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে? তাদের ঘোষিত লক্ষ্য রামরাজ্য! এই রামরাজ্যের আপাতত যে প্রদর্শনী চলছে অযোধ্যার মন্দির নির্মাণের মধ্য দিয়ে- কোটি কোটি কুড়িয়ে পাওয়া টাকার দৌলতে তৈরি হচ্ছে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের আদলে অযোধ্যার স্বর্ণমন্দির। আরএসএস নিষিদ্ধ নয় কিন্তু আধা একটি গোপন সংগঠন, যাদের সদস্য তালিকা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওরা ওদের শক্তি বাড়িয়েছে এটা ঠিক। তা সত্ত্বেও দেশের বুদ্ধিজীবী অধ্যাপকদের তালিকায় থাকা যে নামগুলির সাথে জনগণ একটু বেশি পরিচিত তাদের বিরাট অংশ সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর যাপন উপলক্ষে নাগপুর-ওয়ালারা যে অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তার সর্বাত্মক বিরোধিতা করছেন। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে এই বৈরিতার আবহাওয়া তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে জয় শ্রীরাম স্লোগান উচ্চস্তরে নিয়ে যাবার তাৎপর্য বুঝতে হবে। যাকে যেখানে যেমন ভাবে ব্যবহার করলে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ হয় সেখানে তারা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের মত মনীষীদের চিন্তা ব্যবহার করছেন নিজেদের কলুষিত মনকে তৃপ্ত করার জন্য। দেশের বাম এবং গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের খোলা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দাবি করা হয় বিভিন্ন ধর্মের উপস্থিতি এবং অন্য ধর্ম সম্পর্কে ভারতের ‘টলারেন্স’ ভারতের ঐতিহ্য, সব চাইতে বড় কথা টলারেন্স নয়  ‘অ্যাকসেপ্টেন্স’ হল এদেশের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে বদ্ধ মানসিকতা ভারতবাসীকে আরো অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে। আদি শঙ্করাচার্য, গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর, চার্বাক, গুরু নানক প্রভৃতি বিশিষ্ট দার্শনিক ধর্মগুরুরা মধ্যযুগে ভারতের এই টলারেন্স ও অ্যাক্সেপ্টেন্সের ট্র্যাডিশনকে আরো শক্তপোক্ত করেন। এরপরে আসেন রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ, মহাত্মা গান্ধী, লোকমান্য তিলক প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আরএসএস-এর মূল্যায়ন হচ্ছে  এই  যে বিপুল সংখ্যায় স্বয়ংসেবক– তারা একটি মিলিটারি  কম্যান্ডের সাথে সঙ্গ মিলিয়ে- প্রায় এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার স্বয়ংসেবক– তারা বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য হাজির হয়েছেন। বিদর্ভ সহ অন্যান্য এলাকা থেকে- স্বেচ্ছাসেবক যারা নির্ভীক, আত্মত্যাগী এবং দেশের দুর্গম অঞ্চলে কাজ করতে আগ্রহী ( বিশেষ করে উত্তর পূর্বাঞ্চলে) তারা দেশের সামনে উজ্জ্বল ঐতিহ্য রেখে গেছেন- দাবি করেন আরএসএস-এর পণ্ডিতরা। কিছুদিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। এটা তাদের রুটিন কাজের অঙ্গ এবং সঙ্ঘকে রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দেবার তীব্র নিন্দা করে শুরু করেন যে ভারতের সেনাবাহিনীর জওয়ানদের যে ট্রেনিং দেওয়া হয় তাতে অস্ত্র বাদে বাকি পঁচাত্তর শতাংশ ট্রেনিং আরএসএস দিয়ে থাকে তার স্বেচ্ছাসেবকদের। 
কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কে আরএসএস-এর নেতৃত্বে সঙ্ঘ পরিবারের বক্তব্য ঘোরতর দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল। ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনের তারা বিরোধী। হিন্দি ভাষাকে সারা দেশে চালিয়ে দেবার পক্ষে। সর্বশেষ মানুষ দেখছেন চোর ঠেকাবার নামে রাজ্যগুলিকে গরিবস্য গরিব মানুষ যারা প্রধানমন্ত্রী যোজনায় কাজ করছেন তাদের একটা বড় অংশ টাকা পাননি এখনও। সেই টাকাটা দিল্লি আটকে রেখে মমতাকে শিক্ষা দিচ্ছে। সর্বশেষ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যে ভূমিকা কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করছে তাতে বোঝা যাচ্ছে  শিক্ষা প্রথমে রাজ্য তালিকাভুক্ত ছিল পরে সেটাকে যুগ্ম তালিকায় আনা হল। আর এখন সরাসরি রাজ্যপালকে উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যের হাতে এখনও যেটুকু ক্ষমতা আছে সে সব কেড়ে নেবার চেষ্টা করছে। এছাড়া সঙ্ঘ পরিবার বা আরএসএস-এর কাছে মূল প্রশ্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পড়ানো হবে। সেটা উপাচার্য নিয়োগের চাইতে বড় ব্যাপার। চন্দ্রযানের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু , নির্দিষ্ট স্কোয়ার মিটার এরিয়াকে লক্ষ্য করে ঠিক সেখানে গিয়েই নামা এবং তার উপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত সেই দায়িত্ব পালন করা, তার কাজ সে করে চলেছে। কিন্তু বিজেপির লক্ষ্য কী? সেটা এখনও পরিষ্কার হয়নি।
রামরাজত্বে মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ছিল কিনা তা আমাদের মত ছাপোষা লোকের বলা মুশকিল। কিন্তু আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে আমাদের দেশকে ঘিরে আছে যে দেশগুলি তা প্রায় সবই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত। মুসলিম রাজনীতিও গতকালের অবস্থায় অবস্থান করছে না। পারস্য নামে অতীতের দেশটি যা এখন ইরান নামে পরিচিত তার অ্যাটম বোমা বানানো সময়ের ব্যাপার। 
আফ্রিকা মহাদেশ গভীর অন্ধকার থেকে আলোয় আসছে। কদিন আগে জোহানসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন হয়ে গেল। ভারতের যা বদনাম হচ্ছে বিশ্বময় তাতে চীন বা পুতিন বাদ দিয়ে জি-২০ জুটি কি সফল হবে? ইউক্রেন নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে যা হচ্ছে তা এক কথায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইউক্রেনের পাশে শামিল হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি সহ গোটা ধনতান্ত্রিক দুনিয়া। বড় কথা হচ্ছে যে এই প্রক্সি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলি তাদের তৈরি অস্ত্র শস্ত্র যা এখনও পরীক্ষিত হয়নি তার চেহারা এবং রূপ দেখানোর ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মোদী ভারতকে যেখানে নিয়ে যেতে চাইছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে তাতে প্রচলিত বাংলা কথায় অতি চালাকের গলায় দড়ি। এক নম্বর কথা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ পেট্রোলিয়াম সামগ্রী রাশিয়ার থেকে নামমাত্র দামে নিয়ে আসছে, ভারত দেশটা বড়, তার চাহিদাও বেশি ফলে ভারতকে পাশে রাখার জন্য রাশিয়াও কূটনৈতিক প্রক্রিয়াও সেই ভাবেই পরিচালনা করছে। সর্বশেষ প্রস্তাবে জি-২০ ইউক্রেন সম্পর্কে এমন ভাষায় উল্লেখ করেছে যে  আমেরিকা এবং ন্যাটো এতে খুশি। আবার শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে একথাও ঘোষণা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে  মোদীর ‘না রাশিয়া, না আমেরিকা’ অবস্থান থেকে পরের দিনই রাষ্ট্রনায়করা দেশে ফেরার প্লেন ধরার আগেই মোদী সরকার ঘোষণা করল– স্বয়ং প্রতিরক্ষামন্ত্রী যাবেন চীনের ঘাড়ের উপর লাদাখে যেখানে ঘাসও হয় না। বারো মাস শূন্য ডিগ্রিরও কম তাপমাত্রা সেখানে আধুনিক আক্রমণাত্মক যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি তৈরি করা হবে এবং কিছুদিনের মধ্যেই। স্পষ্ট নীতি অবস্থান ভারত সরকারকে নিতে হবে, তা না হলে দেশকে হয়তো বা ১৯৬২-র পুনরাবৃত্তি দেখতে হতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment