Modi not again

এ যাত্রায় আর হলো না

সম্পাদকীয় বিভাগ

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ছক কষে ফেলেছিলেন। দলের মধ্যে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের যথা সম্ভব মাঠের বাইরে সরিয়ে দিয়ে চলার পথ মসৃণ করেছিলেন। নতুন ফরর্মুলা চালু করে তৎকালীন শীর্ষ নেতারা যাতে তাঁর পথের কাঁটা হতে না পারেন তার ব্যবস্থা করলেন। ৭৫ বছর উত্তীর্ণ সব নেতাদের সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দর্শকে পরিণত করলেন। মোদী প্রবর্তিত ফরর্মুলা বিজেপি-র লৌহ মানব লালকৃষ্ণ আদবানি থেকে শুরু করে মুরলিমনোহর যোশী, সুমিত্রা মহাজনরা মার্গ দর্শকে পরিণত হলেন। তারপর থেকে দলে ও সরকারে নিজের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েমের প্রক্রিয়া চলে জোর গতিতে। দলের মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে থাকা নেতাদের মধ্যে যারাই নানা কারণে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিল বেছে বেছে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আসলে মোদী তাঁর আশেপাশে অন্য কোনও নেতার অস্তিত্ব সহ্য করেন না। তিনি একাই নেতা, সর্বময় কর্তা হতে চান। তাঁর কথাই শেষ কথা, তাঁর সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত বাকি সকলে হবে তাঁরই অনুগত, জোহুজুরে। এই ভাবনা থেকেই তিনি এক দেশ এক নেতার স্লোগান দিয়েছেন। ভারতে তিনিই হবেন একমাত্র নেতা। তাঁর দলে তো বটেই অন্য কোনও দলেও কোনও সম্ভাবনাময় নেতার অস্তিত্ব তিনি মেনে নেবেন না। এএক ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী, ফ্যাস্তিস্ত মানসিকতা।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আপ নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিয়োল নরেন্দ্র মোদীর এই মানসিকতাকেই তীব্র আক্রমণ করেছেন। ক্ষমতায় ফেরার জন্য বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে তিনি  বেপরোয়া হয়েছেন। জনগণের ভোটে না জিতেও যেমন রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী বিধায়ক কিনে ক্ষমতা দখল করে বিরোধীদের দুর্বল করা হয়েছে তেমনি লোকসভা ভোটে বিরোধীরা যাতে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পারে তারজন্য বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই, আইটি লেলিয়ে দিয়ে তাদের নাস্তানাবুদ করা হচ্ছে অথবা জেলে বন্দি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লোকসভা ভোটের পর যদি কোনোভাবে মোদী ক্ষমতায় ফেরে তাহলে দেশের কোনও বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী জেলের বাইরে থাকবে না। এমনকি তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরেদের মতো বিরোধী নেতাদেরও রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে এক দেশ এক নেতার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে। গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করে সেখানে ওড়ানো হবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতাকা।
লক্ষণীয় যে মোদী দশ বছর আগে নেতৃত্বদানের বয়সসীমা ৭৫-এ বেঁধে দিয়ে আদবানির মতো নেতাদের সরিয়ে দিয়েছিলেন সেই নরেন্দ্র মোদীর বয়স আগামী সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। নিজের তৈরি নিয়ম অনুযায়ী এবার জিতলেও তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব নয়। অথচ গোটা নির্বাচনটা হচ্ছে মোদীর নামে। বিজেপি অপ্রাসঙ্গিক। মোদীই সব । ভোটাররা দলের গ্যারান্টি পাচ্ছে না মোদীর গ্যারান্টি পাচ্ছে। তবে কি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবার লোভ সামলাতে না পেরে নিজের তৈরি নিয়মই নিজের হাতে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন? যদি উচ্চাভিলাষ সরিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাও হন তাহলে ডান হাত অমিত শাহ-কে বসিয়ে ক্ষমতার রাশ নিজের হাতেই রাখবেন। সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে যোগী আদিত্যনাথ। অতএব অবাক হবার কিছু থাকবে না যদি যোগী রাজনৈতিক ভবিষৎ অন্ধকার করে দেওয়া হয়। এর আগে বসুন্ধরা রাজে, শিবরাজ সিং চৌহান, রমন সিংদেরও গুরুত্বহীন ও অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হয়েছিল। আঁটঘাঁট বেঁধে মোদী সর্বত্র ঘুঁটি সাজিয়ে রাখছেন এক এবং অদ্বিতীয় নেতা হবার বাসনায়। কিন্তু এযাত্রায় তাঁর সেই বাসনা অপূর্ণই থেকে যাবে। ৪০০ আসন বা ৩৭০ আসন তো অনেক দূরের কথা, ২৭০ আসন পাবার সম্ভাবনাও দ্রুত ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধী বলেছেন উত্তর প্রদেশে বিরোধীরা ৫০টি আসন জিতবে। আর দেশে বিজেপি ১৭০ থেকে ২০০। আর কেজরিওয়ালের মতে বড়জোর ২২০ থেকে ২৩০। হরিয়ানা, রাজস্থান, কর্নাটক, দিল্লি, বিহার, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ সর্বত্র বিজেপি-র আসন কমবে।

Comments :0

Login to leave a comment