POST EDITORIAL GAZA

প্যালেস্তাইনে ইজরাইয়েলী আগ্রাসন এবং প্রতিরোধ

উত্তর সম্পাদকীয়​

সেখ সাইদুল হক


৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাস বাহিনীর আক্রমণে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী ও নাগরিকদের মৃত্যু হয়েছে। এর পালটা হিসাবে ইজরায়েল তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্যালেস্তাইনের গাজা ভূখণ্ডে যেভাবে ক্রমাগত বোমা ও রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তা নৃশংসতার সব মাত্রাকে ছাপিয়ে গেছে। শিশু, নারী সহ সাত হাজারের বেশি প্যালেস্তিনীয়কে জায়নবাদী ইজরায়েল হত্যা করেছে। বহু বাড়ি ঘর, স্কুল, ধর্মস্থান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ধংস করেছে। আল শিফা হাসপাতালের উপর জঘন্য আক্রমণ চালিয়েছে। গোটা গাজা ভূখণ্ডকে ধংসস্তূপে পরিণত করেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দোসররা ইজরায়েলের এই হামলাকে বৈধতা দিতে ইজরায়েলকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে বলেছে এটা নাকি ইজরায়েলের আত্মরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। কিন্তু তা একেবারেই নয়। সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থ ও অস্ত্রে মদতপুষ্ট ইজরায়েল নিজেই একটি সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র যারা গত ৭৫ বছর ধরে প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডের ৮০ শতাংশকে জবরদস্তি দখল করে রেখেছে এবং বারবার হামলা চালিয়ে বহু প্যালেস্তাইন জনগণকে হত্যা করেছে। প্যালেস্তিনীয়রা এখন নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে রয়েছেন। এই পটভূমিতে হামাসের আক্রমণকে বিচার করতে হবে। গত ৭৫ বছরে এই প্রথম ইজরায়েলের ভিতরে ঢুকে হামাস আক্রমণ চালিয়েছে যা সাম্রাজ্যবাদী শিবির ও ইজরায়েল কল্পনাও করতে পারেনি। হামাসের এই প্রতিরোধ ধামাচাপা পড়া প্যালেস্তিনীয় সমস্যার সমাধানের দাবিকে সামনে এনেছে। ইজরায়েলের এই নৃশংসতম হামলার প্রতিবাদে পৃথিবীর সর্বত্র গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ইজরায়েলের অভ্যন্তরেও প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। শান্তি প্রক্রিয়ার পদক্ষেপ হিসাবে হামাস ইতিমধ্যেই কিছু ইজরায়েল পণবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। তাঁরা মুক্তি পেয়ে সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন বন্দি অবস্থায় হামাস তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে।
এটা ধর্ম যুদ্ধ নয়, আগ্রাসন বিরোধী প্রতিরোধ
এখানে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোকপাত করা দরকার। সাম্রাজ্যবাদী শিবির ইসলাম ফোবিয়া গড়ে তুলতে ও ইজরায়েলের এই জঘন্যতম আক্রমণকে আড়াল করতে একে ইসলাম ও ইহুদিদের মধ্যে যুদ্ধ বলে প্রচার করছে। আমাদের দেশে সঙ্ঘ পরিবার এ বিষয়টিকে সামনে এনে মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি একেবারেই তা নয়। গাজায় হামাস কিংবা লেবাননে হিজবুল্লার লড়াই ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়, লড়াই জায়নবাদী ইজরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। জায়ন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্র জেরুজালেম যা ইহুদি ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মোজেসের জন্মস্থান। কিন্তু জায়নিজম ইহুদি ধর্মীয় মতবাদ নয়। ইহুদি ধর্মীয় মতবাদ হলে জুডাইজম। হিন্দু ধর্ম এবং সাভারকার ও সঙ্ঘ পরিবার বর্ণিত হিন্দুত্ব যেমন এক নয়, তেমনি জুডাইজম ও জায়নিজম এক নয়। জায়নিজম হলো উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যার লক্ষ্য হল প্যালেস্তাইনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, জেরুজালেমকে তার অধীনে আনা এবং জেরুজালেমের মুসলিমদের পবিত্রস্থান মসজিদ “আল আকসা”য় ইহুদিদের তৃতীয় টেম্পল বা ইহুদি মন্দির বানানো। পশ্চিম এশিয়ায় তৈল খনিগুলির উপর দখলদারি চালাতে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য ছিল প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডে এমন একটি তাঁবেদার রাষ্ট্র গঠন যাকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধশালী করা হবে। যে দেশ ইঙ্গ-মার্কিনীদের পক্ষে পশ্চিম এশিয়ায় তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে। সেই দেশ হলো ইজরায়েল। সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার।
প্যালেস্তাইন সমস্যা ও ইজরায়েলী আগ্রাসন
প্যালেস্তাইন এলাকায় কখনও ইহুদি দেশ ছিল না। কিংবা মধ্য প্রাচ্যে ইসলাম বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে ইহুদিদের উৎখাত করে আরবরা কোনও ইহুদি রাষ্ট্র দখল করে ইসলাম তন্ত্র বানায়নি। ১৯৪৮ সালের আগে পৃথিবীর কোথাও ইজরায়েল বলে কোনও ইহুদি রাষ্ট্রও ছিল না। প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ভরা প্যালেস্তাইন ছিল মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের একটি স্বাধীন দেশ। সংখ্যাধিক্য জনগণ ছিল মুসলিম। ইহুদিরা সংখ্যায় ছিল কম। সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের কাছ থেকে এই এলাকা ব্রিটিশ ও ফরাসিদের দখলে এলে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী লর্ড আর্থার বালফোর ঘোষণা করেন যে প্যালেস্তাইনের বুকে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠন করা হবে। ১৯২০ সাল নাগাদ প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ডে ইংরেজদের মদতে আরব প্রজাদের জমি থেকে উৎখাত করে সেই জমি নামমাত্র মূল্য কিনে নিয়ে সেখানে পরিকল্পিত ভাবে জায়নবাদীরা ইহুদি বসতি বাড়াতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের ইহুদি নিধন জায়নবাদীদের হাতকে আরও শক্ত করে এবং ইহুদি রাষ্ট্রের দাবি আরও জোরালো করে। ইহুদিরা এই এলাকায় বসতি বাড়াতে থাকে। ১৯১৭ সালে ইহুদি জনগণ ছিল ৬০ হাজার। ১৯৪৬ সালে তা বেড়ে হয় ৭ লক্ষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে রাষ্ট্রসঙ্ঘ তৈরি হলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উদ্যোগে ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতে প্যালেস্তাইন বিভাজনের পরিকল্পনার প্রস্তাব গৃহীত হলো। এর লক্ষ্য ছিল প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের মধ্যেই আর একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠন। আরব দেশ সমূহ এই প্রস্তাব মানতে না চাওয়ায় শুরু হলো আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ। ইঙ্গ-মার্কিনী অর্থে ও অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত ইজরায়েল অনেকটা ক্ষমতাধর ছিল। অপরদিকে মার্কিনী তাঁবেদার কিছু আরব রাষ্ট্রের দোদুল্যমানতা ছিল। ফলে ইজরায়েল প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডের একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে ১৯৪৮ সালে একতরফা ভাবে ইজরায়েলকে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করল। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান তাকে স্বীকৃতি জানালেন। ব্রিটিশ সরকার ও সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া তাকে স্বীকৃতি জানালো। তারপর মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য বজায় রাখতে ইজরায়েলকে নানাভাবে বলীয়ান করে তোলা হলো।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধ পরবর্তী আরব-ইজরায়েল শান্তি চুক্তির পরেও ১৯৭০ পরবর্তী সময় থেকে ইজরায়েল তাদের আক্রমণের ধারা ও দখলদারিকে অব্যাহত রেখেছে। ১৯৮৭ সালে প্যালেস্তাইনের জনগণের “প্রথম ইন্তিফাদা”(গণঅভ্যুত্থান)-এর পরে ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী প্যালেস্তিনীয় জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠিত হবার পরও ২০০০ সাল পরবর্তী সময় থেকে ইজরায়েল গোটা প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে। শুধু প্যালেস্তিনীয় ভূখণ্ডকেই নয় তারা লেবাননের একটা অংশকেও তাদের দখলে রাখতে মরিয়া আক্রমণ চালিয়েছে। তাই প্যালেস্তাইনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহকে মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তাদেরকে দমন করার নামে সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে তারা প্যালেস্তাইন ও লেবাননের ওপর আক্রমণ সংগঠিত করেছে। আসলে জায়নবাদী ইজরায়েলী আধিপত্যবাদের লক্ষ্য হলো ইউফ্রেটিস থেকে নীলনদ, লোহিত সাগরের তীর থেকে তুর্কী সীমান্ত এই বিস্তীর্ণ এলাকা যা এক সময় অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন অন্তর্ভূক্ত ছিল তা দখলে এনে বৃহত্তর ইজরায়েল গঠন করা। প্যালেস্তাইনের অস্তিত্বকে কার্যত নস্যাৎ করা। এটা মার্কিনী পশ্চিম এশিয়া ভাবনারই অংশ।
মার্কিনীদের নতুন পশ্চিম এশিয়া ভাবনা
মার্কিনীদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা হলো ইজরায়েলকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে রেখে একটি নতুন পশ্চিম এশিয়া গড়ে তোলা। তাদের মদতে ১৯৪৮ হতে ১৯৬৭ পর্যন্ত ইজরায়েল প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডের পূর্ব জেরুজালেম, সেখ জারা, গাজা ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকার কিছুটা অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। ১৯৬৭ পরবর্তী পর্যায়েও সেই ইজরায়েলী দখলদারি অব্যাহত। প্যালেস্তাইন জনগণ নিজভূমিতে অবরুদ্ধ হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। প্যালেস্তাইনের ওপর ইজরায়েলী ধ্বংসলীলাকে সমর্থন করে মার্কিনী সাম্রাজ্যবাদ ২০০৬ সাল হতেই একে নতুন মধ্য প্রাচ্যের প্রসব যণ্ত্রণা  বলে ঘোষণা করেছে।
পশ্চিম এশিয়া সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনের এই নতুন ভাবনার কারণ মূলত চারটি। এক, জ্বালানি তেলের উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য স্থাপন। দুই, এই অঞ্চলের যে কোনও ধরনের উদারপন্থী, জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলির ধ্বংস সাধন। তিন, ঐ দেশগুলির শাসকেরা মার্কিনী বশ্যতা না মানলে তাদের উচ্ছেদ সাধন। চার, ইজরায়েলের জায়নবাদী শাসককুলকে রক্ষা করা যাতে ইজরায়েলের মাধ্যমে মার্কিনীরা তাদের নিয়ন্ত্রণ ঐ অঞ্চলে বজায় রাখতে পারে। ঐ অঞ্চলে ইরান, সিরিয়ার শাসকেরা এবং প্যালেস্তাইনের হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লা  সংগঠন তাদের বশ্যতা মানেনি। তাই মার্কিন আক্রমণের লক্ষ্য হলো ইরান, সিরিয়া ও প্যালেস্তাইন। ইতিমধ্যেই মার্কিনীরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে জেরুজালেমের পাশে ইন্টারন্যাশনাল টেরিটোরি বানিয়েছে।
হামাস সম্পর্কে কিছু কথা
‘হামাস’ কথাটির আরবি রূপ হল ‘হরকত-আল-মুকাওয়ামা-আল-ইসলামীয়া’—অর্থাৎ ‘‘ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন”। এই সংগঠনটির জন্মের মূলে আছে মিশরের সবচেয়ে প্রাচীন ইসলামিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড। এই সংগঠনটি ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে কাজ শুরু করে প্যালেস্তাইন এলাকায় মূলত গাজা ভূখণ্ডে এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের ধর্মীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং প্যালেস্তাইনের বুকে মুসলিম অধিকার পুনঃস্থাপন। ১৯৭৭ সাল থেকে সংগঠনটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুরু করে এবং ১৯৮৭ সালে হামাসকে রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে প্যালেস্তিনীয় জনগণের প্রথম ইন্তিফাদা বা জনঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। যদিও তখন আরাফত ও তাঁর দল আল-ফাতাহ-র নেতৃত্বে ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর থেকে হামাস নিজের জায়গা পেতে শুরু করে। অসলো চুক্তি প্যালেস্তিনীয় জনগণের মর্যাদাবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে– এই প্রচার তুলে হামাস নেতা হাব্বাসের নেতৃত্বে প্যালেস্তিনীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীকে জোটবদ্ধ করার কাজ শুরু হয় এবং পিএলও’র বিকল্প শক্তি হিসাবে নিজেদেরকে তুলে ধরার কাজ শুরু করে। ২০০৪ সালে আরাফতের মৃত্যুর পর পশ্চিমী ঘেঁষা নতুন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আব্বাস সরকারের দুর্নীতি ও আত্মসমর্পণের মনোভাব হামাসের জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ২০০৬ সালের নির্বাচনে গাজায় হামাস ব্যাপক আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু ইজরায়েল ও আমেরিকা মানতে পারেনি। ষড়যন্ত্র করে তারা হামাসকে উৎখাত করতে উঠে পড়ে লাগে। গাজা এলাকায় হামাস তার আধিপত্য ধরে রেখে সামাজিক পরিকাঠামো যথা হাসপাতাল, লাইব্রেরি, স্কুল গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। হামাস ইজরায়েলের এই জায়নবাদী সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে নিজেদেরকে প্যালেস্তিনীয় জনগণের বলিষ্ট প্রতিবাদী মঞ্চ রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর তাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া হামাসের গায়ে মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তকমা এঁটেছে। 
ভারতের অবস্থান 
ভারত প্রথম থেকেই প্যালেস্তিনীয় জনগণের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িযেছে। এক সময় ইজরায়েলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্কও ছিল না। পরে নব্য উদারীকরণ যুগে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি মার্কিন ঘেঁষা হয়ে পড়লে ভারতের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্কের শীতলতা কিছুটা কাটে। তবে প্যালেস্তিনীয় জনগণের সংগ্রামের প্রতি ভারত সমর্থন জানিয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার হওযার পর এই সরকার হিন্দুত্ববাদী ভাবনাকে মাথায় রেখে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের কাছ থেকে ঢালাও সমরাস্ত্র কিনছে। তাদের কৌশলগত মিত্র হতে হাত বাড়িয়েছে। এমনকি মোদী বন্ধু আদানি ইজরায়েলের হাইফা বন্দরের মালিকানা পেয়েছে। আর তাই ৭ অক্টোবর মোদী সরকার সরাসরি ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। পরে আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে কিছুটা ভারসাম্য রাখার মতো বিবৃতি দিয়েছে। 
স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠন 
প্যালেস্তাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠন খুবই জরুরী। পৃথক ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সাথে সাথে পৃথক প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টিও রাষ্ট্রসঙ্ঘে আলোচিত হয়। ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাবেও তা সন্নিবিষ্ট হয়। কিন্তু ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র গঠিত হলেও আজও পর্যন্ত প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্র গঠন হল না। নিজভূমে পরবাসী হয়ে তাদের বাস করতে হচ্ছে। মার্কিনী ও তাদের মিত্র ইংল্যান্ড ইহুদি রাষ্ট্র গঠনে যতখানি তৎপরতা দেখিয়েছিল প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনে ততখানি নির্লিপ্ত দেখাচ্ছে। আমেরিকা বাধা দিচ্ছে। এমনকি ২০১১ সালে প্যালেস্তাইনকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদস্য করার ব্যাপারেও তারা বিরোধিতা  করেছে। অপরদিকে হামাসকেও ইহুদি রাষ্ট্রের অবস্থান ও অস্তিত্বকে মেনে নিতে হবে। হামাস এই ইচ্ছা প্রকাশও করেছে।
ইজরায়েলের শিশুঘাতী, নারীঘাতী এই কুৎসিত বীভৎসতার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। দাবি তুলতে হবে সাম্রাজ্যবাদের পাহারাদার ইজরায়েল প্যালেস্তাইন থেকে হাত গোটাও। লেবানন থেকে হাত গোটাও। ৭৫ বছর ধরে প্যালেস্তাইনের জনগণ মরণপণ লড়াই জারি রেখেছেন। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য প্যালেস্তাইনের জনগণের লড়াইয়ের পাশে আমরা ছিলাম, আছি এবং থাকব।

Comments :0

Login to leave a comment