Jamuriya pollution

জামুরিয়ায় বাড়ছে দূষণ

রাজ্য জেলা

শীতের পারদ নামতেই জামুড়িয়া শিল্পতালুকে দূষণের মাত্রা চরম আকার নিয়েছে। শীতকালে আবহাওয়া শুকনো থাকার ফলে বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা যেমন বেড়েছে তেমনই জামুড়িয়ার স্পঞ্জ আয়রণ কারখানাগুলিতে দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (ইএসপি) না চালানোর অভিযোগ উঠছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের বায়ুর গুণমাণ সূচক ১৬০ থেকে ১৭৩ পর্যন্ত ঘোরাফেরা করছে। যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন জেলার  পরিবেশকর্মীরা।
২০০৩ সালে  ইকড়ায় জামুড়িয়া শিল্পতালুক গড়ে ওঠে। বর্তমানে ১৪ টি স্পঞ্জ আয়রণ কারখানা ও ৭ টি  বিদ্যুত কারখানা (ক্যাপটিভ) রয়েছে।  কারখানাগুলিতে  বিদ্যুতের খরচ ও ছাইয়ের পরিবহন খরচ বাঁচাতে দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বন্ধ রেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয় গ্রামবাসীদের।  জামুড়িয়ার কারখানা সংলগ্ন ইকড়া, চণ্ডীপুর, সার্থকপুর, বিজয়নগর, ধাসনা, দামোদরপুর, আখলপুর ও মণ্ডলপুরের একাংশ দূষণে জেরবার। এখানকার মানুষদের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি পেটের সমস্যা থেকে চোখের নানা  রোগ দেখা দিচ্ছে। শিল্পাঞ্চলের এক চিকিৎসক জানান, গত দশ বছরে এসব রোগীর সংখ্যা দশ গুণ বেড়েছে। সিলিকোসিস রোগ বাসা বাঁধছে।
এখানকার  গ্রামগুলিতে গাছের পাতা থেকে জলাশয় কালো ছাইয়ে ঢেকে গেছে। দূষণের জেরে চাষাবাদ প্রায় বন্ধ। ইকরা থেকে তপসী পর্যন্ত সিঙ্গারণ নদীর জলে স্পঞ্জ আয়রনগুলির বর্জ্য মিশছে। সেই জল ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বেকারদের কাজের দাবির সাথে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কারখানাগুলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে গত মে মাসে সিআইটিইউ, কৃষক সভা, ডিওয়াইএফআই, মহিলা সমিতি ডেপুটেশন দিয়েছিল। শ্রমিকনেতা মনোজ দত্ত, তাপস কবি, শমিত কবি, বুদ্ধদেব রজকের নেতৃত্বে কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখায়  স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তারা জানান, বিষাক্ত ধোঁয়াই নয়, জীবনধারণের অতি প্রয়োজনীয় জলও ওই কারখানা চুরি করছে। বর্তমান শাসক দলের সহযোগিতায় মাটির তলা থেকে জল তোলা শুরু করেছে কারখানাগুলো। ফলে জলস্তর কমে জল সংকট দেখা দিচ্ছে। কোন শিল্পাঞ্চলে কোন কোন শিল্প সংস্থা বায়ু ও জল দূষণ করছে ও দৈনিক কতখানি জল ব্যবহার করছে সেই তথ্য প্রকাশে আনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। দূষণে মানুষের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য কতটা নষ্ট হচ্ছে, সংস্থার দূষণের মাত্রা কতখানি তা নির্ধারণ করে শিল্প সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশিকা থাকলেও প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে কারখানাগুলি থেকে যথেচ্ছ ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে গ্রামবাসীরা জানান। বৃহত্তর পরিসরে  বনসৃজনের দায়িত্ব তো নেয়ই না বরং বনবিভাগের জমি হাতিয়ে নিতে চাইছে কয়েকটি কারখানা। জামুড়িয়ার প্রাক্তন বিধায়ক জাহানারা খান পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে ও সিঙ্গারণ নদী বাঁচানোর জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্য প্রশাসন নির্বিকার। ফলে কারখানা কর্তৃপক্ষও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই নেয়  না।  দূষণ নিয়ন্ত্রণে কারখানা  কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ডেপুটেশন দিলে দূষণ নিয়ন্ত্রণের  প্রতিশ্রুতি মিললেও কার্যত দূষণের থাবা থেকে মুক্ত হয়নি জামুড়িয়া শিল্পাঞ্চল।

Comments :0

Login to leave a comment