Nepal

নেপালে প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডই

আন্তর্জাতিক

 নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডরী রবিবার কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-মাওয়িস্ট সেন্টার (সিপিএন-এমসি) চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দহল ‘প্রচণ্ড’কে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। দেশের সংবিধানের ৭৬ নম্বর ধারার ২ অনুচ্ছেদ অনুসারে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করার বিবৃতি রবিবার রাতে কাঠমাণ্ডুতে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে প্রকাশিত হয়।
গত ২০ নভেম্বর নেপালে ২৭৫ টি আসনের সংসদ এবং ৭ টি প্রদেশের ৫৫০ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হয়। সরকার গঠনে গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩৮ টি আসন। কিন্তু নির্বাচনে কোনও দল গরিষ্ঠতা পায়নি। সরকার গঠন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে টালবাহানা চলতে থাকে। এর পর রাষ্ট্রপতি ভাণ্ডারী সংসদের যে কোনও প্রতিনিধিকে অন্য দল বা জোটের সমর্থনে পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। রবিবার বিকেল ৫টা প্রদত্ত সময়সীমা শেষ হচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই সিপিএন-এমসি নেতা প্রচণ্ড (৬৮) সরকার গঠনে এগিয়ে আসেন। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড তাঁর প্রতি কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেলিনিস্ট (সিপিএন-ইউএমএল) সহ কতগুলি ছোট দলের সমর্থন থাকার দাবি জানান। সিপিএন-ইউএমএল চেয়ারম্যান তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, রাষ্ট্রীয় স্বতন্ত্র পার্টি (আরএসপি) সভাপতি রবি লামিছানে, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি)’র প্রধান রাজেন্দ্র লিঙডেনকে সঙ্গে নিয়ে প্রচণ্ড রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে সরকার গঠন নিয়ে ভাণ্ডারীর সঙ্গে কথাও বলেন। রবিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে প্রচণ্ডকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রচণ্ড শপথগ্রহণ করবেন। রাতে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এই খবর জানানো হয়েছে।
নিজের দাবির সপক্ষে রাষ্ট্রপতিকে ১৬৫ জন সাংসদের সমর্থনের কথা জানান প্রচণ্ড। ২৭৫ আসনের সংসদের মধ্যে সিপিএন-ইউএমএল’র ৭৮, সিপিএন-এমসি’র ৩২, আরএসপি’র ২০, আরপিপি’র ১৪, জেএসপি’র ১২, জনমতের ৬ এবং নাগরিক উনমুক্তি পার্টি’র ৩ সাংসদ প্রচণ্ডের সঙ্গে রয়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধব নেপালের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফাইড সোস্যালিস্ট) ১০, লোকতান্ত্রিক সমাজবাদী পার্টি (এলএসপি) ৪, রাষ্ট্রীয় জনমোর্চা এবং নেপাল ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পিজেন্টস পার্টি যথাক্রমে ১ টি করে আসনে জয়লাভ করেছে।
সিপিএন-ইউএমএল এবং সিপিএন-এমসি’র মধ্যে বোঝাপড়া অনুসারে, প্রচণ্ড এবং ওলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ ভাগ করে নেবেন। ওই সময়কালে প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হবেন প্রচণ্ড। বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন, সিপিএন-ইউএমএল’র সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর পোখরেল। 
এনিয়ে তৃতীয়বার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বামপন্থী নেতা প্রচণ্ড। ১৯৫৪ সালের ১১ ডিসেম্বর পোখরার কাছে কাস্কি জেলার ধীকুরপোখরিতে তাঁর জন্ম। অতীতে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের সময় মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা প্রচণ্ড প্রায় ১৩ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে মাওবাদী সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব করেন তিনি।
নেপালে ২০০৬ সালে শান্তি চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে মাওবাদীরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসে। কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট)’র শীর্ষ নেতা হন প্রচণ্ড। সেই সঙ্গেই নেপালে অবসান ঘটে দশকব্যাপী সময় ধরে চলা মাওবাদী নৈরাজ্যেরও।
কাঠমাণ্ডুতে সম্প্রতি ওলি’র বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। এতে প্রচণ্ডকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় বলেই খবর। তার পর থেকেই নেপালী কংগ্রেসে প্রধান তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে প্রচণ্ড আলোচনার বিষয়বস্তুতে বদল আনেন। ভোটে সব থেকে বেশি ৮৯টি আসন পায় নেপালী কংগ্রেস। তাই প্রথম দফায় জোট সরকারে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রচণ্ডকে মেনে নিতে চাইছিলেন না দেউবা।
রবিবার সকালে শেষবার দেউবার বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করেন প্রচণ্ড। অবশ্য দেউবা নিজের অবস্থানে অবিচল থাকেন। অবশেষে দুপুরে নেপালী কংগ্রেস (এনসি) নেতৃত্বাধীন পাঁচ দলের জোট ভেঙে বেরিয়ে আসেন প্রচণ্ড।
রাজনৈতিক মহলের খবর, আলোচনার একটা পর্যায়ে প্রচণ্ডকে পাঁচ দলের জোটের প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে রাজি হন দেউবা। কিন্তু পরে নেপালী কংগ্রেসের তরফে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রীসভার কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দাবি করা হয়। সিপিএন-এমসি’কে প্রস্তাব করা হয় শুধুই সংসদের অধ্যক্ষের পদটি। প্রচণ্ড ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। সহযোগী দলগুলিকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভাণ্ডারীর কাছে জানান সরকার গঠনের দাবিও।
এদিকে নয়াদিল্লি থেকে খবরে প্রকাশ, রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর সময়ে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের উন্নতি হবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন মোদী।

 

Comments :0

Login to leave a comment