Rice mill scam

রাজ্যের চালের ভাঁড়ারে বিপুল ঘাটতি, কম ধান কেনার বহরে উদ্বেগ বাড়ছে খাদ্য দপ্তরে

রাজ্য

  ভাঁড়ারে যা চাল আছে তা দিয়ে মাসকাবার হওয়া মুশকিল। গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে ধান সংগ্রহে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আগামী বছরে রেশনের চাল নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে খাদ্য দপ্তরে।
সমস্যা বেশি রাজ্যের নিজস্ব রেশন নিয়েই। আরকেএসওয়াই ১ ও আরকেএসওয়াই ২ এই দুই রেশন কার্ডের চাল কীভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো যাবে সেটাই এখন খাদ্য দপ্তরের কাছে অন্যতম উদ্বেগের বিষয়।
রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশন কার্ডের জন্য চাল জমা পড়ে ‘স্টেট পুল’এ। একইভাবে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার জন্য ‘সেন্ট্রাল পুল’এ জমা রাখা থাকে চাল। রাজ্যের স্টেট পুল’এর ভাঁড়ারের হাল এখন এতই সঙ্গিন যে ধান সংগ্রহে নেমে যতটুকু ধান আসবে তার সিংহভাগই স্টেট পুল’এ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দপ্তর। 
কেন এই সিদ্ধান্ত?
খাদ্য দপ্তর সূত্রের খবর, ফি মাসে রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশনের জন্য মাসে ১লক্ষ ৪৬ হাজার টন চাল লাগে। কিন্তু স্টেট পুল’এর ভাঁড়ারে এই মুহূর্তে আছে মাত্র ১ লক্ষ ১০ হাজার টনের মতো চাল। ফলে এমনিতেই বিপুল ঘাটতি হয়ে আছে। এরপর ধান সংগ্রহে চলতি বছরে খারিফ মরশুমের সেরা বর্তমান সময়ে সংগ্রহের হাল রীতিমতো উদ্বেগজনক। মাত্র মাত্র ১৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পৌঁছাতে পেরেছে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর। কম ধান কেনার চাপের মধ্যেই রাজ্যের ভাঁড়ারের চালের তীব্র সঙ্কটে উদ্বিঘ্ন খাদ্য দপ্তর।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজ্যের খাদ্য দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পর তা রাইসমিল থেকে চাল হয়ে প্রথমে রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা যোজনার জন্য বরাদ্দ করা হবে। খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘ এখনও পর্যন্ত ১০ লক্ষ ৫২ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে।তারমধ্যে ৬ লক্ষের ওপর ধান ইতিমধ্যেই রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার জন্য বরাদ্দ করে দেওয়া হয়েছে।’’ সংগৃহীত ধানের ৬০ শতাংশ রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষার রেশন কার্ডের জন্য বরাদ্দ করে বাকি ৪ লক্ষ টন ধান পাঠানো হয়েছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশন কার্ডের জন্য। 
খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘  সিপিসি(সেন্ট্রালাইজড পারচেস সেন্টার)কে সেন্ট্রাল না, স্টেট পুল কোথায় যুক্ত হবে তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকদের হাতে। যাতে তারা রাজ্য ও কেন্দ্র কোন পুলে কত চাল আছে তা দেখার পাশাপাশি প্রয়োজন বুঝে ঠিক করবে।’’ 
রাজ্যের ভাঁড়ারে ধান এনে ফেললেই কাজ শেষ হবে না। তাই সেই ধান থেকে যাতে দ্রুত চাল তৈরি করে রাইসমিল ফেরত দেয় তারজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ ফি দিন ধান কেনার পর রাইসমিলে যাতে পৌঁছে যায় তারজন্য বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে রাইসমিলে যে ধান যাবে তা থেকে ১৫দিনের মধ্যে চাল তৈরি করে ফেরত পাঠাতে হবে।’’ আসলে রাজ্যের চালের ভাণ্ডারের সঙ্কটের কারণেই এই পথ নিতে হচ্ছে। 
আসলে চলতি ধান সংগ্রহের মরশুমে শুরু থেকেই হৌঁচট খেতে শুরু করে ধান কেনা। ফলে ভাঁড়ারের ঘাটতি শুধু রাজ্যের রেশনেই আটকে নেই। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার ৬ কোটি রেশন গ্রাহকদের সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে জেনে গত নভেম্বর মাসেই রাজ্যের খাদ্য দপ্তর নজিরবিহীনভাবে এফসিআই’কে চাল চেয়ে চিঠি দিয়ে রাখে। এফসিআই’এর জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে নভেম্বর মাসে রাজ্যের খাদ্য দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, চলতি বছরে দেরিতে বর্ষা আসায় ধান কাটার কাজে দেরি হচ্ছে। তারফলে গত বছর যে গতিতে সরকার ধান কিনতে পেরেছিল, এবার তা হচ্ছে না। যার পরিণতিতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার রেশনে চালের মজুত ভাণ্ডার অপর্যাপ্ত  থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 
নভেম্বর মাসেই এফসিআই’এর থেকে ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টন চাল চাওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ওই চাল দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের এনএফএসএ’র রেশন চালিয়ে নিতে পারবে রাজ্য। এফসিআই’র কাছ থেকে চালের নিশ্চয়তা মেলার পরও চলতি বছরের ধান থেকে রাজ্যের রেশন চালাতে এখন তাই উঠেপড়ে লেগেছে খাদ্য দপ্তর।

Comments :0

Login to leave a comment