STORY — SOURISH MISHRA — ANI — NATUNPATA — 26 APRIL 2025, 3rd YEAR

গল্প — সৌরীশ মিশ্র — অনি — নতুনপাতা — ২৬ এপ্রিল ২০২৫, বর্ষ

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  ANI  NATUNPATA  26 APRIL 2025 3rd YEAR

 

গল্পনতুনপাতা

অনি

 
সৌরীশ মিশ্র

 


বাড়ির বসার ঘরে বাবু হয়ে বসে টিভিতে খেলা দেখছিল অনি। আই পি এল-এর একটা ম্যাচ চলছে। দারুণ এক্সাইটিং হচ্ছে ম্যাচটা। ব্যাটাররা চার-ছয় মারছে ব'লে-ব'লে। মজা করে খেলাটা দেখছিল অনি। ঠিক তখনই হঠাৎই বেজে উঠল ওদের বাড়ির ল্যান্ডলাইন ফোনটা। পাশের ঘরে ছুটে গিয়ে ফোন রিসিভারটা তুলে কানে লাগায় অনি। তারপর বলে, "হ্যালো।"
"অনি?"
কুহু ঠাম্মির গলা যে এটা, বুঝতে মোটেই অসুবিধা হয় না অনির। সে তাই বলে, "হ্যাঁ কুহু ঠাম্মি, বলো।"
অনির কুহু ঠাম্মির বাড়ি অনিদের বাড়ির ছ'খানা বাড়ি বাদ দিয়ে যে একতলা বাড়িটা, সেটা। অনি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছে, কুহু ঠাম্মি একাই থাকেন ঐ বাড়িতে। বাবা-মায়ের কাছে শুনেছে ও, কেউ নেই ওনার। পাড়ায় সবার সঙ্গেই সখ্যতা থাকলেও অনিদের পরিবারের সঙ্গে সব চাইতে বেশি ঘনিষ্ঠ তিনি। অনির বাবা-মা আর অনিকে খুব ভালবাসেন।
"অনি, তোর বাবাকে একটু ফোনটা দে তো।" ফের বলেন কুহু ঠাম্মি।
"বাবা-মা কেউ তো নেই। আমার ছোটোঠাকুরদা অসুস্থ ছিল না, কাল ভাল হয়ে বাড়ি ফিরেছে নার্সিংহোম থেকে। বাবা-মা ছোটোঠাকুরদাকেই দেখতে গেছে। এই তো কিছুক্ষণ হোলো বেরোলো। ফিরতে আটটা-সাড়ে আটটা বেজে যাবে, বলে গেছে।"
"ও" ব'লে, একটু চুপ করে থাকেন কুহু ঠাম্মি। কি যেন ভাবেন। তারপর ফের বলতে থাকেন, "আচ্ছা অনি, আজ তুই বিকেলে পার্কে খেলতে গেছিলিস?"
"হ্যাঁ তো।"
"তা তুই খেয়াল করেছিলিস কি, পার্কে ঢোকার গেটটার পাশে যে ওষুধের দোকানটা আছে সেটা খোলা ছিল কি না?"
একটু খানিক ভাবে অনি। তারপরই বলে ওঠে, "হ্যাঁ ঠাম্মি, খোলা তো ছিল। কেন তোমার কোনো ওষুধ লাগবে?"
"হ্যাঁ রে। আজ দুপুর থেকেই পায়ের ব্যাথাটা ভীষণই বেড়েছে। হাঁটতে চলতেই পারছি না একেবারে। ঘরের মধ্যেই কোনোক্রমে হাঁটছি। দোকানে গিয়ে যে ওষুধটা আনবো, সেই অবস্থাই নেই। ফোন করেছিলাম ঐ দোকানটাতেও, যাতে ওষুধটা দিয়ে যায়। কতোবার ফোন করলাম। ফোনটা লাগছেই না। ল্যান্ডলাইন ফোন তো। ঝড়বৃষ্টি তো হোলো কাল। তার-টার ছিঁড়ে গেছে কিনা, কে জানে!  তাই, তোর বাবাকে বলতাম, ওষুধটা একটু এনে দিতে..."
"বাবা নেই তো কি আছে, আমি তো আছি।" ওর কুহু ঠাম্মিকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মাঝখানেই বলে ওঠে অনি। "তুমি প্রেসক্রিপসনটা বের করে রাখো, আমি ওষুধটা এনে দিচ্ছি তোমায়।"
"তুই খেলা দেখছিস। আবার যাবি?"
"খেলা দেখছি তো কি হয়েছে। কতক্ষণ আর লাগবে তোমায় ওষুধটা এনে দিতে। তারপর এসে খেলা দেখব। কিন্তু, তুমি কি করে জানলে ঠাম্মি, আমি খেলা দেখছি?" অবাক হয় অনি।
"যা জোড়ে টিভির সাউন্ড দিয়েছিস! ফোনে, টিভিতে যে খেলা চলছে, সেই সাউন্ড তো পরিস্কার পাচ্ছি।"
"তুমি একদম ডিটেকটিভের মতোন ঠাম্মি।"
পায়ে ব্যাথা, কষ্ট হচ্ছে, তবু অনির কথা শুনে হেসে ফেললেন কুহু ঠাম্মি।
"ঠাম্মি, তুমি প্রেসক্রিপসনটা বের করে রাখো। আমি এক্ষুনি আসছি তোমার বাড়ি ওটা নিতে।" ফের বলে ওঠে অনি।
"ঠিক আছে, তুই আয়। আমি প্রেসক্রিপসন, টাকা সব বের করে রাখছি। তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই, তুই আয় ধীরেসুস্থে।"
ফোনটা কেটে যায়।
ফোনের রিসিভারটা ক্রেডেলে রেখে, বসার ঘরে আসে অনি। টিভি বন্ধ করে। তারপর, ঘরের লাইট, ফ্যান।
এরপরে চটপট বাড়ির মেন-দরজার চাবিটা নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে মেন-দরজায় তালা লাগায়। তারপর, রাস্তায় নেমে দ্রুত সে পা বাড়ায় কুহু ঠাম্মির বাড়ির দিকে। তার মাথায় এখন একটি কথাই ঘুরছে কেবল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কুহু ঠাম্মিকে ওষুধটা এনে দিতে হবে। কুহু ঠাম্মি যে ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে খুব।


 

Comments :0

Login to leave a comment