Sitaram Yechuri

মোদী বিধি ভাঙলেও নিশ্চুপ থাকে কমিশন, হায়দরাবাদে ইয়েচুরি

জাতীয়

 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনী প্রচারে ‘জয় বজরঙ বালী’ বলে আওয়াজ তুললেও নির্বাচন কমিশন নিশ্চুপ থাকে কেন বলে গুরুতর প্রশ্ন ফের তুললেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শনিবার হায়দরাবাদে নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি অভিযোগ করেন, ‘অথচ বিরোধী নেতারা কিছু বললেই অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে কমিশন।’ তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘দেশের সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিজেপি’কে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হবে। নাহলে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই রক্ষা করা যাবে না।’
কর্নাটক নির্বাচনে প্রচারের শেষ প্রহরে উগ্র হিন্দুত্বের জিগির তুলতে মোদী নিয়ম করে ভোটারদের ‘জয় বজরঙ বালী’ বলে ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। কর্নাটকবাসী অবশ্য তাঁর সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে জয়ী করেন কংগ্রেসকে। এদিন ইয়েচুরি সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করেন, ‘‘ওই সময় প্রচারে মোদী টানা ‘জয় বজরঙ বালী’ আওয়াজ তুলে নির্বাচনী বিধি ভাঙলেও কমিশন কোনও রকম ব্যবস্থাই নেয়নি। অথচ বিরোধী নেতারা সামান্য কিছু অন্য ধরনের কথা বললেই তৎপর হয়ে পড়ে কমিশন এবং সঙ্গে সঙ্গে নোটিস পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে দেয়।’’
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল নিয়েও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করেন ইয়েচুরি। তিনি মনে করেন, ‘যে পাঁচ রাজ্যে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা প্রবল। মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি’র সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে একমাত্র রাজস্থানে।’ তবে তাঁর অভিমত, ‘দিনে দিনে বিজেপি বিরোধীর সংখ্যা বাড়ছে। মোদী সরকার দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি ৯ বছরের রাজত্বকালে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ভালোরকম প্রভাবও পড়েছে বিজেপি’র ভোটব্যাঙ্কে। তেলেঙ্গানার পাশাপাশি অন্য রাজ্যগুলিতে এইসব জ্বলন্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিজেপি’কে। মানুষের কাছে এখন কোনও বিশ্বাসযোগ্যতাই নেই মোদী সরকারের।’
শুধু তেলেঙ্গানাই নয়, সামগ্রিকভাবেই বিজেপি’কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার স্বার্থে কংগ্রেসকে সমর্থন জানাবে সিপিআই(এম) বলে এদিন বলেছেন ইয়েচুরি। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে থাকলেও তেলেঙ্গানা সহ বাকি রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও ধরনের নির্বাচনী সমঝোতা হয়নি সিপিআই(এম)’র। এর জন্য তিনি দায়ী করেন কংগ্রেসকেই। সমঝোতা কেন হলো না, এব্যাপারে কংগ্রেসকেই প্রশ্ন করতে বলেন ইয়েচুরি। তবে তিনি এও জানিয়ে দেন, কোনওভাবে বিজেপি’র সুবিধা হয়ে যায় এমন কাজ করবে না সিপিআই(এম)। তাই ওই দলকে হারাতে তেলেঙ্গানা সহ বাকি রাজ্যে যেখানে পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না, এমন আসনগুলিতে কংগ্রেসের পাশে থাকবেন তাঁরা। 
তেলেঙ্গানায় ত্রিশঙ্কু ফল হলে শাসক বিআরএস সরাসরি বিজেপি’র হাত ধরবে বলে এদিন জানান সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক। একারণেই দু’দলের বিরুদ্ধেই পার্টি জোরালো প্রচার চালাচ্ছে বলে জানান তিনি। বিজেপি’র চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইয়েচুরি বলেন, ‘না জিতেও সরকার গড়ার ইতিহাস আছে বিজেপি’র।’ বিধায়ক ভাঙিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে সরকার গঠনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ মধ্য প্রদেশ এবং তার আগে কর্নাটক। তাই তিনি বলেন, ‘কিছু করতে না পারলে ওরা ইডি অথবা সিবিআই ব্যবহার করে ভয় দেখায় বিরোধীদের।’
শেষে মোদী সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে ইয়েচুরি অভিযোগ করেন, ‘উনি হিংসাদীর্ণ মণিপুরে যাওয়ার সময় পাননি এতদিনেও। অথচ আমেদাবাদে ভারত-অস্ট্রেলিয়া একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ দেখতে মাঠে গিয়ে হাজির হন তিনি!’ কর্পোরেটদের থেকে অর্থ সংগ্রহের স্বার্থেই বৃহৎ পুঁজিপতিদের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছে মোদী সরকার বলেও অভিযোগ করেন ইয়েচুরি।
 

Comments :0

Login to leave a comment