বিশ্বজিৎ দাস, গুয়াহাটি
টাকার বিছানায় ঘুমাচ্ছেন বিজেপি’র শরিক দলের এক নেতা। বুধবার আসামে এমন এক দৃশ্য ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের সময় যখন দেশজুড়ে আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ হয়েছে, তখন শরিক দলের নেতা টাকা বিছিয়ে ঘুমানোর ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। তবে দুর্নীতি দমনের নামে বিরোধী নেতাদের বাড়িতে ইডি, সিবিআই পাঠিয়ে যখন একেরপর এক নেতাকে গ্রেপ্তার করছে মোদী সরকার, তখন আসামে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির বাড়িতে এখনও ইডি, সিবিআই পাঠায়নি বিজেপি। পুলিশ তাঁকে এখনও জেরাও করেনি।
টাকার বিছানায় ঘুমানো ব্যক্তি হচ্ছেন, বিজেপি’র শরিক দল ‘ইউনাইটেড পিপলস পার্টি অব লিবারেল’ সংক্ষেপে ইউপিপিএল দলের শীর্ষ নেতা বেঞ্জামিন বসুমাতারি। ইউপিপিএল দল বর্তমানে রাজ্যের বোরো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল (বিটিসি) পরিচালনা করছে। তাদের ছ’জন বিধায়ক রয়েছেন। তাঁরা রাজ্যের বিজেপি সরকারকে সমর্থন জানিয়েছেন। বেঞ্জামিন বসুমাতারি বিটিসি'র অন্তর্ভুক্ত ওদালগুড়ি জেলার ভৈরাগুড়ি গ্রামের ‘ভিলেজ কাউন্সিল ডেভেলপমেন্ট কমিটি’র ইউপিপিএল টিকিটে নির্বাচিত সভাপতি। যা একটি গ্রাম পঞ্চায়েত ক্ষমতার সমান। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বেঞ্জামিন খালি গায়ে একটি বিছানায় শুয়ে আছেন। আর তাঁর গোটা শরীরে ও বিছানায় পাঁচশো টাকার নোট ছড়িয়ে আছে। সম্প্রতি, বেঞ্জামিনের বিরুদ্ধে সরকারি আবাসের টাকা ও রেগার টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। মনে করা হচ্ছে, গরিব মানুষদের টাকা আত্মসাৎ করে ওই টাকার উপর ঘুমোচ্ছেন তিনি।
ছবিটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মুখ রক্ষা করতে ইউপিপিএল দলের প্রধান তথা বিটিসি'র মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য প্রমোদ বোরো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে দাবি করেন, বেঞ্জামিন বসুমাতারিকে গত ৫ জানুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। টাকার বিছানায় ঘুমানোর ছবি ভাইরাল হয়েছে বুধবার। আর তিন মাস আগে তাঁকে বহিষ্কার করা হলো কী কারণে? এর কোনও ব্যাখ্যা দেননি তিনি। আবার তুমুল বিতর্কের মধ্যে এদিন বিকেলে সংবাদ মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বেঞ্জামিন দাবি করেন, এই ছবি পাঁচ বছর আগের। ওইদিন তিনি একটি আসরে প্রচুর মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে ঘুমিয়েছিলেন। তখন তাঁর এক বন্ধু নাকি তাঁর গায়ে টাকা ছড়িয়ে ছবি তুলেছে। পাঁচ বছর পর লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই ছবি ভাইরাল হওয়ার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র দেখছেন তিনি। তবে শরিক দলের নেতার এই ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। বাল্য বিবাহ কিংবা সুদের কারবারি অভিযোগ তুলে যখন পাইকারি হারে গ্রেপ্তার করছে হিমন্তবিশ্বের পুলিশ, তখন শরিক দলের নেতার টাকার বিছানায় ঘুমানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, পুলিশ তাঁকে জেরা পর্যন্ত করছে না।
কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি ও তাদের শরিক মিলে দেশে লুটের রাজত্ব যে কায়েম করেছে, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো। বিজেপি বেছে বেছে এমন দলকে তাদের শরিক করেছে, যাঁরা বিজেপি’র মতো লুট করছে।
Comments :0