CPI-M Murshidabad District Conference

তৃণমূল-বিজেপিকে হারিয়েই দেশে শক্তিশালী করতে হবে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে, মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলনে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য

রাজ্য জেলা

শনিবার জঙ্গীপুরে সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা ২৪তম সম্মেলন উদ্বোধন করছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। ছবি: অনির্বাণ দে

চন্দন দাস: রঘুনাথগঞ্জ

জেলাটির ১২৫ কিমি বাংলাদেশের সীমান্তে। ওপারে কোথাও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কোথাও রাজশাহী সহ ওপার বাংলার আরও কিছু অঞ্চল। 
সেই জেলায়, সেই ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদে, সিপিআই(এম)-র ২৪তম সম্মেলন শুরু হয়েছে শনিবার। সম্মেলনে প্রতিনিধিরা আলোচনার সময় তুলে ধরেছেন নদীবেষ্টিত সীমান্ত লাগোয়া সেই এলাকায় তাঁদের আবাদি জমিতে ফসল ফলাতে গিয়ে কীভাবে বিএসএফ-র অত্যাচারের মুখে পড়তে হয়। 
তবু সেই ফসল দেশের, রাজ্যের মোট উৎপাদনের হিসেবে যুক্ত হয়! 
বিপন্নতা আরও আছে। 
পরিযায়ী শ্রমিক মুর্শিদাবাদে অনেক। সপরিবারে কাজের খোঁজে মানুষ চলে যান। কাজ নেই খেতে। শিল্প নেই জেলায়। পরিযায়ী কয়েক লক্ষ সেই শ্রমজীবীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে পার্টি। সেই ক্ষেত্রে সমস্যা নানারকম। সেই একই ভূখণ্ডে প্রতিদিন কৃষকদের ফসলের দামের দাবিতে সংগ্রাম, খেতমজুরের মজুরি বৃদ্ধির লড়াইয়ের মাঝে হাজির হচ্ছে বিজেপি, আরএসএস সহ বিভিন্ন ধর্মের নামে বিভাজনের শক্তির বিষাক্ত প্রচার। বিভিন্ন ব্লক থেকে আসা এরিয়া কমিটির প্রতিনিধিরা সেই অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন আলোচনায়। অনেকেই বলেছেন, “কোন না কোন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রচার চালাচ্ছে। আমাদের নিত্যনতুন প্রশ্নের জবাব নিয়ে যেতে হচ্ছে।”
তারই মাঝে আছে আরও এক মারাত্মক বিপদ। তৃণমূল-পুলিশ-প্রশাসন। “তৃণমূল একা পারছে না। প্রশাসন এবং পুলিশকে নিয়ে ওদের চক্র। আমরা পঞ্চায়েত কিংবা লোকসভা নির্বাচনে ওদের সন্ত্রাস ঠেকিয়ে দিলাম। মানুষ আমাদের পাশে রইলেন। কিন্তু তারপর ওরা এলো পুলিশ নিয়ে। মামলা করছে। প্রশাসনের সাহায্যে ভোট লুট করছে।” 
আর এই সব সঙ্কটের মুখে এগিয়ে চলার পথ 
অনেকটাই প্রকাশিত হয়েছিল সকালে, সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে। সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলার ২৪ তম সম্মেলনের এদিন উদ্বোধন করেছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। আন্তর্জাতিক, জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা পর্যালোচনা করে তিনি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে আমাদের কঠিন লড়াই। এক ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যের শক্তি, যারা গণতন্ত্র মানে না। চরম স্বৈরাচারী শক্তি। দুর্নীতিগ্রস্ত শক্তি। তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে তৃণমূল এবং বিজেপির স্বার্থে ভিন্নতা নেই। বিজেপি চায় দেশের মেহনতি মানুষের পার্টিকে কীভাবে দুর্বল, অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়া যায়। তৃণমূলের স্বার্থও তাই। তাই ওরা আমাদের বিরুদ্ধে বাইনারির রাজনীতি করছে। এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বামপন্থী শক্তির বিকাশের লড়াই-ই আজকের পশ্চিমবঙ্গের বুকে শ্রেণিসংগ্রামের একটি রূপ।” 
একদিকে পৃথিবীতে দক্ষিণপন্থার প্রতাপ, অক্সফামের রিপোর্ট দেখাচ্ছে ভারত সহ পৃথিবীতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে মারাত্মকভাবে। অন্যদিকে আন্দোলনমুখী মানুষের ঐক্য ভাঙতে ধর্মের নামে, জাতের নামে সেই লড়াই ভাঙার চেষ্টা চলছে শাসক শ্রেণিগুলির পক্ষ থেকে। এই পরিস্থিতিকে বিশদে ব্যাখ্যা করেন করেন  শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “কমিউনিস্টরা সবসময় নতুন রাস্তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। যদি মনে হয় পুরনো পথে পুরোপুরি হচ্ছে না, তবে নতুন রাস্তা বের করতে হবে। কমিউনিস্টরা তাই করে। সেই সৃজনশীলতা আজকের দিনে বড়ো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পুরনো পদ্ধতি সব ক্ষেত্রে যদি না চলে, তবে নতুন পদ্ধতি খুঁজতে হবে। এলাকার বৈশিষ্ট্যর কথা মাথায় রেখে মানুষের আরও কাছে যাওয়ার পদ্ধতি খুঁজতে হবে।”
ভট্টাচার্য আরও বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষ চাইছেন। প্রতি ক্ষেত্রের মানুষ চাইছেন। নাহলে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় এত বড় আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে? তাই একদিকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে পরিবেশ, পরিস্থিতি বিবেচনা করে।”
ভট্টাচার্য আহবান জানান,”এই পরিস্থিতিতে আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলার মাটিতে তৃণমূল-বিজেপিকে হারাতে হবে। তার জন্য আমরা চাইছি বাম শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে আমরা চূড়ান্ত করবো বাম গণতান্ত্রিক শক্তির বিকল্প কী, কর্মসূচি কী। ওই বিকল্পের ভিত্তিতে এগবো। তার ভিত্তিতে বাংলার মাটিতে তৃণমূল-বিজেপিকে পরাস্ত করা আমাদের দায়িত্ব।”
এদিন সম্মেলনে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেছেন পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলার সম্পাদক জামির মোল্লা। পরিযায়ী শ্রমিক, বিড়ি শ্রমিক সহ শ্রমজীবী মানুষের সমস্যা এবং তার ভিত্তিতে যে আন্দোলন হয়েছে তাকে আরও বিকশিত করার উপর তিনি জোর দেন। 
এদিন পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ নেত্রী শ্বেতা চন্দ্র। 
তার আগে একটি দীর্ঘ মিছিল মশাল বহন করে আনে। শহীদ বেদীর সামনে সেই মশাল পার্টি নেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য তুলে দেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের হাতে। 
শ্বেতা চন্দ্র ছাড়াও শহীদ বেদীতে মালা দেন পার্টিনেতা রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, আভাস রায়চৌধুরী, সোমনাথ ভট্টাচার্য, মেঘলাল শেখ, গৌতম ঘোষ, পরেশ পাল, প্রতীক উর রহমান, বদরুদ্দোজা খান, সেখ হাসিনা, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সোমনাথ সিংহ, জামীর মোল্লা প্রমুখ।
সম্মেলন হচ্ছে রঘুনাগঞ্জে। এলাকা নামাঙ্কিত হয়েছে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর হিসাবে। রবীন্দ্র ভবনে সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলন মঞ্চের নাম হয়েছে কমরেড শেখর সাহা এবং কমরেড জোহাক আলি মঞ্চ। 
শুরু হয় ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান পরিবেশন করে। সম্মেলন পরিচালনার জন্য বদরুদ্দোজা খান, পল্টন হাঁসদা, মর্জিনা বেগম, আবু বাক্কার, সচ্চিদানন্দ কান্ডারি, দিব্যশঙ্কর শুক্লকে নিয়ে সভাপতিমন্ডলী গঠিত হয়েছে। এদিন শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন আবু বাক্কার। সম্মেলনে উপস্থিত আছেন প্রবীন
নৃপেন চৌধুরী, শ্বেতা চন্দ্র এবং তুষার দে প্রমুখ। 

Comments :0

Login to leave a comment