Supreme court on central force

সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল রাজ্য, ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে

জাতীয় রাজ্য

সুপ্রিম কোর্টে জোরালো ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আপত্তি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাইকোর্ট এ বিষয়ে ১৩ জুন এবং ১৫ জুন যে রায় দিয়েছিল তা বহাল রইল। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেই একসঙ্গে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিল রাজ্য সরকার ও কমিশন। মঙ্গলবারের পরে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠানো ছাড়া কমিশন ও রাজ্য সরকারের আর কোনো উপায় রইল না। যদিও আদালতের রায়ের বাধ্যতাকে স্বীকার করেও নামমাত্র বাহিনীর জন্যই আবেদন করছে রাজ্য সরকার। রায় মানা হলো অথচ নেহাতই প্রতীকী, এই পথেই এগচ্ছে রাজ্য সরকার। 
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শিবজ্ঞানম ও উদয় কুমারের ডিভিসন বেঞ্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার কথা বিবেচনা করার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। এমনকি আদালতে স্পর্শকাতর বুথের তালিকাও দেয়নি। এরই ভিত্তিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠানোর নির্দেশও দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার এবং কমিশন। শীর্ষ আদালতে বিচারপতি বিভি নাগরত্ন ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মঙ্গলবার শুনানির পরে শীর্ষ আদালত বলেছে, হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধে করতে চেয়েই ওই রায় দিয়েছে। এক দিনে বিরাট সংখ্যক বুথে ভোটগ্রহণ হবে। সে কথা মাথায় রেখেই হাইকোর্টের এই রায়। একে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ বলা চলে না। সুতরাং এই রায়ের বিরুদ্ধে বিশেষ লিভ পিটিশন খারিজ করা হলো। এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজ্যে ভোটের প্রক্রিয়া মোটেই অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে না। 
শুনানির সময়ে বিচারপতি নাগরত্ন কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, কমিশন যদি অবাধ নির্বাচন করতে চায় তাহলে কোথা থেকে বাহিনী আসছে তা নিয়ে কমিশনের আপত্তি কীসের? রাজ্য সরকারের আইনজীবী সিদ্ধার্থ আগরওয়াল বলেন, হাইকোর্ট সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছে যেন গোটা রাজ্যই স্পর্শকাতর, যেন রাজ্য পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অক্ষম। ৮ জুলাই নির্বাচন অথচ হাইকোর্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছে। বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, রাজ্য সরকার অতীতেও অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ চেয়েছে। তার অর্থ রাজ্যে যে বাহিনীর ঘাটতি আছে তা স্বীকার করা হচ্ছে। হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের খরচ কেন্দ্রকেই দিতে বলেছে। নির্বাচন হিংসার লাইসেন্স হতে পারে না। হাইকোর্ট অতীতে হিংসার নজির দেখেছে। লোকে যদি মনোনয়ন দিতেই না পারে, মনোনয়ন দিতে গিয়ে খুন হয়ে যায় তাহলে অবাধ নির্বাচন হলো কী করে?  
কমিশনের পক্ষ থেকে আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা বলেন, হাইকোর্ট কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে বলেছে। কমিশন তা পারে না। রাজ্য সরকারকে বলতে পারে। তাছাড়া সব জেলায় মোতায়েন করার অর্থ হয় না। যেখানে দরকার কমিশন তা মূল্যায়ন করবে। এরপরে অরোরা কমিশনের তরফ থেকে জানান, স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা মাত্র ১৮৯! রাজ্যে মোট ৬১ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে। এবারেও বিচারপতিরা তাঁকে বলেন, নিরাপত্তা বাড়লে কমিশনের অসুবিধা কী? রাজ্যের হোক, পার্শ্ববর্তী রাজ্য হোক, কেন্দ্র থেকে আসুক এ নিয়ে কমিশনের উদ্বেগ কেন? রাজ্যের অতীত নজির দেখে এবং বাস্তবে যা ঘটছে তার ভিত্তিতে হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছে। কমিশনের সুবিধাই হবার কথা। 
রাজ্যের আইনজীবী আগরওয়াল আরো বলেন, হাইকোর্ট বাহিনীর অপ্রতুলতা নিয়ে বলেনি। কোথা থেকে বাহিনী আসবে, তা নিয়েই বেশি চিন্তিত থেকেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সবার ওপরে ঠাঁই দিয়েছে। হাইকোর্টের রায় কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গ আধা সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। শীর্ষ আদালত এই যুক্তিকেও মান্যতা দেয়নি। 
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির পক্ষে আইনজীবী বিবেক তাঙ্খা বলেন, আমরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবি করে চিঠি লিখেছি।

Comments :0

Login to leave a comment