পূজা বোস ও অরিজিৎ মন্ডল
সংযুক্ত কিসান মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমুহের আহ্বানে শ্রমিক-কৃষক সমাবেশ সংগঠিত হলো কলকাতায়। বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিক কৃষক কর্মচারী খেতমজুররা এদিন সমবেত হন ধর্মতলার রানী রাসমণি রোডে। শ্রমকোড বাতিল কর, ১০০ দিনের কাজ চালু কর, কৃষকের ফসলের সঠিক দাম, ক্ষেত মজুর ও শ্রমিকদের সঠিক মজুরি, মোদী সরকারের প্রতারনামুলক নীতি বন্ধ কর এই দাবি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ চলে সমাবেশ। ২৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের ৫ বছর পুর্ণ হয়েছে। ২০২১ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে কৃষি বিল বাতিল করতে বাধ্য হয় মোদী সরকার।
এদিন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার আহ্বায়ক অমল হালদার, সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি অনাদি সাহু, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম,সারা ভারত খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবী ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক পরেশ পাল, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
তুষার ঘোষ বলেন, "দেশ ও রাজ্যে কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক রাজ কায়েম হয়েছে। মোদী ধর্মের ধ্বজা রাম মন্দিরের উপর উত্তোলন করলেন। বললেন ৪৭ সালের মধ্যে রাম রাজ্ত্ব চালু করবেন। সাম্প্রদায়িক শক্তি পরীক্ষাগার হিসেবে বেছে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে তা দেখতেই পাচ্ছি। রাম রাজত্ত্ব মানে মানুষ বোঝেন শান্তির রাজত্ব, প্রজাদের স্বার্থে রাজার নীতি। কিন্তু কৃষকের জন্য মোদী যে তিনটি কৃষি কালাআইন চালু করলেন দেখেই মোদির রাম রাজত্ব সংজ্ঞা বোঝা যাচ্ছে।
কৃষি সংশোধনী আইন নিয়ে এসে উনি কৃষকদের হাত থেকে জমি নিয়ে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিলেন। তাকে কৃষকরা ঠেকিয়াছিলো।"
তিনি আরও বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ কে সাম্প্রদায়িক শক্তি পরীক্ষাগার হিসেবে বেছে নিয়েছে। এজন্য রাজ্যের ৪ লক্ষ্য কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল। পশ্চিমবঙ্গের রেগার কাজ প্রায় ৩ বছরের জন্য বন্ধ। দিদির সরকার চোর সরকার। বললেন রেগা তুলে দাও। দুই সরকারের ঠেলায় রেগা না থাকায় ২৩ লক্ষ মানুষ বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারপর ভয় দেখাও, এনআরসি ভয় দেখাও, এসআইআর'র ভয় দেখাও। তাই রাজ্যে নতুন করে সাম্প্রদায়িকতার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। এখানে বিভেদের জায়গা নেই। রেগা আবার চালু করতে হবে এই দাবি সহ আরও কয়েটি দাবি নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার ডাকে আগামী ২৩ ডিসেম্বর রাজভবন অভিযান হবে। কৃষক ক্ষেতমজুরদের মনোভাব হবে ডাইরেক্ট অ্যাকশন। জনগণকে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নিতে হবে। আমাদেরও কৃষক- শ্রমিক সংগঠন গুলিকেও সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নিতে হবে।"
পরেশ পাল বলেন, "২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ সময় ৫০০ বেশি সংগঠন মিলে দিল্লির প্রান্তর অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। সেদিন মোদী সরকার মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপরেও বর্তমানে কৃষকদের সাথে প্রতারনা অব্যাহত রেখেছেন মোদী সরকার। সরকার ফসলের সঠিক দাম দিচ্ছে না। ২০১৪ সালে মোদী বলেছিলেন কৃষকের স্বার্থের নিশ্চয়তা দেবেন। তবে সেই নিশ্চয়তা আইন তিনি আজও চালু করেননি। দেশ কৃষি-কৃষকের আর নেই। কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কৃষিকে। আর এই ব্যবস্থা করেছে সরকারই।
এরাজ্যে কৃষক অভাবের মধ্যে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। দিদিমনি বলছে কৃষক ভালো আছে। কিন্তু, সরকার ধান কিনছেনা। কিনলেও সঠিক দাম দিচ্ছে না। কৃষক তাহলে যাবে কোথায় ? দেশের কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। প্রত্যেকদিন প্রায় ৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার জানতে চায়না কৃষক কেমন আছে। সরকার কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করছেন না। বিদেশী কর্পোরেট-আদানী রাইস মিল কিনে নিচ্ছে। সরকার জানতেও চায়না কেমন আছে কৃষকরা। সব কিছুর পরেও সরকার নিশ্চুপ,নির্বিকার। সেদিনের দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন মোদী সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করেছিল। এবার কৃষক- শ্রমিকদের ঐক্যের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকেও পিছু হতে বাধ্য করতে হবে।"
Comments :0