লব মুখার্জী
উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিএএ, এনআরসি করার কথা বলছে কেন্দ্রীয় সরকার। মিথ্যা বিভ্রান্তি কর জিগির তুলে উদ্বাস্তুদের নিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চাইছে বিজেপি।
ইউসিআরসি রাজ্য উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সুমিত দে রবিবার সোদপুরে সংগঠনের রাজ্য সাংগঠনিক সাধারণ সভার প্রকাশ্য সমাবেশে একথা বলেন। ভোটার কার্ড , মাধ্যমিক থেকে শুরু করে অন্যান্য পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, সরকারি চাকরি সহ কর্মস্থলের পরিচয় পত্র , ব্যাঙ্কের বই থাকা উদ্বাস্তুরা দেশের নাগরিক না হলে দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাদের ভোটে নির্বাচিত হলেন? এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাংসদ থাকাকালীন সময়ে অনুপ্রবেশকারী আক্ষা দিয়ে উদ্বাস্তুদের বিপাকে ফেলতে লোকসভাতে হৈচৈ করেছিলেন। কাশ্মীর সমস্যার বিস্তারিত কথা উল্লেখ করে , কাশ্মীরের মানুষ কি ভাবে শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতা বাদের বিরুদ্ধে থেকে ভারতবর্ষের মধ্যে কাশ্মীরকে রাখার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন সেকথা তুলে ধরেন সুমিত দে।
নেপাল হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও সেখানে দাঙ্গা হচ্ছে কেন এই প্রশ্ন তুলে ধরে তিনি বলেন, আসলে সম্প্রদায়িকতা মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়।
দেশভাগের পরে পশ্চিম বাংলাতে লাখ লাখ উদ্বাস্তুদের ঢল এবং তাদের অসহায়তার করুণ অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে, বামপন্থীরা সেই সময়ে ও পরবর্তী কালে রাজ্যের সরকারে এসে কিভাবে উদ্বাস্তুদের পক্ষে থেকেছে সেকথা বর্ণনা করেন সুমিত দে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক আদর্শ থেকেই বামপন্থীরা উদ্বাস্তুদের পক্ষে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে।
সুমিত দে ছাড়াও প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রেখা গোস্বামী, ইউসিআরসি রাজ্য সম্পাদক মধূ দত্ত, অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি দুলাল চক্রবর্তী ও সম্পাদক অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সভাপতি ছিলেন জীবন ভট্টাচার্য। সোদপুর স্টেশনের ১ নং প্লাটফর্ম সংলগ্ন স্থানে সমাবেশটি হয়।
রেখা গোস্বামী বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া কাউকেই উদ্বাস্তু করা চলবেনা এটা রাষ্ট্র সঙ্ঘের সিদ্ধান্ত। ভারতবর্ষে ও বর্তমান বিশ্বে যেভাবে রাষ্ট্র সঙ্ঘের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উদ্বাস্তু সৃষ্টি করা হচ্ছে সে কথা বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতোই রাজ্যের তৃণমূল সরকার কর্পোরেটদের হাতে জমি তুলে দিতে নতুন করে উদ্বাস্তু তৈরি করতে চাইছে। শিল্পের উপযোগী , জলপথ সড়ক পথ ও আকাশ পথের সাথে সংযোগ থাকা সত্ত্বেও বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের শিল্প ছারখার করে উদ্বাস্তুদের কি ভাবে বেকারত্বের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সেকথা তুলে ধরে রেখা গোস্বামী বলেন, বিদেশি পুঁজির কাছে দেশকে বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রামকে রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করে শোষন কায়েম করছে একথা উল্লেখ করে রেখা গোস্বামী বলেন, সম্প্রদায় দিয়ে পরিচয় সৃষ্টি করতে চাইছে বিজেপি। মমতা ব্যানার্জি তাকে সায় দিতে গীতা পাঠের পাল্টার নামে করছে চন্ডীপাঠ। অপরিকল্পিত এবং চাকচিক্যের নীলসাদা উন্নয়নে কিভাবে সমাজকে ভয়ঙ্করতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সেকথা তুলে ধরেন তিনি।
রেখা গোস্বামী বলেন, দেশ ভাগের পরে পশ্চিম বাংলার উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতির জন্যে অনেক লড়াই করতে হয়েছে কিন্তু উদ্বাস্তুদের একটা অংশ আজও স্বীকৃতি পায়নি।
উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ হলে পুনর্বাসন দেওয়ার দাবি জানিয়ে মধূ দত্ত বলেন, উন্নয়নের কাজে যদি উচ্ছেদ করতে হয়, যাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সর্বাগ্রে তাঁদের সাথে আলোচনা করতে হবে । তিনি বলেন , রাজ্যের ১৮০০ কলোনির স্বীকৃতি এবং দলিল , পরচা পেতে হয়রানির বিরুদ্ধে আন্দোলন বৃদ্ধি করা হবে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকে নিঃশর্ত দলিল পেলেও পরচা পেতে হয়রাণি করা হচ্ছে।
দুলাল চক্রবর্তী বলেন, কলোনি কমিটি জোরজবরদস্তি দখল করে তৃণমূলের যারা মাতব্বরি করছে তাদের জানা দরকার ইউসিআরসি সংগঠন না থাকলে পশ্চিম বাংলাতে তাদের বাসস্থান হতোনা। দণ্ডকারণ্য বা অন্য রাজ্যে তাদের পাঠিয়ে দিতো তদানীন্তন সরকার।
উল্লেখ্য; সোদপুর হাই স্কুলে রজ্য সাংগঠনিক সভার দ্বিতীয় দিনে প্রতিনিধিদের সামনেও বক্তব্য রাখেন সুমিত দে। ২৪ জন প্রতিনিধি প্রতিবেদনের উপরে আলোচনা করার পরে বক্তব্য রাখেন সম্পাদক মধূ দত্ত। প্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি দুলাল চক্রবর্তী, জেলার ডিওয়াইএফআই নেতা সায়ন চক্রবর্তী, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী গীতশ্রী ধর।
Comments :0