Unemployment rate

ফের বাড়ল বেকারির হার, কাজের বাজারে অধোগতি

জাতীয়

আবার বাড়ছে দেশে বেকারির হার। মার্চে বেকারির হার হয়েছে ৭.৮ শতাংশ। তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির সর্বশেষ সমীক্ষায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। ২০২২-এর ডিসেম্বরে বেকারির হার ছিল ৮.৩০ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৭.১৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয় ৭.৪৫ শতাংশ। মার্চে তা আরো বেড়েছে। 
এই সমীক্ষায় ভারতের কর্মহীনতার প্রকৃত ও ব্যাপকতর চিত্র ধরা পড়ে না। প্রকৃত বেকারি এর থেকে অনেক বেশি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বেকারির হারের কোনো নিয়মিত তথ্য পেশ করে না বলে সিএমআইই’র তথ্য বহুল ব্যবহৃত। 
শনিবার প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে শহরে বেকারির হার ৮.৪ শতাংশ, গ্রামে ৭.৫ শতাংশ। সিএমআইই-র অধিকর্তা মহেশ ব্যাস সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘২০২৩-র মার্চে ভারতের শ্রম বাজারে অবনতি হয়েছে। শুধু বেকারির হার বেড়েছে তাই নয়, শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার কমেছে। তা ৩৯.৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩৯.৮ শতাংশ। তার ফলে কর্মসংস্থানের হার ফেব্রুয়ারির ৩৬.৯ শতাংশ থেকে কমে মার্চে হয়েছে ৩৬.৭ শতাংশ।’ সবক’টি হার মিলিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে কাজের বাজারে অধোগতি কতটা। কাজের বাজার যে মোটেই সম্প্রসারিত হচ্ছে না, তা এই পরিসংখ্যান থেকেও বোঝা যাচ্ছে। 
ব্যাসের হিসেব একমাসে মোট কর্মসংস্থান ৪০ কোটি ৯৯ লক্ষ থেকে কমে হয়েছে ৪০ কোটি ৭৬ লক্ষ। এই হিসাবেই এক মাসে ২৩ লক্ষ কর্মসংস্থান কমে গেছে। ঠিক একই ভাবে ফেব্রুয়ারিতে ২৩ লক্ষ কর্মসংস্থান কমে গিয়েছিল। এর সঙ্গে অস্থায়ী, আংশিক, মরসুমী কাজ এবং ছদ্ম বেকারত্ব যোগ করলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আন্দাজ করা যায়। 
অর্থনীতিবিদরা হিসেব করে জানাচ্ছেন, দুটি ঘটনা সমান্তরাল ভাবে চলছে। কর্মক্ষম কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না এমন শ্রম শক্তির সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, কাজের বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মানুষ। কোথাও আর কাজ পাবার সম্ভাবনা নেই বুঝেই তাঁরা আর কাজই খুঁজছেন না। 
দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে বেশি কাজ খোয়া গেছে খুচরো পরিষেবা, সরবরাহ পরিষেবা, লজিস্টিকস, আর্থিক পরিষেবায়। তথ্য প্রযুক্তিতেও বড় আকারে কাজ কমানো হয়েছে। নতুন নিয়োগ এইসব ক্ষেত্রে প্রায় বন্ধই। 
মহামারীর দু’বছরে কাজ কমার কারণ হিসাবে অতিমারীকেই চিহ্নিত করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই সংক্রান্ত বিপদ ও বিধিনিষেধ শিথিল হবার পরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হারে গতি ফেরেনি। এখনও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার মহামারীর সময়ে কমে যাওয়া বৃদ্ধির হারে নিচে রয়েছে। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি কর্মসংস্থানের বৃদ্ধির হার ছিলো মাত্র ০.৬৩ শতাংশ। বৃদ্ধির হার এক শতাংশও নয়, যা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বাধিক বৃদ্ধির হার। মন্দার আগে কর্মসংস্থানের যে বৃদ্ধি হার ছিল তার ধারে কাছেও আসেনি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার। 
একই সময়ে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তরে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কেন্দ্রের হিসাবে সংগঠিত ক্ষেত্রে বছরে  রাজ্য ও কেন্দ্রে যা নিয়োগ হয়েছে বছরে তার থেকে বেশি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন দপ্তরে। যেমন, রেলে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৫ লক্ষ, শূন্য পদের সংখ্যা ৩ লক্ষ। প্রতিরক্ষায় অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৬ লক্ষ, শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লক্ষ। ডাকঘরে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২লক্ষ,  শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। স্বরাষ্ট্র দপ্তর অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১১ লক্ষে শূন্যপদের সংখ্যা ১ লক্ষ। কেন্দ্রীয় সরকারেই প্রায় ১০ লক্ষ পদ শূন্য পড়ে রয়েছে কাজের এই হাহাকারের সময়েও।

Comments :0

Login to leave a comment