Editorial

মুক্তি নবজাগরণে

সম্পাদকীয় বিভাগ


দু’বছর বাদে বিধানসভা নির্বাচনে চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব হবে কিনা সেই দুঃশ্চিন্তায় রাতের ঘুম এখন থেকেই কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে আসন সংখ্যা অনেকটা বাড়লেও জনসমর্থনের ভিত্তি আগের মো শক্তপোক্ত নেই, অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে। গ্রাম বাংলায় শক্তি অটুট থাকলেও শহর বাংলায় ক্ষয় বেড়েছে। অর্থাৎ শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তৃণমূল থেকে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালে ক্ষমতায় ফেরা অনিশ্চিত হয়ে যাবে। বিষয়টা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই ধমক-চমকের নতুন চিত্রনাট্য তৈরি করে নিজের অনুকূলে হাওয়া ঘোরানোর নানান ফন্দি ফিকির বার করার চেষ্টা করছেন। দলীয় স্তরে নেতা-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এবং সরকারি স্তরে আমলাদের নিয়ে নিত্য বৈঠক করছেন। চোখ রাঙাচ্ছেন, ধমকাচ্ছেন, হুমকি দিচ্ছেন। আমলারা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ায়, কাজ করে না। পঞ্চায়েত-পৌরসভায় দলের নেতারা শুধু টাকা কামানোর ধান্ধায় আছে। এসব তিনি এখন বলছেন। ভাবখানা এমন যেন গত ১৩ বছর ধরে নেতা-কর্মীরা নামাবলী গায়ে জড়িয়ে উপোস করেছে। এখন সব দলে টাকা কামাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নেত্রী বোধ হয় ভুলে গেছেন তোলাবাজির টাকা ৭৫/২৫ ভাগ হিসেবে বণ্টনের ফরমুলা তো তিনিই কর্মীদের দিয়েছেন। ৭৫ভাগ কালীঘাটে পাঠাতে গিয়ে নিজেদের ভাগ কম পড়ে যাওয়ায় তোলাবাজির গতি ও ব্যাপ্তি বেড়েছে। তাছাড়া কর্মীদের স্পষ্ট অভিমত তোলাবাজি-দুর্নীতি করে যদি মোটা টাকা পকেটে পোরা না যায় তাহলে তৃণমূল করতে যাবে কেন। অতএব চুরি, দুর্নীতি, বাটপাড়ি, তোলাবাজি যুগ যুগ জিও। এটাই মমতা জমানায় অন্যতম স্লোগান। এই জমানায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ভর্তি হতে ঘুষ লাগে, সরকারি প্রকল্পের অনুদান পেতে কমিশন দিতে হয়। পড়াশুনার বিশেষ দরকার হয় না পাশ করতে বা বেশি নম্বর পেতে। মুখ্যমন্ত্রী স্বগর্বে ঘোষণা করেছেন তিনি বেশি বেশি নম্বর দিতে বলে দিয়েছেন। পড়াশুনা ছাড়াই যদি বেশি নম্বর পাওয়া যায় তাহলে নিয়মিত স্কুল-কলেজে যাবার দরকার নেই। দরকার নেই শিক্ষক-শিক্ষিকারও। তাই শিক্ষক নিয়োগ কার্যত বন্ধ। যারা সত্যি সত্যি পড়াশুনা করতে চান, সামর্থ্য আছে তারা সরকারি স্কুল ছেড়ে বেসরকারি স্কুলে যাচ্ছে। ছাত্রাভাবে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক সরকারি স্কুল। পাশাপাশি চাকরির কোনও সুযোগ নেই। তা‍‌ই পড়া ছেড়ে অল্প বয়স থেকে কাজ খোঁজা শুরু হয়। রাজ্যে কাজের আকাল। জুটলেও মজুরি সামান্য, পেট চলে না। তাই দলে দলে ভিন রাজ্যে পাড়ি। রাজ্যের প্রায় সব পরিবারের কেউ না কেউ ভিন রাজ্যে থাকে রোজগারের জন্য বা পড়াশুনার জন্য। এটাই মমতার উন্নত বাংলা।
মমতা ব্যানার্জির অর্থনীতি রাজ্যে সম্পদ সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে না। রাজ্যের লোক বাইরে গিয়ে কাজ করে টাকা আনুক। তিনি সরকারি পরিকাঠামো ছোট করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছোট করে সরকারি ব্যয় ন্যূনতম করে ফেলতে চান। সরকারি কর্মী, শিক্ষক নিয়োগ করে তাদের পেছনে টাকা খরচে তাঁর আপ‍‌ত্তি। ঠিকা পুলিশ, ঠিকা কর্মী নিয়ে সামান্য টাকা দিয়ে সরকারি কাজ করিয়ে নিতে চান। এমনকি অনেক সরকারি দপ্তর গুটিয়ে ফেলতে চান। এইভাবে অর্ধেক খরচ কমিয়ে সেই টাকা নগদ বণ্টন করে ভোটের বাজার গরম করতে চান। অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজ্যবাসীর শ্রম ব্যবহার করে নতুন নতুন সৃষ্টিতে তার আপত্তি। মানুষ তাদের শ্রম, কর্ম দক্ষতার বিনিময়ে সসম্মানে রোজাগার করবে, তাতে গোটা রাজ্য অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সম্পদশালী হবে মমতা শাসনে সেই ব্যবস্থা নেই। তিনি কর্মহীন, হতাশা জর্জরিত এক অলস বঙ্গ সমাজ বানিয়ে তাদের আনুগত্যে ক্ষমতায় থাকতে চান। ভিত্তিমূলেই পচন ধরে গেছে বাংলার। একে ফের ঠিক পথে আনতে নতুন করে নবজাগরণের আন্দোলনে নামবে। নইলে বাংলার ধ্বংস অনিবার্য।

Comments :0

Login to leave a comment