Editorial

তদন্ত হলে কে বা কারা জেলে যাবে?

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী এদিন রাজস্থানের কারৌলিতে এক নির্বাচনী সভায় দাবি করেছেন, ২০২৪ সালে ক্ষমতায় এলে সব দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে পাঠাবেন। দেশের মানুষের জন্য এ বড়ই সুসংবাদ। সবাই নিশ্চয়ই যারপরনাই আনন্দিত আহ্লাদিত আপ্লুত হয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখনিঃসৃত এই বাণীতে। দুর্নীতির কালো মেঘে ঢাকা আকাশে এ যেন হঠাৎ এক ঝলক ঝলমলে সূর্য। কিন্তু কিছু প্রশ্ন তো উঠেই যাচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। 
প্রথমত, সব দুর্নীতিগ্রস্তকে যদি জেলে পাঠাতে হয়, তাহলে তো সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী নিজেই। কারণ তাঁর জমানাতে তো কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারির ঢেউ উঠেছে। সব উল্লেখ করতে তো সমগ্র ভূপৃষ্ঠকে খাতা, সাত সমুদ্রের জলরাশিকে কলমের কালি আর হিমালয়ের চূড়াকে কলম হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। ধরুন কালো টাকা বাজেয়াপ্ত করার গল্প শুনিয়ে হলো নোটবন্দি। দেখা গেল বাজারে যত সংখ্যক বাতিল টাকার নোট ঘুরছিল, তার ৯৯.৩০ শতাংশ নোটই ফেরত চলে এল। তাহলে কালো টাকা সাদা করার জন্যই কি নোটবন্দির ফন্দি? এই ফন্দি আঁটার নায়ক কি জেলে যাবেন? 
দেশের ৭ টা বিমানবন্দর, ১৬ টা জাহাজবন্দর, ১৫,২৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, দেশে সবচেয়ে বেশি কয়লা ভাণ্ডার সহ ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার মালিক মোদী’র পরম মিত্রোঁ আদানি সাহেব। নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে এর কি একটা বাসস্ট্যান্ডের মালিকানাও ছিল? তদন্ত হবে কি মোদী মিত্রোঁ’র এই রকেট উত্থানের?  তাহলে কে জেলে যাবেন? রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেনা – সে আর এক ইতিহাস। যে অনিল আম্বানি দেউলিয়া, তাঁকেই বগলদাবা করে সঙ্গে নিয়ে গেলেন ফ্রান্সে। চুক্তি করলেন যুদ্ধবিমান কেনার। আর তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কে? যার একটা সাইকেল কারখানা চালাবার অভিজ্ঞতাও নেই, সেই দেউলিয়া অনিল আম্বানি’র! ধামাচাপা দেওয়া এই বিষয় নিয়ে তদন্ত হলে কে জেলে যাবেন? আর নির্বাচন বন্ড কেলেঙ্কারি – এ তো বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক কেলেঙ্কারিই শুধু নয়, তোলাবাজির আইনি স্বীকৃতিদান। একে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্ট বলেছে অসাংবিধানিক। 
দ্বিতীয়ত, অতীত বড়ই নিষ্ঠুর। ২০১৪ সাল, ২৭ এপ্রিল। ঠিক ১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এসেছিলেন শ্রীরামপুরে নির্বাচনী সভা করতে। বলেছিলেন – দিদির ছবি ১ কোটি টাকা দিয়ে কে কিনেছে? সব তদন্ত হবে। এই দুর্নীতিতে যুক্ত সবাইকে জেলে পাঠাবো, একবার শুধু আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিন। মানুষ বিশ্বাস করেছিল। পরের দিন শালবনীর এক সভা থেকে পালটা জবাব দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি আর মুকুল রায়। কি হলো সেই পঞ্জিফান্ড বা চলতি কথায় চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি তদন্তের। ২০১৪ সালের ৯ মে সুপ্রিম কোর্ট এই তদন্তের ভার সিবিআই’র হাতে দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন। ১০ বছরে কি হলো দুর্নীতির মাথাদের জেলে ঢোকানোর? শুনতে পাওয়া যায় কি আর চিট ফান্ড দুর্নীতি নিয়ে কোনও কথা? সব ধামাচাপা। উলটে সেই মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের নিজের দলে ঢুকিয়ে নেতা বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই দুর্নীতিই শুধু নয়, পশ্চিমবঙ্গের হাজারো দুর্নীতির মাথারা জেলের বাইরে বহাল তবিয়তেই আছেন, ঘুরছেন, ক্ষমতার কেন্দ্রেই আছে। 
তাই আর কেউ বিশ্বাস করে না দুর্নীতির শিরোমণি বিজেপি নেতাদের আর তার মাথা নরেন্দ্র মোদীকে।    

Comments :0

Login to leave a comment