দেশের ভেতরের পরিস্থিতি ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ ধারণার সঙ্গে সাযুজ্য রাখছে না। সাংবিধানিক অধিকার বিপন্ন। বিশ্বমঞ্চে মর্যাদা অর্জন করতে হলে দেশের ভেতরের পরিস্থিতি শুধরাতে হবে দেশের সরকারকে। ‘জি-২০’ শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিতে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠকে এই মর্মে বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
তিনি বলেন, ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ মানে জোর করে অভিন্নতা চাপিয়ে দেওয়া নয়। বরং বিশ্ব পরিবারের থেকে এই স্বীকৃতি অর্জন করা যে সামাজিক বৈচিত্র্য এবং বহুত্ব মর্যাদা এবং সম্ভ্রমের সঙ্গে উদ্যাপিত হয়।
‘জি-২০’ গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলি পালা করে একেকবার শীর্ষ বৈঠকের আয়োজক হয়। সামনের শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে সামনে রেখে দেশজুড়ে রাজনৈতিক প্রচারে সরকারের সাফল্যকে প্রচারে নিয়ে এসেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন ‘এক বিশ্ব-এক পরিবার-এক ভবিষ্যৎ’ এবং ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ ধারণাকে প্রচারের কেন্দ্রে রাখা হবে।
ইয়েচুরি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত লক্ষ্যের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি এবং সরকারের ভূমিকা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাঁর ব্যাখ্যা, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে, ঘৃণা-ভয়-হিংসার প্রচার নেমেছে সমাজের গভীরে। অর্থনৈতিক অধোগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারি এবং দারিদ্র। মহিলা, দলিত এবং আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক অন্যায় বেড়ে চলেছে। নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকারের সাংবাধানিক প্রতিশ্রুতি আক্রান্ত। বিরোধী স্বর সরকারের সমালোচনা করলেই ‘দেশদ্রোহী’ বলে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সংবিধানে বর্ণিত সমতার ভিত্তিতে সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা প্রয়োজন। না হলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত লক্ষ্যের সঙ্গে দেশের বাস্তব পরিস্থিতির গুরুতর পার্থক্য থাকবে।
বৈঠকে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠক শুরু আগেই জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন দেশের নেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
ইয়েচুরি স্পষ্ট করে দেন যে গোষ্ঠীর শীর্ষ বৈঠকে সভাপতিত্বের দায়িত্ব বিশেষ কোনও সাফল্য নয়, অভিনবও নয়। জি-২০ গোষ্ঠী গঠনের ইতিহাসও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর সাত দেশের জি-৭ গোষ্ঠীর পরিধি বাড়ানো হয়। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিকে যুক্ত করে জি-২০ গড়া হয়। ইয়েচুরি বলেন, বিশ্বায়নের নীতিতে সঙ্কট বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বেরনোর দায় উন্নয়নশীল দেশগুলির ওপর চাপানোর জন্য এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল।
Comments :0