ALEIDA GUEVARA RECEPTION

হৃদয়ে চে, উষ্ণ অভ্যর্থনা সকন্যা অ্যালেইদাকে

রাজ্য কলকাতা

aleida guevara che guevara jadavpur university শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সকন্যা অ্যালাইদা গুয়েভারাকে সংবর্ধনায় মানুষের ঢল

শান্তি ও সংহতির আন্তর্জাতিকতা বোধ নিয়ে কলকাতা শহর স্বাগত জানালো বিপ্লবী চে গুয়েভারার কন্যা চিকিৎসক ও সমাজকর্মী অ্যালেইদা গুয়েভারা এবং তাঁর কন্যা এস্তেফানিয়া গুয়েভারাকে। শুক্রবার সকাল সাড়ে নটায় দমদমে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দরে পা রেখেই জনজমায়েত দেখে কলকাতার উষ্ণতা টের পেয়েছেন আলেইদা গুয়েভারা। এরপর বরানগরের রাস্তায়, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনায় আপ্লুত হয়ে তিনি বলেছেন, চে গুয়েভারা আপনাদের সবার হৃদয়ে রয়েছেন দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে।


সঙ্কীর্ণ রাজনীতি যে কলকাতার মূল ধারা হতে পারে না তা আবারও প্রমাণ করে চে গুয়েভারার কন্যা ও নাতনিকে বরণ করে নিয়েছেন এই শহরের মানুষ। ভারত-কিউবা মৈত্রী বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা ও ন্যাশনাল কমিটি ফর সলিডারিটি উইথ কিউবার উদ্যোগে ভারতের অনেকগুলি কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসেছেন আ্যালেইদা এবং তাঁর কন্যা এস্তেফানিয়া। কেরালা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইয়ে কর্মসূচির পরে তিনি এদিন কলকাতায় এলেন, শনিবারও তিনি কলকাতায় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

এদিন বিমানবন্দরে ফুলমালায় তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। স্কুল ছাত্রী থেকে শুরু করে ছাত্র-যুবরা তো বটেই, বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের কর্মী ও নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন স্বাগত জানাতে। সিপিআই(এম) নেতা শমীক লাহিড়ী ও পলাশ দাশও উপস্থিত ছিলেন। আগে থেকেই বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর এক নম্বর গেটের বিপরীতে ফ্লেক্স, ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। শান্তি, সংহতি, সম্প্রীতি, মৈত্রীর স্লোগানে মুখরিত তখন বিমানবন্দর চত্বর। 


এদিন বিকালে চে গুয়েভারার কন্যা ও নাতনিকে পেয়ে যেন বিপ্লবের রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সমস্ত ভৌগোলিক দূরত্ব ভুলে যেন এক হয়ে গেল ভারত-কিউবা। উপস্থিত মানুষের উত্তেজনা, আবেগ, আন্তরিকতা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সুদূর লাতিন আমেরিকা আর কলকাতা যেন একাকার হয়ে গিয়েছিল। প্রমাণিত হয়েছে, চে গুয়েভারার কোনও দেশ নেই। তাঁর বিপ্লব আদর্শ বিশ্বজনীন। ‘তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে’ সঙ্গীতে অনুষ্ঠান শুরু হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং রঙ্গন চক্রবর্তী। অর্ক মুখার্জির কণ্ঠে ‘ওয়াহিদা গুয়ান্তানামেরা’ থেকে ‘কমানদান্তে চে গুয়েভারা’য় তখন সভাগৃহে মেক্সিকান ওয়েভ জেগে উঠেছে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে। অনুষ্ঠান শেষে হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হলো, ‘চে ইজ ইন মাই হার্ট’।


যাদবপুরে এআইপিএসও’র উদ্যোগে এবং আফসু’র সহযোগিতায় সংবর্ধনা দেওয়া হলো অ্যালেইদা গুয়েভারা ও এস্তেফানিয়া গুয়েভারাকে। এআইপিএসও’র পরিমল দেবনাথ ও অঞ্জন বেরা, আফসু’র শ্রেয়সি ব্যানার্জি, ফ্রেন্ডস অফ লাতিন আমেরিকা, যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন(জুটা)’র সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় ও সম্পাদক পার্থ প্রতিম বিশ্বাস তাঁদের সংবর্ধিত করেন। এসএফআই’র পক্ষ থেকে ময়ূখ বিশ্বাস ও প্রতীক উর রহমান ‘এডুকেশন ও এক্সক্লিউশান’ বইটি তুলে দেন অ্যালেইদার হাতে। 

অ্যালেইদা গুয়েভারার শুভেচ্ছা ভাষণ বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন শুভেন্দু সরকার, উদ্বেলিত হয়ে করতালি দিচ্ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন অর্ক মুখার্জি, সাত্যকি ব্যানার্জি (বর্ণ অনন্য), দুর্নিবার সাহা, পটা, লোপামুদ্রা মিত্র, ভাস্কর রায়, আকাশ চক্রবর্তী, তৈষী, দেবদীপ মুখার্জি, পূরবী মূখার্জি, কল্যাণ সেন বরাট, সুমন মুখোপাধ্যায়, তিতুমীর কালেক্টিভ, গৌতম ঘোষাল সহ শিল্পীবৃন্দ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সঞ্জয় গোপাল সরকারও উপস্থিত ছিলেন। 


কিউবার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আর্নেস্টো চে গুয়েভারা ভারত সফরে এসে ১৯৫৯ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখে বরানগরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন। চে-কন্যা এদিন দুপুর একটা নাগাদ সেই আইএসআই’তে আসেন এবং চে গুয়েভারা যে বিভাগগুলি ঘুরে দেখেছিলেন সেই স্থানগুলি ঘুরে দেখেন কন্যা এস্তেফানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। আইএসআই-তে ১৯৫৯ সালে চে গুয়েভারার আগমনের সময় তোলা একটি ঐতিহাসিক ছবি এবং স্মারক উপহার, সেই সময়কার এক গুচ্ছ  আলোকচিত্র এস্তেফানিয়া গুয়েভারার হাতে তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন এআইপিএসও’র সম্পাদক অধ্যাপক অঞ্জন বেরা, পলাশ দাশ এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক গবেষক ছাত্র-ছাত্রীরা। 


আইএসআই থেকে একটু দূরেই বিটি রোড— বনহুগলী মোড়ে পৃথকভাবে এআইপিএসও’র উদ্যোগে সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অ্যালেইদা গুয়েভারা এবং এস্তেফানিয়া গুয়েভারা সেখানে উপস্থিত হওয়া মাত্রই তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে স্লোগান মুখরিত হয়ে ওঠে সমগ্র জমায়েত। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের প্রতি সংহতি ধ্বনিত হয়। বাংলা ও স্প্যানিশে স্বাগত ভাষণ পাঠ করেন এআইপিএসও’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সাধারণ সম্পাদক পারভেজ রহমান। সমাপ্তি ভাষণ এবং বরানগরের নাগরিকদের পক্ষে সংবর্ধনা ও স্মারক উপহার দেন তন্ময় ভট্টাচার্য। হোসে মার্তির লেখা কবিতার সঙ্গীত রূপ বাংলা ও স্প্যানিশ ভাষান্তরে পরিবেশন করেন কঙ্কন ভট্টাচার্য ও ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সাগ্নিক শাখার বিশিষ্ট শিল্পীরা। অ্যালেইদা গুয়েভারা এবং এস্তেফানিয়া গুয়েভারার হাতে ‘স্টুডেন্টস স্ট্রাগল’ পত্রিকার কপি তুলে দেন এসএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস।  এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের থেকে স্মারক উপহার ও পুস্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন শমীক লাহিড়ী, পলাশ দাশ, অঞ্জন বেরা, সায়নদীপ মিত্র, সোমা দাশ সহ গণআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সঞ্চালনা করেন দেবজ্যোতি দাস।

Comments :0

Login to leave a comment