MODI UNDER PRESSURE

মোদীর ভাষণে শঙ্কার সুর

সম্পাদকীয় বিভাগ

মোদী চিন্তিত বামপন্থীদের নিয়ে। চিন্তিত প্রতিবাদী ভারতের ভাবনায়।  তাই  কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারকে আক্রমণ করতে গিয়েও আক্রমণ করছেন বামন্থীদের। সেই ইশ্‌তেহারেও নাকি বামপন্থীদের ভাবনা ঢুকে আছে। আসলে তাহলে মোদীর আশঙ্কা কি ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ নিয়েও। ভাষণে স্পষ্ট ধরা পড়ছে তাঁর উদ্বেগ। যত দিন যাচ্ছে উদ্বেগ বাড়ছে আরএসএস’র, উদ্বেগ বাড়ছে বিজেপি’র। সেকারণেই কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারকে স্বাধীনতার আগে মুসলিম লিগের কথা বলে বিভাজনের রাজনীতিকে আরও গতি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তেমনই আক্রমণ করেছেন বামপন্থী ভাবনাকেও। 
কয়েকদিন আগেই ইশ্‌তেহার প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম)। তারপরেই ইশ্‌তেহার প্রকাশ করেছে কংগ্রেসও। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট এমন এক পরিস্থিতিতে হচ্ছে যখন ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত প্রবলভাবে অস্তিত্বের সঙ্কটে। এক দশকের বিজেপি জামানায় দেশের কাঠমোগত দিকটাই অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে। দেশে কাজের বেহাল দশা, ধনী-গরিবে বৈষম্য আকাশ পাতালের, ইউএপিএ-পিএমএলএ দিয়ে বিরোধীদের নিশানা করা হয়েছে নির্বিচারে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা,নির্বাচনী লড়াইয়ে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার কথাই তুলে ধরা হয়েছে ইশ্‌তেহারে। মোদীর ভাষণে কিংবা বহু বিজ্ঞাপিত ছবিতে যা বলেন তার সঙ্গের বাস্তবের যে কোনও মিল নেই, এবারের নির্বাচনের তাৎপর্য সেখানেই । তাই বিজেপি এবং তার সহযোগীদের পরাস্ত করে লোকসভায় সিপিআই(এম)সহ বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি এবং কেন্দ্রে একটি বিকল্প ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন সুনিশ্চিত করার আহ্বান সিপিআই(এম)’র। কংগ্রেসও ইশ্‌তেহারে একদিকে জোর দিয়েছে দেশের সংবিধানকে রক্ষার, আরেকদিকে জনমুখী কর্মসূচিতে। সমাজের সব অংশের নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলাই বাহুল্য রাজ্যে রাজ্য বিজেপি বিরোধিতা কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিজেপি এবং তার দোসর তৃণমূলকে কোণঠাসা করার আওয়াজ জোরালো হচ্ছে। স্পষ্টতই আরএসএস লালিত মোদীর অখুশী হবার যথেষ্ট কারণ আছে।  
মোদীর ভাষণ এইরকম: স্বাধীনতার লড়াই লড়েছিল যে কংগ্রেস তা কয়েক দশক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আজকের কংগ্রেসে না আছে দেশ গড়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গি না রয়েছে লক্ষ্য। নির্বাচনী মঞ্চে মোদী একথা বলবেন এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু এর পরেই মোদীর সংযোজন ‘কংগ্রেসের ইশ্‌তেহারে পুরোপুরি মুসলিম লিগের ছাপ।’ মোদী জিন্নার মুসলিম লিগকে টেনে এনেছে সরাসরি। বুমেরাঙ হচ্ছে তাঁদের এই প্রসঙ্গ। প্রশ্ন ওঠাই স্বভাবিক, স্বাধীনতার লড়াইয়ে আরএসএস’র ভূমিকা কী? এরসঙ্গে মোদী টেনে এনেছেন বামপন্থীদেরও। বলেছেন, মুসলিম লিগের ভাবনার পর বামপন্থীদের ভাবনাও যোগ করেছে কংগ্রেস। যদিও এটাই প্রথম নয়, গত বছর আরএসএস’র বিজয়া দশমীর ভাষণেও কমিউনিস্টদের আক্রমণ ছিল আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ভাষণে। বলেছিলেন, এই মুহূর্তে দেশের প্রধান শত্রু ‘কালচারাল মার্ক্সিস্ট’রা। বোঝাই যাচ্ছে, ধর্মীয় বিভাজনের নিরিখে সংখ্যাগুরুবাদকে আশ্রয় করাই মোদীর প্রথম লক্ষ্য। বিরোধীরা সংখ্যালঘুদের অধিকার তুলে ধরলেই মুসলিম তোষণের অভিযোগ  তোলে বিজেপি। লক্ষণীয়, মোদীরা ভয় পাচ্ছেন প্রতিবাদী ভারতের ভাষা। যে ভাষা বামপন্থীদের। যে প্রতিবাদী ভারত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, দেশের আনাচে-কানাচে। আর তাকেই মোদী-শাহরা আক্রমণ করেছেন, ‘টুকরে টুকরে গ্যাঙ’ বলে, কখনও আরবান নকশাল বলে, কখনও কালচারাল মার্কসিস্ট বলে। তকমা দিয়েছেন এরা দেশ ভাঙতে চায় । প্রতিবাদের ভাষা স্তব্ধ করতে ইউএপিএ-পিএমএলএ দিয়ে বিরোধীদের নিশানা করা হয়েছে নির্বিচারে। প্রতিবাদ থামেনি। নির্বাচনে এসে ভয় পাচ্ছে আরএসএস, ভয় পাচ্ছেন মোদী। মোদীর ভাষণে তাই শঙ্কার সুর।

Comments :0

Login to leave a comment