BARRACKPORE SHOOT OUT

বারাকপুরে খুনের ঘটনায় পুলিশকেই দুষছেন মানুষ

রাজ্য

barrackpore shoot out crime bengali news গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের মুহূর্তে নিলাদ্রী সিংহ। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত।

‘আমার চোখের সামনে ছেলেটাকে ওরা গুলি করে মেরে ফেললো’ —অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে এই কথাগুলো বলেই চলেছেন সিংহ জুয়েলারির মালিক মানিক সিংহ। তাঁর স্ত্রী মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। চোখ মেললেই চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলে চলেছেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানকে ওরা মেরে ফেললো। আমার আজ সব শেষ হয়ে গেল’। 

মৃত নীলাদ্রি সিংহের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে বুধবার রাত থেকেই ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। শোকস্তব্ধ ও হতবাক হয়ে গেছে সিংহ পরিবার। পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার মানুষ।

পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব, শুক্রবার সিপিআই(এম)’র ডাকে বারাকপুরে হবে প্রতিবাদ মিছিল। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও শনিবার বারাকপুর অঞ্চলে ব্যবসা বন্ধ ও মিছিলের ডাক দিয়েছেন। সবারই প্রশ্ন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পরও কেন অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারল না পুলিশ।  


বুধবার ভর সন্ধ্যায় বারাকপুরে শ্যুট আউটের ঘটনায় মারা যান সিংহ জুয়েলারির মালিক মানিক সিংহের পুত্র নীলাদ্রি শেখর সিংহ। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার মানুষ। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে এলাকার মানুষের প্রশ্ন, এই রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন বলে কি কিছু আছে? বারাকপুরে তো এইরকম ঘটনা কোনদিন ঘটেনি। একটা জনবহুল এলাকায় দুষ্কৃতীরা অবাধে গুলি করে পালিয়ে গেল। একটা তরতাজা নিরীহ ছেলের প্রাণ চলে গেল। আর ঘটনার পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও দুষ্কৃতীরা এখনও অধরাই থেকে গেল! 

অথচ অলঙ্কারের দোকানের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গতকালই সামনে এসেছে। এরপরও অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারেনি টিটাগড় থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিনভর এই অভিযোগ তুলেছেন মানুষ। তাঁরা আঙুল তুলেছেন, পুলিশের স্পষ্ট গাফিলতির দিকে। সারা বারাকপুর জুড়ে কোটি টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি লাগিয়েছে পৌরসভা। যদিও সবই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যার ফলে দুষ্কৃতীরা কোথা দিয়ে এসেছে, আর কোথা দিয়ে পালিয়েছে তার কোনও হদিশ পুলিশের কাছে নেই। বুধবার এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সেগুলি মেরামত করা হয় বলে জানা গেছে। 


বুধবার ভরসন্ধ্যায় ৪জন দুষ্কৃতী বাইকে চেপে এসে জুয়েলারি দোকানে ঢোকে। তাদের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা ছিল। সোনার গহনা ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে চম্পট দেওয়ার সময়ে বাধা দেন মালিকের ছেলে নীলাদ্রি সিংহ। তখনই দুষ্কৃতীরা ৪ রাউন্ড গুলি চালায়। সেই গুলিতে প্রাণ হারান নীলাদ্রি সিংহ। সে সময়ে বাবা মানিক সিংহ (যিনি দোকানের মালিক) ও এক কর্মচারীর পায়ে গুলি লাগে। নিছকই ডাকাতির উদ্দেশ্য ছিল না কি এই খুনের পেছনে অন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

বৃহস্পতিবার সিংহ জুয়েলারি সোনার দোকানের মালিকের বাড়িতে যান প্রাক্তন সাংসদ সিপিআই(এম) নেতা তড়িৎ তোপদার, গার্গী চ্যাটার্জি, তমাল চক্রবর্তী সহ অন্যান্য পার্টি নেতৃত্ব। শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। এই ঘটনায় প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদার বলেন, এই ঘটনা ভয়াবহ, অভাবনীয়। এটা বারাকপুরে কল্পনার অতীত। পুলিশের দক্ষতা নেমে গেছে। কারণ, শাসকদল পুলিশ বিরোধীদের দমন করতে পুলিশকে ব্যবহার করছে। আর শাসকদলের ভয়ে টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে।


শুক্রবার সিপিআই(এম) বারাকপুর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে আনন্দপুরী স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ মিছিল হবে। এছাড়াও স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা শনিবার চব্বিশ ঘণ্টা সোনার দোকান বন্‌ধের ডাক দিয়েছে। তাঁরা শনিবার প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হবেন বলে জানা গেছে। সেই মিছিল টিটাগড় থানা হয়ে বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সামনে যাবে। পুলিশ কমিশনারের কাছে নিরাপত্তার দাবি নিয়ে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দেবেন। 

বৃহস্পতিবার বিকালে নীলাদ্রি শেখর সিংহের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর আনন্দপুরী রোডের বাসভবনে এসে পৌঁছায়। সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। সকলেরই চোখে জল। এলাকায় অত্যন্ত সজ্জন পরিবার হিসাবে সুখ্যাতি সিংহ পরিবারের। নীলাদ্রি শেখর সিংহের মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টি নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জি, শঙ্কর বিশ্বাস সহ প্রমুখ।
এই ঘটনার তদন্তের জন্য ডিসি সেন্ট্রাল অশোক মৌর্য ও ডিসিডিডি শ্রীহরি পান্ডের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এদিন ঘটনাস্থলে সেই টিম এসে উপস্থিত হয়। এছাড়াও ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ করেন। তদন্তকারী দল এসে সিংহ জুয়েলারি দোকানের ওপরে বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলেন। জানা গেছে, বাড়িওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়েও একটা সমস্যা চলছিল মালিকের, মামলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সেই ঘটনার সাথে এই খুনের ঘটনার কোনও যোগসূত্র আছে কিনা সেই  বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ অর্জুন সিং এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলেছেন।


এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, বারাকপুর শিল্পাঞ্চল দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই এলাকায় দুষ্কৃতীরা তৃণমূলের ছত্রছায়ায় লালিত পালিত হচ্ছে। কয়েক মাস আগে ভরদুপুরে টিটাগড়ে একজন খুন হন। বোমা বন্দুকের স্তূপের ওপর এই বারাকপুর শিল্পাঞ্চল। অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। পুলিশ এই দুষ্কৃতীদের ধরতে সাহস করে না। এই দুষ্কৃতীরাই নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট লুটে নেমে যায়। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে মানুষ আতঙ্কিত। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষ।
 

Comments :0

Login to leave a comment