Editorial

সেরা রসিকতা

সম্পাদকীয় বিভাগ

 
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গ্যারান্টি দিয়েছেন দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া থেকে কেউ তাঁকে থামাতে পারবে না। মোদীর এই ভাষণ শুনে দেশের আমজনতা একে এক বছরের সেরা রসিকতা বলেই মন্তব্য করছেন। যে দল লুট ও তোলাবাজিতে ইতিমধ্যেই নিজেদের সেরার সেরা প্রমাণ করে ফেলেছে তারা নাকি লড়বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। শেয়াল-মুরগির নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছে। এহেন গ্যারান্টির আড়ালে আসলে আরও বড় আকারের দুর্নীতির ছক কষা হচ্ছে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দে‍‌শের সর্বকালের বৃহত্তম আর্থিক দুর্নীতি যাদের সচেতন পরিকল্পনার ফসল তারা দুর্নীতি দূর করবে এটা জনগণকে বিশ্বাস করানো যাবে না। আসলে মোদীরা বলতে চাইছেন দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা নয়, বরং দুর্নীতিকে আইনি বৈধতা দিয়ে দুর্নীতিতেই আকণ্ঠ নিমজ্জিত হবে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সেই আয়োজনই করা হয়েছিল।
মোদী সরকারের স্মার্ট দুর্নীতির রোল মডেল হলো নির্বাচনী বন্ড এবং পি এম কেয়ার। সংসদে জোর করে বিল পাশ করিয়ে দুর্নীতির অবাধ অধিকার নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতিকে আর দুর্নীতি বলা যাবে না। দুর্নীতির দুই মডেলের একটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জনতার দরবারে ফাঁস হলেও এখনও কেয়ার আড়ালেই আছে। পি এম কেয়ারের মাধ্যমে শত সহস্র কোটি টাকা গোপনে তোলা হয়েছে এবং আত্মসাৎ করা হয়েছে সেটা এখনও জানা যায়। তবে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে যে আকারের দুর্নীতি হয়েছে পি এম কেয়ারে তার থেকে বেশি বই কম নয়। পি এম কেয়ারের টাকাও যে শাসকদলের তহবিলে ঢোকেনি কে তার গ্যারান্টি দেবে।
নির্বাচনী বন্ড হলো সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি তদন্ত সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে শাসকদলের তহবিলে টাকা ভরানোর যন্ত্র। চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে মোটা টাকা তোলা হয়ে‌ছে দলের জন্য। যারা বেগড়বাই করেছে বা বে‍‌শি টাকা দিতে রাজি হয়নি তাদের পেছনে ইডি, সিবিআই, আইটি লাগানো হয়েছে। কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাতে তোলা আদায় হু হু করে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি হানা দিলেই টাকা জমা পড়ছে দলের তহবিলে। তেমনি তোলা দিলে সরকারি অর্ডার মিলছে এবং অর্ডার মিললে বন্ড কেনা বাড়ছে। যত বড় অর্ডার তত বেশি টাকা দান।
আবার বিরোধী দলের মধ্যে থেকে দুর্নীতি করলে রেহাই নেই। কিন্তু দল বদলে বি‍‌‍‌জেপি’তে ঢুকলেই দুর্নীতি মুক্ত। গত দশ বছরে এমন কয়েক শত দুর্নীতিগ্রস্ত মোদীর দলে আশ্রয় ছাড় পেয়ে গেছে। একইভাবে বিরোধিতার পরিসরকে ছোট করে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারে বিরোধী নেতাদের পেছনে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেককে জেলে পুরে পথের কাঁটা সরানো হচ্ছে। ভোটের মুখে পরাজয়ের আতঙ্কে দু’জন বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনী ময়দান ফাঁকা করার চেষ্টা হয়েছে।
ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পদে পদে দুর্নীতিকে আশ্রয় করছে মোদীর দল। আর মোদী ভোটের ময়দানে ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার। বিজেপি’র কাছে দুর্নীতি দলীয় স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত। দলের স্বার্থে যে কোনও দুর্নীতি বৈধ। তেমনি বিরোধীদের লড়াই‌য়ের ময়দান থেকে সরিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দেবার জন্যও দুর্নীতি স্বাগত। এরা শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, তার চেয়ে‌ও বড় মাপের অপরাধী।
 

Comments :0

Login to leave a comment