Pulwama attack

পুলওয়ামা— সত্য ফাঁস হলেও মোদী নীরবই

জাতীয়

Pulwama attack conspiracy bjp narendra modi bengali news

প্রশ্ন তখনই উঠেছিল। শুক্রবার সত্যপাল মালিকের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার সামনে আসতেই আবারও সেই প্রশ্ন উঠে গেল। 

২০১৯-এ ভোটের আগে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের উপরে হামলা কি ঘটতে দেওয়া হয়েছিল, যাতে মোদী সরকার তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলে ভোট জিততে পারে? ব্যর্থতার কথা মালিককে মোদী চেপে যাওবার নির্দেশ দেওয়ায় সেই প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের মতে সত্যপাল মালিকের সাক্ষাৎকারটি ‘মারাত্মক’। মালিক প্রধানমন্ত্রীকে জানালেও ব্যর্থতার কথা তিনি রাজ্যপালকে চেপে যেতে বলেন। দেশের সামনে এখন অনেক বড় প্রশ্ন। 


এই প্রশ্নের পাশাপাশি আরেকটি প্রশ্ন মাথা চাড়া দিয়েছে, এবার কি মোদীর নীরবতা ভাঙবে? মুখ খুলবেন মোদী? চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও জবাব আসেনি বিজেপি শিবির থেকে। কিন্তু দেশের মানুষ জবাব চান। জানতে চান, কার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে দেশের চল্লিশ জওয়ানকে? সিপিআই(এম) নেতা সূর্য মিশ্র সেই প্রশ্ন তুলেই টুইট করেছেন। লিখেছেন, ‘প্রশ্ন তো অনেক, অনেকের এবং অনেক দিনের। উত্তর কি দেবেন প্রধানমন্ত্রী?’


২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে পুলওয়ামা ব্যর্থতা নিয়ে সত্য চেপে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের বক্তব্যে তাই আবার স্পষ্ট হয়ে গেছে। মোদী সরকারের নীতিই হলো ‘ন্যূনতম শাসন, সর্বোচ্চ নীরবতা’। শনিবার নরেন্দ্র মোদীকে এই সুরেই আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। দাবি তুলেছে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের বক্তব্য নিয়ে মোদীরই মুখ খোলার। 


সত্যপাল মালিকের গতকালের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার নিয়ে ঝড় উঠেছে দেশের রাজনৈতিক মহলে। শনিবার দিনভর কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি সমাজকর্মীদের কাছ থেকেও। গতকাল এক সাক্ষাৎকারে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল মালিক ফাঁস করে দিয়েছেন, ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ’র কনভয়ের উপর যে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০জনের মৃত্যু হয়েছিল, তার পেছনে কারণটা ছিল মোদী সরকারের অপদার্থতা এবং বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। 

একইসঙ্গে মালিক জানিয়েছেন যে, এই সমস্ত কথা মোদীকে জানালে তিনি মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এমন তথ্য সামনে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জোরালো দাবি উঠেছে, মুখ বন্ধ না করে থেকে সরকার জানাক কেন সেদিন সিআরপিএফ’র জওয়ানদের বিমান দেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসবাদী হামলার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের সড়কপথে পাঠানো হয়েছিল। 


এদিন সেই প্রসঙ্গে কংগ্রেস তার টুইটার হ্যান্ডেলে লিখেছে, ‘নরেন্দ্র মোদীজী, পুলওয়ামা হামলা ও ৪০টি সাহসী জওয়ান শহীদ হয়েছে আপনার সরকারের ভুলের কারণে। সেদিন যদি আমাদের জওয়ানরা বিমান পেতেন তাহলে সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক বানচাল হয়ে যেত। এই ভুলের জন্য আপনার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। বদলে আপনি শুধুমাত্র বিষয়টি চেপেই দেননি বরং নিজের ভাবমূর্তি বাঁচাতে নেমে পড়েছিলেন। পুলওয়ামা নিয়ে সত্যপাল মালিকের বক্তব্য শুনে গোটা দেশ হতভম্ব হয়ে পড়েছে।’ 


কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতাও এদিন এনিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের কথায়, বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু মোদী সরকার ‘ন্যূনতম শাসন, সর্বোচ্চ নীরবতায়’ বিশ্বাসী। কিন্তু কংগ্রেস জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা চালিয়েই যাবে। দলীয় নেতা পবন খেড়া ও সুপ্রিয়া শ্রীনাতেকে নিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে রমেশ বলেন, মোদীকে বলতেই হবে কেন সেদিন জওয়ানদের জন্য বিমান দেওয়া হয়নি। 


সম্প্রতি লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক আকেলা কিতনো কো ভারী পড় রাহা হ্যায়’। সাংবাদিক সম্মেলনে পবন খেড়া সেই মন্তব্য টেনেই মোদীকে বিঁধেছেন পুলওয়ামা হামলা ও দুর্নীতি নিয়ে নীরবতা প্রসঙ্গে। খেড়ার কথায়, মালিকের বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে যে ‘এক আকেলা, পুরে লোকতন্ত্র পে ভারী।’ মূল স্রোতের মিডিয়া সত্যপাল মালিকের বক্তব্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন খেরা। 

তাঁর অভিযোগ, হয়তো মোদী সরকারের নির্দেশেই এমনটা করা হচ্ছে। কারণ এরা চায় এদের ব্যর্থতা নিয়ে গুরুতর অভিযোগগুলি যেন ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই সত্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে লোকানো হচ্ছে। 


সাংবাদিক সম্মেলনে আরেক কংগ্রেস নেত্রী ও সুপ্রিয়া শ্রীনাতে প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন জৈশের হুমকিকে পাত্তা দেওয়া হলো না? সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে বলে  ২ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১১বার গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া সত্ত্বেও কেন তা উপেক্ষা করা হলো?’ এর পাশাপাশি সুপ্রিয়ার প্রশ্ন, চার বছর কেটে গেলেও পুলওয়ামা হামলার তদন্ত কতদূর এগলো? কবে, কোথায়, কীভাবে ও কাকে দায়ী করা হবে?’ 


কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণীশ তেওয়ারির কথায়, মালিক যা প্রকাশ করেছেন তা ‘খুবই খুবই বিরক্তিকর’। 


আরজেডি তাদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে টুইট করেছে, ‘পুলওয়ামা হামলার সত্য সামনে আসতে শুরু করেছে। ভুয়ো আর লোক দেখানো সঙ্ঘী জাতীয়তবাদীদের আসল চেহারা সামনে আসছে। সকলেই এখন বুঝতে পারছেন লোকসভা ভোটের আগে কেন পুলওয়ামা কাণ্ড ঘটেছিল।’ 


পুলওয়ামা সম্পর্কে মালিকের বিস্ফোরক সত্য প্রকাশ নিয়ে শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, হামলার পরপরই বিরোধী নেতারা যখন এই প্রশ্নগুলিই তুলেছিলেন তখন ‘শাসক বিজেপি তাঁদের থামিয়ে দিয়েছিল’ এবং তাঁদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা সেঁটে দেওয়া হয়েছিল। আর বলা হয়েছিল, ওরা ‘পাকিস্তানের সুরে কথা বলছে’। 


সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র মনোজ সিং কাকার প্রশ্ন, ‘কেন বিমান দেওয়া হলো না? আমাদের শহীদদের শহীদীবরণের জন্য কে দায়ী?’


এদিন রায়পুরে সত্যপাল মালিকের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল বলেন, পুলওয়ামা হামলায় সিআরপিএফ’র ৪০জন জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে মালিক যা বলেছেন তা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘তৎকালীন রাজ্যপাল যদি এমন বক্তব্য বা অভিযোগ করছেন, তাহলে কেন্দ্রকে তো তার জবাব দিতেই হবে।’
 

Comments :0

Login to leave a comment