FIFA WORLD CUP BRAZIL

সেরা ব্রাজিলের সঙ্গে সেরা বেয়ার্ন

খেলা

BRAZIL FIFA 2022 QATAR WORLD CUP

এবারের ব্রাজিলের প্রাক-বিশ্বকাপ ম্যাচ দেখে এমন মন্তব্য এসেছে, ‘সেরা ব্রাজিলের সঙ্গে সেরা বেয়ার্ন মিউনিখের মিশ্রণ’। 
এখানেই কাতারগামী তিতের দলের অভিনবত্ব। ২০০৬ থেকে ২০১৮’র বিশ্বকাপে ব্রাজিল চারবারই হেরেছে কোনও না কোনও পশ্চিম ইউরোপীয় দলের কাছে। ২০১৪-র বেলো হরিজন্তেয় সেমিফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে ২৯ মিনিটেই পাঁচ গোল খেয়েছিল ব্রাজিল। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের সামনে ফাঁকা ময়দানে ক্রমাগত জার্মান প্রেসিংয়ের কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ব্রাজিল। শেষ পর্যন্ত ৭-১’র ওই হার দেখিয়ে দিয়েছিল পশ্চিমী ইউরোপীয় হাই প্রেসিংয়ের সামনে ব্রাজিলের ফাঁক কোথায়। মনে হয়েছিল, কিছুদিনের জন্য হলেও, ক্যানারি পাখির উড়ান এবার বোধহয় শেষ হলো। 
হয়নি। ২০১৮-তে বেলজিয়ামের কাছে হারের সময়ে ছোটখাটো ভুলের খেসারত দিতে হয়েছিল। কিন্তু তখনও নজর পড়েছিল বিপক্ষকে ঠেলে রাখার কৌশলে ঘাটতি। সেই ব্রাজিল বদলে গেছে। ছ’বছর কোচ রয়েছেন তিতে। এতদিন টিকে থাকাও কঠিন। তিতে টিকে গেছেন কেননা স্পষ্টই চোখে দেখা যাচ্ছে নতুন বিন্যাসে দলের খেলা সাজাতে পেরেছেন।

 বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারে ব্রাজিল ৪৫ পয়েন্ট পেয়ে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ব্রাজিলের চিরায়ত খেলার শৈলী, ছোট পাসের সঙ্গে মিশেছে বল ফিরে পেতে হাই প্রেস, দ্রুত ফরওয়ার্ড পাস। স্ট্রাইকাররা এবারে দ্রুত গতির। 
তিতের সম্ভারে আক্রমণভাগই শক্তিশালী। নেইমার ফর্মে রয়েছেন। বলা ভালো, মেসি—এমবাপ্পের সঙ্গে খেলে তাঁর খেলায় বৈচিত্র এসেছে। শুধু গ্যালারি থেকেই তিনি সবচেয়ে ভালো দেখতে তা নয়, মাঠ-মাতানো পাস দিচ্ছেন। রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়াস অত্যন্ত দ্রুত গতির। তাঁর খেলার মধ্যে যে ব্রাজিলীয় ধরন রয়েছে তার সঙ্গে রিয়ালের হঠাৎ-গতির মিশ্রণ ঘটেছে। মাদ্রিদেরই রডরিগোও দ্রুত বলের কাছে পৌঁছতে পারেন। বার্সার রাফিনহার বাঁ পা সাঙ্ঘাতিক। আর্সেনালে যাবার পরে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের খেলারও উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু তুরুপের তাস স্পার্সের রিচার্লিসন। ব্রাজিল এমন একজনকে পেয়েছে যিনি আক্ষরিক অর্থেই সেন্টার ফরওয়ার্ড। ২০ ম্যাচে সাত গোল করে আসা রিচার্লিসন সম্পর্কে বলা হয় তিনি গোল ছাড়া কিছু বোঝেন না। বস্তুত নেইমারকে পিছিয়ে রেখে রিচার্লিসনকেই পেনাল্টি বক্সের ধারেকাছে ঘোরাফেরা করাবেন তিতে। 


মাঝমাঠে ক্যাসিমিরো রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসাবে খেললেও লুকাস পাকুয়েতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বুঝে খেলা ঘোরাতে তাঁকেই কাজে লাগাবেন তিতে। পাকুয়েতার গুণ হলো তিনি যে কোনও জায়গায় খেলতে পারেন। আক্রমণমুখী মিডফিল্ডার, লেফট উইঙ্গার, এমনকি আরও নিচে নেমে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। ৯০ মিনিটে তিন জায়গায় খেলেছেন এমন উদাহরণও রয়েছে। নেইমারের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালো। সব সময়েই এই দু’জনে খেলার ধারা বদলাতে পারেন। প্রয়োজনে ফ্রেড নামবেন। নেইমার ছাড়া বাকি সকলেরই একটি অভিন্ন চরিত্র হলো তাঁরা হাই প্রেসিংয়ে অভ্যস্ত। যে অস্ত্রে ব্রাজিলকে আটকে রাখা হত, এবার তারাই পালটা সেই অস্ত্র প্রয়োগ করতে চলেছে। নেইমার নিজে বলেছেন, তিনি যতদিন খেলছেন এটাই সেরা দল। 


তবে, রক্ষণ নিয়ে ততো নিশ্চিন্ত নন তিতে। রাইট ব্যাকে ডানিলোই প্রথম দলে থাকবেন আশা করা যায়। ৩৯ বছরের দানি আলভেসকে মাঠে নামানোর ঝুঁকি নেবেন বলে মনে হয় না। তবুও তাঁকে দলে নেবার বড় কারণ আক্রমণভাগকে বল জোগাতে তিনি ওস্তাদ। কখনও তেমন প্রয়োজন হলে আলভেস খেলবেন। থিয়াগো সিলভা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মার্কুইনহোস এখন বিশ্বের সেরা মার্কারদের অন্যতম। আকাশের বলে তাঁকে হারানো কঠিন। কিন্তু বাঁ প্রান্তে আলেক্স সান্দ্রো বা আলেক্স টেলেসকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার সুযোগ নেই। সম্ভবত এই জায়গাই হবে ব্রাজিলের দুর্বলতম।  
 

Comments :0

Login to leave a comment