২০১৪ এবং ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতির ভান্ডার তুলে ধরেছিল। জনসভার বক্তৃতার পাশাপাশি সেই প্রতিশ্রুতিগুলি লিখিত ভাবে ঠাঁই পেয়েছিল বিজেপির ইস্তেহারেও। কিন্তু গত ১০ বছরের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, সেই প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল।
২০১৪ সালে বিজেপির ইস্তেহারে অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ। সেই সময় বিজেপির দাবি ছিল, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর পাশাপাশি মজুতদারি এবং কালোবাজারির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাদ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক করতে বিশেষ তহবিল তৈরিও প্রস্তাব দেয় বিজেপি। কালোবাজারি রোধে বিশেষ আদালত গঠনের প্রতিশ্রুতিও ছিল বিজেপির ইস্তেহারে।
সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কতটা হল? কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ সালে সারা দেশে গমের গড় দাম ছিল কিলোপ্রতি ২১.৬৪ টাকা। ১০ বছরে সেটা বেড়ে হয়েছে ৩২.৪৭ টাকা। শতাংশের হিসেবে বৃদ্ধির হার ৫০.০৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ সালে দেশে দুধের লিটার পিছু গড় দাম ছিল ৩৬.৮৪ টাকা। ২০২৩-২৪ সালে এসে সেটা হয়েছে ৫৭.৩৬ টাকা, বৃদ্ধির হার ৫৫.৭ শতাংশ।
২০১৪-১৫ সালে সাধারণ মানুষ ২৫টাকা কিলোয় টমোটো কিনতেন। ১০ বছর পরে সেই একই সবজী কিনতে খরচ হয় ৪২টাকার কিছু বেশি। বৃদ্ধির হার ৬৬.৫৭ শতাংশ। একইসময়কালে পাঁঠার মাংসের দাম ৩৫০টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮২০ টাকা, বৃদ্ধির হার ১৩৪.২৮ শতাংশ। মুরগীর মাংসের দাম ১২৫টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭০টাকা, বৃদ্ধির হার ৩৬ শতাংশ।
গত দশ বছরে সর্ষের তেলের দাম ৯৭.৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫৪.৬৮ টাকা। দাম বেড়েছে ৫৮.৪ শতাংশ। আম জনতা আজ থেকে দশ বছর আগে সাদা তেল কিনতেন ৯৩.৩২ টাকা লিটারে। এখন একই পরিমাণ তেল কিনতে খরচ হয় ১৫২.৯৫ টাকা। ৬৩.৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। যেই নুন ১০ বছর আগে পাওয়া যেত ১৪.৫১ টাকায়, এখন সেটা মিলছে ২২.০৪ টাকায়। দাম বেড়েছে ৫১.৮৯ শতাংশ। একইভাবে ২৮টাকার চাল বেড়ে হয়েছে ৪০টাকা এবং ২৩ টাকার আটা হয়েছে ৩৭ টাকা। দুটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে গড় দাম বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ এবং ৫৯ শতাংশ।
এর পাশাপাশি সাধারণ মানের চা পাতা, ডিম, সোয়াবিন তেল, পাম তেল, গুড়, বিভিন্ন ধরনের ডাল সহ সমস্ত খাদ্যপণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। ৪১০ টাকার রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়ে হয়েছে ১১০৩ টাকা। ভর্তুকি থাকলে সেটা কিছুটা কম, ৮০৩ টাকা। যদিও নির্বাচনের আগে কিছু ভোট বাড়ানোর আশায় কেন্দ্র রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ৩০০ টাকা কমিয়েছে। সেই ছড় কতদিন বলবৎ থাকবে তা যদিও স্পষ্ট নয়।
কেন্দ্রীয় ক্রেতা উপভোক্তা মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই তালিকা গড় দামের একটা আভাস দেয়। জায়গা বিশেষে দামের সামান্য কিছু হেরফের হতে পারে। খুচরো বাজারে তালিকার থেকে বেশি দামে পণ্যগুলি কেনার অভিজ্ঞতা রয়েছে আম জনতার। কিন্তু তালিকা থেকে স্পষ্ট, দেশের এমন কোনও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য নেই, গত ১০ বছরে যার দাম বাড়েনি, কিংবা একই থেকেছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে খাবারের দাম বেড়েছে, সাধারণ মানুষের বেতন কিংবা আয় তার অনুপাতে বাড়েনি। তাই বাড়তে থাকা জিনিসের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে প্রকৃত আয় কমছে সাধারণ মানুষের।
Comments :0