শনিবার সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একগুচ্ছ ডিজিটাল পোস্টার পোস্ট করা হয়। তথ্য নির্ভর এই পোস্টারগুলি ইতিমধ্যেই টুইটার ছাড়িয়ে ফেসবুক সহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে শেয়ার হতে শুরু করেছে দ্রুত হারে।
পোস্টারে বলা হয়েছে, ধানে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হল কুইন্টাল পিছু ২১৮৩ টাকা। একই ফসলে কেরালার বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকারের ঘোষিত সহায়ক মূল্য হলো কুইন্টালে ২৮২০ টাকা।
আরেকটি পোস্টারে সিপিআই(এম) বলছে, ২০১৪ সালে বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) দেওয়া হবে। কিন্তু ২০১৫ সালে খোদ বিজেপি’র তরফে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলা হয়, সরকারের পক্ষে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব নয়, কারণ এর ফলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, দেশে কৃষিসঙ্কট মোকাবিলায় এমএস স্বামীনাথন কমিশনের তরফে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কৃষি খরচের দেড়গুণ অর্থ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে কৃষকদের দিতে হবে। সি২+৫০ শতাংশ ফর্মুলাকে দেশের কৃষি বাঁচানোর লাইফলাইন মনে করা হলেও, মোদী সরকার সেটি চালু করেনি। কৃষি উৎপাদনের খরচ হিসেবে সবদিক বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার খরচের একটি অলশকে কেবল বিবেচনায় রাখছে। সেই নীতি চালু না হওয়ার ফলে কৃষি সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করতে আইন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তিন কৃষি আইন বাতিলের পাশাপাশি এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দিল্লি ঘিরে বছরভর চালানো আন্দোলন তুলে নেন কৃষকরা। কিন্তু আইন তৈরির দিকে এক পা-ও এগোয়নি মোদী সরকার। যে কারণে ফের কৃষকরা নেমেছেন রাস্তায়।
তথ্য দেখাচ্ছে, ১০ বছরে ১ লক্ষের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০২৩ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র রিপোর্ট বলছে, ভারতে প্রতি ঘন্টায় ১জন কৃষিক আত্মহত্যা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এবং সাম্প্রতিক দিল্লি ও পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি হল সমস্ত ফসলের এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টি।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিজেপির অপর প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা। কিন্তু সরকারি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ২০১১-১২ সালের তুলনায় ২০১৮-১৯ সালে কৃষকদের আয় কমেছে। ২০১১-১২ সালে যেখানে মাসিক গড় আয় ছিল ২৮৫৫ টাকা, ২০১৮-১৯ সালে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮১৬ টাকা।
কৃষকদের আয় কমলেও মূল্যবৃদ্ধি থেমে থাকেনি। মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র। সহজেই অনুমান করা যায়, এই দুইয়ের যোগফলে কিভাবে পিষ্ট হচ্ছেন দেশের অন্নদাতারা। এই বিষয়টিকেও পোস্টারের আকারে প্রচারে এনেছে সিপিআই(এম)।
ডিজিটাল প্রচারে সিপিআই(এম) বলছে, ২০১৪ সালে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রতি মরশুমে এমএসপি’র অঙ্ক বাড়ানো হবে। বিবেচনায় রাখা হবে সার, বীজ বা বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, হয় এমএসপির পরিমাণ স্থবির থাকছে, কিংবা বাড়লেও অত্যন্ত স্বল্প হারে বাড়ছে। অপরদিকে এমএসপি বৃদ্ধির হারের সঙ্গে কৃষিখাতে খরচ বৃদ্ধির হার সামঞ্জস্যপূর্ণ না থাকার ফলে দেশে কৃষি সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।
Comments :0