লালঝান্ডার মিছিলে বাড়ছে ভিড়। ভাঙছে ভয়ের আগল। ফিরছে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার প্রত্যয়। ঐক্যবদ্ধ জনতার সেই জোট বুকে কাঁপন ধরিয়েছে। তাই রবিবার দুপুরে সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালাল তৃণমূল। ঘটনাস্থল হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাঁকরাইল বিধানসভা ধুলাগোড়ী অঞ্চল। যদিও ঘটনার সঙ্গেসঙ্গে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করেন সাধারণ মানুষ। এগিয়ে আসেন মহিলারা। পালাতে বাধ্য হয় তৃণমূলী দুষ্কৃতিরা।
সাঁকরাইল বিধানসভার ধূলাগোড়ী বাঁশতলা থেকে রবিবার সকালে বামফ্রন্ট প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জির নির্বাচনী প্রচার মিছিল শুরু হয়। মিছিলে প্রার্থী ছাড়াও সিপিআই(এম) নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষ,তরুণ ব্যানার্জিরা উপস্থিত ছিলেন। বামপন্থী কর্মী,সমর্থকদের পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দারাও ভালো সংখ্যায় মিছিলে যোগ দেন। এই তল্লাটে তৃণমূলের সন্ত্রাসে গত এক দশক ধরে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি এলাকার বাসিন্দা। মিছিল ধূলাগোড়ী উত্তরপাড়া,মল্লিক পাড়া,দেওয়ান পাড়া, কোলড়া মোড় হয় বাদাম তলায় শেষ হয়।
মিছিল শেষ করে প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জী সহ পাটি নেতৃবৃন্দ অন্য কর্মসূচিতে চলে যান। স্থানীয় সিপিআই(এম) কর্মীরা যে যার এলাকায় ফিরে আসার সময়ে ধূলাগোড়ী উত্তরপাড়া বিহারী গলির সামনে প্রার্থীর সর্মথনে লাগানো ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলে সিপিআই (এম) কর্মীদের গালিগালাজ শুরু করে ধূলাগোড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আক্তার লস্কর, আনিসুর লস্কর, আজা মল্লিকের নেতৃত্বে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। অতর্কিতে সিপিআই (এম) কর্মীদের উপর হামলা চালায়। কেন এই এলাকায় লাল পতাকার মিছিল হয়েছে, কেন এলাকার লোকজন মিছিলে হেঁটেছে সেই প্রশ্ন তুলে রাস্তায় ফেলে লোহার রড, লাঠি দিয়ে ব্যাপকভাবে মারধোর করা হয় সিপিআই (এম) কর্মীদের। জখম হন সিপিআই(এম) কর্মী নূর আলম সেখ ও মিঠু সেখ।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের হাজি এসটি মল্লিক হাসপাতালে নিয়ে যান। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোটের আগে এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতেই এই হামলা। আক্রান্ত সিপিআই(এম) কর্মীদের বাড়ি থেকে মহিলারা এরপর রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও রাস্তায় নেমে ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তাঁরা ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
ঘটনার খবর পেয়েই ধূলাগোড়ীর ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন প্রার্থী সব্যসাচী চ্যাটার্জি। এরপর দুপুরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে এলাকার ভীত সন্ত্রস্ত প্রতিটি বাড়িতে যান তিনি। আবেদন করেন তৃণমূলের কোন প্ররোচনায় পা না দেওয়ার ও এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার। তিনি বলেন, সিপিআই(এম) শক্তিশালী হচ্ছে দেখেই মানুষকে ভয় দেখানো,এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করার কাজ করছে তৃণমূল কংগ্রেস। আমরা এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে চাই। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে জেলা প্রশাসনকে।
প্রার্থীকে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান ১২ বছর ধূলাগোড়ী অঞ্চলের ১১ টি বুথে কোন নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে দেয়না তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল, বিশেষত সিপিআই(এম) এর কোন কাজকর্ম করা চলবে না বলে ফতোয়া জারি করা আছে। রবিবার শাসক দলের সেই ফতোয়াকে উপেক্ষা করে যখন এলাকার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে বামপন্থী প্রার্থীর সমর্থনে, তখনই আক্রমণ চালানো হলো।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান ধূলাগোড়ী শিবতলায় বামফ্রন্ট প্রার্থীর সর্মথনে দেওয়াল লিখন মুছে দিয়েছে শাসক দলের কর্মীরা। ইতিমধ্যেই এই এলাকার উত্তরপাড়া শিবতলা অঞ্চলে সব্যসাচী চ্যাটার্জীর সর্মথনে বহু মানুষ প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। এতেই ভয় পেয়েছে তৃণমূল।
স্থানীয় মহিলারা সব্যসাচী চ্যাটার্জীকে বলেন সিপিআই (এম) করার জন্য এলাকায় ভয় দেখানো হচ্ছে ও বাড়িতেও হামলা করা হচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়ে কোন কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
Comments :0