NEWSCLICK

সকালে হানার আগে রাতে গোপন বৈঠক, কিন্তু অভিযোগের সপক্ষে কোন প্রমান হাতে নেই তদন্তকারিদের

জাতীয়

২০০ জন দিল্লি পুলিশের আধিকারিককে নিয়ে সোমবার গভীর রাতে বৈঠক। তারপর মঙ্গলবার সকালে নিউজক্লিকের একের পর এক কর্মীর বাড়ির হানা। কোথাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ল্যাপটপ, কোথাও ফোন তো কোথাও গ্রেপ্তার হয়েছেন সংবাদ সংস্থার আধিকারিক। তদন্তের নাম করে দিল্লিতে তুলে আনা হয়েছে নিউজক্লিকের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ, সাংসবাদিক প্রনয় গুহঠাকুরতা এবং উর্মিলেশকে। নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সাথে নাকি চীনের যোগাযোগ রয়েছে। চীনের হয়ে একাধিক প্রতিবেদন নাকি এই সংস্থার পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এই অভিযোগ কারা করছে? ইডি। 


উল্লেখ্য নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অনেকদিনের কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই বিষয় কোন তথ্য প্রমান সামনে আনতে পারেনি দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে নিউজক্লিকের এক কর্মীর বাড়ি পুলিশি হানা এবং তার ল্যাপটপ ও ঙোবাইলফোন বাজেয়াপ্ত করার গটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিক মহল। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, ‘‘সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের ওপর এই ধরনের আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ আমরা করছি। আমরা দাবি করছি সরকার অবিলম্বে সব তথ্য প্রকাশ করুক।’’ 
সূত্রের খবর সোমবার রাতের বৈঠকে ঢোকার আগে সব পুলিশ আধিকারিদের নিজেদের মোবাইলফোন বাইরে রাখতে হয়। এদিন সকালে মুম্বাইয়ে প্রয়াত সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদের বাড়িতেও তল্লাসি চালায় দিল্লি ও মুম্বাই পুলিশের যৌথ দল। 


পুলিশ সুত্রে খবর ইউএপিএ এবং ভারতীয় দন্ডবিধি ষড়যন্ত্র মূলক অপরাধের ধারার ভিত্তিতে ৩০টি জায়গায় তারা তল্লাসি চালিয়েছে। 
মোদী জমানায় গণতন্ত্রের সবগুলি স্তম্ভ আক্রান্ত। স্বভাবতই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও বিপন্ন। গত ৩ মে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স যে প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ১১ ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে ভারত। ২০২২-এ ছিল ১৫০, ২০২৩-এ তা হয়েছে ১৬১। মোট ১৮০টি দেশকে নিয়ে এই তালিকা তৈরি হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের সাংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা সংকটে। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকারে আসার পর মিডিয়াতে কর্পোরেট আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


অধিকাংশ বড়-বড় সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল মোদী সরকারের তাঁবেদারী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।  মোদীর গুণকীর্তনই তাদের কাজ। কিন্তু সংখ্যায় অল্প হলেও যে সমস্ত সংবাদমাধ্যম নিজেদের স্বাধীন সত্তাকে ধরে রাখে, ক্ষমতার মুখের ওপর সত্যি কথাটা বলে, সরকারের সমালোচনা করে, সেই সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা ‘দেশবিরোধী শক্তি’-র কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে ‘দেশপ্রেমিক’ সরকারকে উচ্ছেদের ‘বিশ্বব্যাপী চক্রান্তের অংশ’ হিসেবে কাজ করছেন। এই জিগির তুলে বেশ কিছু সাংবাদিক, টেলিভিশনের সঞ্চালক, ইউটিউব-এ যাঁরা জনশিক্ষামূলক করে থাকেন তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা দিয়ে হেনস্তা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে বর্তমানে। এমনকি সংঘ পরিবারের বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সরাসরি দাবী তোলা হয় কয়েকজনকে খুন করার, নিদেনপক্ষে ফাঁসি দেওয়ার। এই তালিকায় কে নেই? সাংবাদিক রানা আইয়ুব, ‘অল্ট নিউজ’ নামক সংবাদ সংস্থার কর্ণধার মহম্মদ জুবেইর, স্বাধীন সাংবাদিক ফায়ে ডিসুজা, বরখা দত্ত, ইউটিউব-এ সক্রিয় ধ্রব রাঠোর, রাভিশ শর্মা সহ আরও অনেকেই।

Comments :0

Login to leave a comment