EDITORIAL

দিল্লির বদলে বেজিঙয়ে মুস্কের বিমান

সম্পাদকীয় বিভাগ

Elon musk editorial

৪০০-র বেশি আসনে জিতে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার গর্বিত ও দাম্ভিক উচ্চারণ যখন নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্র বিন্দুতে উঠে আসে ঠিক তখনই গোদী মিডিয়ায় ঝড়ের বেগে বার্তা ছড়িয়ে পড়ে ভোটের মধ্যেই আসছেন মার্কিন ধনকুবের এলন মুস্ক। মুখোমুখি বসবেন একই সঙ্গে বিদায়ী ও হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। মুস্ককে ভারতে আনার এবং তাকে দিয়ে ভারতে বড়সড় বিনিয়োগের কথা বলানোর তোড়জোড় চলছে অনেকদিন থেকেই। মোদীর দূত হয়ে সরকারি কর্তারা লাগাতার দৌত্যকর্ম চালিয়ে গেছেন। স্বয়ং মোদী মার্কিন সফরে গিয়ে মুস্কের সঙ্গে দেখা ক‍‌রে ভারতে আসার এবং বিনি‍‌য়োগ করার জন্য অনেক অনেক অনুরোধ উপরোধ করেছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম ইলেকট্রিক গাড়ির উৎপাদক টেসলার মালিক বিশ্বের ধনীতম শিল্পপতি মুস্ক। পরিবেশ দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে যখন তেলের বদলে বিদ্যুতের গাড়ির চাহিদা বাড়ছে তখন ভারতের বাজারে টেসলাকে এনে চমকে দিতে চেয়েছিলেন মোদী। মুস্ক যদি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি উৎপাদনে ভারতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে নির্বাচনে সেটা হবে চাঁদে হাত দেবার মতো। তাই মোদীরা উঠে পড়ে লেগেছিলেন যেভাবেই হোক মুস্ককে ভারত সফরে রাজি করিয়ে বিনিয়োগ ইচ্ছা প্রকাশ করানো। সেটা নির্বাচন শুরুর আগে সম্ভব না হলেও অন্তত শুরু হবার পরে হলেও আপত্তি নেই। মুস্কের সঙ্গে দীর্ঘ দরকষাকষির পর মুস্কের কিছু শর্ত মেনে ভোটের মুখেই নতুন ইলেকট্রিক গাড়ি নীতি ঘোষণা করে সরকার। তাতে ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় আরও বেশ কিছু সুযোগ সুবিধাদানের। মুস্কের আর একটি শর্ত ছিল টেলিকম স্পেকট্রাম বণ্টনে নিলামের বদলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত চালু করা। সেই শর্ত মেনে নতুন টেলিকম আইন তৈরি করা হয়। কিন্তু বাধ সাধে টু’জি স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে ২০১২ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়। সেই রায়ে স্পেকট্রাম বণ্টনে নিলাম বাধ্যতামূলক। মুস্ককে খুশি করতে মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে ১২ বছর আগের সেই রায় সংশোধনের আবেদন করেছে।
মোদী সরকারের কাকুতি মিনতিতে মুস্ক নিমরাজি হয়েছিলেন ভারতে এসে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করে ভারতে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করবেন। সেটা নির্বাচনী প্রচারে জোরদার হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মুস্ক জানিয়ে দেন টেসলার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আপাতত তিনি ভারতে যাচ্ছেন না। এবছরে কোনও এক সময় যে‍‌তে পারেন। সফর বাতিলের ঘোষণার পর এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই নিজের বিমানে চেপে তিনি পৌঁছে গেলেন বেজিঙে। চী‍নের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে চীনের বাজারে টেসলার চালকহীন ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রি শুরু করার কথা ঘোষণা করেন। আর সেই গাড়ি ‍তৈরি হবে সাংহাইয়ে অবস্থিত টেসলার সর্ববৃহৎ কারখানায়।
চীনের সঙ্গে আমেরিকার সাম্প্রতিককালের সংঘাতকে কেন্দ্র করে একটা হাওয়া তোলা হয় বিশ্বের গাড়ি, চিপ সহ অন্যান্য উৎপাদন সংস্থাগুলি চীনে নতুন করে বিনিয়োগ করবে না। উৎপাদন কেন্দ্রও চীন থেকে অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে যাবে। এই আবহে মোদী বাহিনী খোয়াব দেখতে শুরু করে বহুজাতিক উৎপাদন সংস্থাগুলি দলে দলে চীন থেকে ভারতে ঘাঁটি গাড়বে। গোদী মিডিয়ায় রব ওঠে শীঘ্রই ভারত গাড়ি শিল্প ও চিপ শিল্পের আন্তর্জাতিক হাব হয়ে উঠবে মোদীর নেতৃত্বে। মোদীতে যে মুস্কদের আস্থা নেই দিল্লির বদলে তার বেজিঙ সফরেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment