সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদী ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সেই ভয়ঙ্করী তিস্তা, টোটগাও বস্তি গ্রাস করার পথে। বাগ্রাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ পশ্চিমে টোটগাও বস্তীকে ঘিরে তিস্তা নদী। বুধবার বিকাল থেকে তিস্তার জল বস্তীর দিকে ধাবিত হয়ে বেশ কিছু বাড়ি জলমগ্ন। আর এতেই আতঙ্কিত গ্রামবাসী। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে গ্রামবাসীদের এলেনবাড়ি ও মানা লাইন স্কুলে রাখা হয়েছে বন্যার আশঙ্কা করে। স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা পবন প্রধান ও মনু ওরাও টোটগাও বস্তীতে যান ও গ্রামবাসীদের পাশে দাড়ান। পবন প্রধান বলেন, টোটগাওকে বাঁচাতে সেচ বিভাগের প্রটেকশন বাধ দেওয়া দরকার।
মঙ্গলবার অতি ভারী বৃষ্টির কারণে কার্যত স্বাভাবিক জনজীবন অচল হয়ে পড়েছিল জলপাইগুড়ি জেলা জুড়েই, তার ওপর সিকিমের বিপর্যয়ের কারণে তিস্তা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সাড়া দিন বন্যার আশঙ্কা নিয়েই কাটে জলপাইগুড়িবাসীর।
এরপর রাত হতেই দেখা দেয় হাতির আতঙ্ক, প্রবল বৃষ্টিতে দিশেহারা হাতির পাল শহর সংলগ্ন বৈকুন্টপুর বনাঞ্চল থেকে রোজকারের মতো তিস্তা নদী পেরিয়ে যেতে না পারায় বারোপেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।
শহর মুখি হাতির পাল এই খবর পেয়েই বোদাগঞ্জ রেঞ্জের বন কর্মীরা রাতেই হাতির গতিবিধি পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন।
রাত ৯ টা নাগাদ প্রায় সাতটি হাতিকে বারো পেটিা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের কাছাকাছি একটি মাঠে অবস্থান করতে দেখা যায়। এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জলপাইগুড়ি শহর মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। যে কারণে বন্যার আশঙ্কা কিছুটা দূর হতেই হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে জলপাইগুড়ি গভর্মেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান এবং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন গোসালা মোড় প্রভৃতি এলাকায়।
বুধবার সাতসকালে তিস্তা নদীতে হড়পা বান আসে। যেখানে মূলত পাহাড়ি অঞ্চলের সিকিম থেকে এই বন্যার সৃষ্টি হয়। তিস্তা নদীর জল মুলত নিচু জায়গা গুলোতে ঢোকা শুরু করে ক্রান্তি ব্লকের বাসু, সুবা সাহেব বাড়ি, চাত্রা পার এবং গজল ডোবার বেশ কিছু জায়গায়। সারাদিন সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা এবং এনডিআরএফ টিম সকলে মিলে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ভিন্ন জায়গায় উপস্থিত থাকেন। ক্রান্তি ব্লকের বাঁশি সুবা হাইস্কুলে একটি সেল্টার হোম এর ব্যবস্থা করা হয় যেখানে বন্যায় প্রাবলিত কিছু সাধারণ মানুষ আশ্রয় নেন। সে সমস্ত বন্যা পরিস্থিতি জায়গাগুলোতে ব্রাইট ফিউচার ফ্রী টিউশন সেন্টারের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার এবং জলের বোতল পুরো রাতভর বিতরণ করা হয়। এদিন প্রায় দুইশত মানুষের কাছে শুকনো খাবার এবং জলের বোতল দেওয়া হয়। এছাড়া প্রশাসনের আধিকারিকগণ ক্রান্তি আউটপোস্টের এবং শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন থানার বেশ কিছু পুলিশ কর্মী গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজে বন্যার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সারারাত ডিউটি করেন। তাদের কাছেও ব্রাইট ফিউচার ফ্রী টিউশন সেন্টারের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার এবং জলের বোতল বিলি করা হয়। ব্রাইট ফিউচার ফ্রীটিউশন সেন্টারের কর্ণধার মোঃ নূর নবীবুল ইসলাম বলেন যেখানে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদের কাছে গিয়ে যার যতটুকু সমর্থ পাশে দাঁড়ান মানুষ মানুষের জন্য।
Comments :0