Post Editorial

যাদবপুর: ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে

উত্তর সম্পাদকীয়​

প্রথম কথা, স্বপ্নদীপের খুনিদের শাস্তি চাই। এটা প্রথম কথা। এর কোনো নড়চড় হবে না। হওয়া উচিত না।
দুই তিন চার নম্বর কথাগুলো যে যার মতো সাজাচ্ছেন। আমিও একটু চেষ্টা করি। শুরু করা যাক এটা বলে যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এক জিনিস নয়। স্বপ্নদীপ এই নরখাদকদের হাতে পড়ার আগে মা’কে ফোন করে বলেছিল, কাফিদার ক্লাস খুব ভাল লেগেছে। ওটাও যাদবপুর। বরং, ওটাই যাদবপুর।
এনআইআরএফ র্যা ঙ্কিংয়ে এই বছরও, এই ২০২৩ সালে, যাদবপুর পশ্চিমবঙ্গের এক নম্বর এবং ভারতের চার নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ালেখা তো বটেই, পড়ালেখার পরিবেশ, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, খোলা মনে ভাবনাচিন্তা করতে শেখা ও শেখানোর পরিসর, ছাত্রদের মধ্যে বিতর্কের অভ্যাস, সিলেবাস, কারিকুলাম, অধ্যাপকদের যত্ন, খেলাধুলো, সংস্কৃতি- সব মিলিয়েই যাদবপুরের এই পরিচিতি ও স্বীকৃতি। একদিনে তৈরি হয়নি। যাদবপুর ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল, স্বদেশী আন্দোলনের ফসল।
প্রশ্নটা ‘চান্স পেয়ে দেখা’র নয়। সেসব কেউ বলতে পারে, কত লোকে তো কত কী বলে, তাতে কী যায় আসে। প্রশ্নটা বিচ্ছিন্নতাকে কীভাবে দেখব। দুনিয়ার অন্যান্য বহু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই যাদবপুরেও গরিব বড়লোক উভয়েই পড়তে আসে। আর পাঁচটা ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমে যেমন ক্ষমতা, শ্রেণি, পরিচিতিসত্তা ইত্যাদি ধারণার আদানপ্রদান (বা ইন্টারপ্লে) ঘটতে থাকে, যাদবপুরেও তাই হয়। যারা পড়তে আসে, তারা মঙ্গলগ্রহ থেকে যাদবপুরে আসে না। আমার আপনার বাড়ি থেকেই শিখে আসা ভালমন্দগুলো বহন করে আসে। তার মধ্যে পুরুষতন্ত্র থাকে, সাম্প্রদায়িকতা থাকে, জাতপাতের বিচার থাকে। ক্ষমতার আস্ফালন থাকে। এসব তো সব জায়গায় থাকে। আপনি যে অফিসে বা ক্যাফেতে বা মিনিবাসে বসে এই লেখাটা এখন পড়ছেন, সেখানেও, আপনার আশপাশের লোকদের মধ্যেও আছে। এদের ছেলেমেয়েরাই যাদবপুর। এদের ছেলেমেয়েরাই বর্ধমান, কল্যাণী, উত্তরবঙ্গ, বিদ্যাসাগর।
ফলত, যাদবপুর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়।

***********

ভাল্লাগছে না?
যাদবপুর-সুলভ হয়ে যাচ্ছে? আঁতেল, বাম-সুলভ? আচ্ছা, ভেঙে বলি। প্রাক্তন এসএফআই নেতা, বর্তমানে সিপিআই(এম) এমপি ভি শিবদাসন ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রকের কাছে আরটিআই করে সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র আত্মহত্যার খতিয়ান জানতে চেয়েছিলেন। বিজেপি'র সরকারের রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে  ৯৮ জন ছাত্রের আত্মহত্যার খবর এসেছে দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে। আইআইটি-গুলিতে ৩৯ জন, এনআইটি-গুলিতে ২৫ জন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ২৩ জন, এবং আইআইএম বা আইসার ধরলে আরো ৯জন। শুধু ২০২০ থেকে এইমস-গুলিতে ১৩ জন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। মানসিক অবসাদ ও আত্মহত্যার ঘটনাগুলির দুটি বড় কারণ। এক, প্রত্যাশার চাপ। দুই, র্যা গিং। 
মুশকিল হলো, এই ইন্সটিটিউশনগুলিতে সিসিটিভি থাকে। এই ইন্সটিটিউটগুলির সর্বত্র ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। বামপন্থার নামগন্ধ নেই। ‘মুক্তচিন্তার নাম করে স্বেচ্ছাচার’ করার সুযোগ এই প্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্ররা পায়, এ অভিযোগ সচরাচর কেউ করে না। 
তাও, এই পরিমাণ ছাত্রের আত্মহত্যা হচ্ছে। অধিকাংশই আসলে হত্যা। প্রাতিষ্ঠানিক, বা পারিপার্শ্বিক, খুন।

*********
সিসিটিভি নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হতে পারে। তবে, সেটা মূল ইস্যু নয়। আসল কথা, অসহিষ্ণুতা। বিকৃতি। বিপুল আর্থসামাজিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ে নিজের অবদমিত ফ্রাস্ট্রেশন ঝেড়ে ফেলার উদগ্র ইচ্ছা। মূল্যবোধের সঙ্কট। মনের ভেতরের পশুটাকে বের করে আনে। এই নৃশংস মজাটা স্বপ্নদীপের ভাল লাগছে না, ওর ভয় করছে, চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠছে - এটা দেখেও তখন আর থামতে পারা যায় না। 
অপেক্ষাকৃত দুর্বলের উপর, অপেক্ষাকৃত সবলের আস্ফালন। মোদী-মমতারা কায়দা করে আম্বানি-আদানিদের চোখের আড়ালে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর, সৌরভদের সামনে জিঘাংসার খাদ্য হওয়ার জন্য ফেলে দিয়েছেন স্বপ্নদীপদের।

কড়া র্যা গিং-বিরোধী আইন দরকার। প্রতিটি র্যা্গিংয়ের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার। পোটেনশিয়াল অপরাধীরা যাতে সাহস না পায় কখনো আইনের ভয়ে। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। দ্বিমত থাকবেই বা কেন? বামফ্রন্ট সরকারের আমলে, সম্ভবত ২০০৩ সালে, রাজ্যজুড়ে অ্যান্টি র্যােগিং সেল গড়ে তুলতে উদ্যোগ তো নিয়েছিল এসএফআই-ই। র্যা্গিংয়ের প্রতিবাদ করে খুন হয়ে যাওয়া ছাত্রকর্মী অবধি রয়েছে এসএফআই-এর শহীদ তালিকায়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই যাদবপুরে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্টস ইউনিয়নটির দায়িত্বে রয়েছে এসএফআই। বিগত সাড়ে ৩ বছরে তারা অন্তত হাফডজন চিঠি পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছে র্যা গিংয়ের অপরাধপ্রবণতা সম্বন্ধে। শেষ চিঠিটা এই ২০২৩ সালের জুলাই মাসে লেখা, স্বপ্ন-খুনের এক মাস আগে। রেজিস্ট্রার একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় ব্যস্ত ছিলেন, পড়ে দেখতে পারেননি হয়তো সে চিঠি। কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অপদার্থতা ও ছাত্র খুনের পর গা বাঁচানোর প্রয়াস, চোখে তো পড়ছে সবটাই। সেই এসএফআই-কেই তো এই ভয়ানক ঘটনার পর মেইন হস্টেল থেকে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সরানোর জন্য চাপ দিতে হল। র্যা গিং, এবং তা রুখতে যে কোনোরকম ব্যবস্থার পাশে এসএফআই সবসময় থেকেছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সংকীর্ণতার কারবারিরা নিশ্চিন্ত থাকুন।

************
ঢাক পেটানোর বিষয় না। ছুঁয়ে যেতে হলো খানিক, কারণ তৃণমূল-বিজেপি এবং মিডিয়া (সরি, মিডিয়ার একাংশ, এই শব্দটা না বললে আবার তেনারা রাগ করেন) এই ঘটনাটিকে ব্যবহার করে আসলে আক্রমণ করতে শুরু করেছে বামপন্থা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতিকেই। যাদবপুর=বাম=উচ্ছৃঙ্খল=মদগাঁজা=দেশবিরোধী..আরো কী কী সব, ওই একটা চেনা বস্তাপচা সরলীকৃত থিওরি আছে না? আরে, ওই মেইন হস্টেলটা যাদবপুর থানার ঠিক পাশেই। যে পুলিশ অতিতৎপর হয়ে কার্টুন ফরোয়ার্ড করার অপরাধে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেপ্তার করে ফেলেছিল, সেই পুলিশের এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের চাঁইদের খুঁজে বের করতে এত সময় লাগছে কেন? তাহলে কি তৃণমূলের সরকার পুলিশকে বলেছে তদন্ত ধীরে করতে? তাহলে কি অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ তৃণমূলের কোনো নেতা-টেতার পায়ে পড়ে বলেছে, এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও? কোনো গোপন লাইন করে রাখা আছে নাকি কোথাও তৃণমূলের সাথে? সেসব ধরে অন্য রাজ্যে পালিয়ে-টালিয়ে যায়নি তো কেউ? 
যাহ, বলব না ভেবেও ঢুকে পড়লাম। আচ্ছা, ঢুকেই যখন পড়েছি, তখন আরো দুটো কথা বলে যাই। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিএসএফ, সায়েন্সে ডব্লিউটিআই এবং আর্টসে ফ্যাস। তিনটি পাঁচমিশালি জগাখিচুড়ি গিরগিটিময় সংগঠন। ওরা বলে, সংগঠন না, সংগঠনও তো প্রতিষ্ঠান, আমরা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, আমরা মঞ্চ। আচ্ছা তাই সই। এই মঞ্চগুলির মধ্যে থেকে অধুনা তৃণমূল বা বিজেপির নেতা হয়ে বসে আছে এমন লোকও পাওয়া যাবে। কমন ফ্যাক্টর কী? এসএফআই বিরোধিতা।
এসব এখন না বলতে পারলেই ভাল হতো। প্ররোচিত করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। পুরনো বন্ধুদের ভোলেন না তিনি। সেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে, এই আধা-নকশালরাই তো ভূরি ভূরি সাহায্য করেছিল ওনাকে! পূর্ণেন্দু বসু থেকে ছত্রধর মাহাতো হয়ে কিষেণজী অবধি লম্বা লাইন, মাঝে হাইফেনের মতো ঘটকের দল এই ডিএসএফ-বাহিনী। যারা শালবনীতে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সেদিনের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে, তাদের সাথে তৃণমূল কংগ্রেসের লিঙ্কম্যান তো ছিল এই যাদবপুর- প্রেসিডেন্সির তথাকথিত ‘স্বাধীন’ ছাত্রমঞ্চগুলির বরাভয়ে থাকা অতিবিপ্লবীরাই। পিপল হু এঞ্জয় প্রেস্টিজ অফ দ্য লেফট অ্যান্ড প্রিভিলেজ অফ দ্য রাইট। তৃণমূলের শাখা সংগঠন না হলেও, ছায়া সংগঠন তো বটেই। 
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলকে জিততে সাহায্য করেছে এই ‘মুখে জনতা মনে মমতা’ বাহিনী। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সাজসজ্জা আড়ম্বর বিপুল, আদতে তার আড়ালে তীব্র সিপিআই(এম) ও এসএফ আই’র বিরোধিতা। আদর্শগত ভিত্তি হলো গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের ধারণাকে অস্বীকার করে মার্কসবাদ-বিরোধিতার উত্তরআধুনিক দর্শন। এদের গায়ে বাম বাম গন্ধ লেগে থাকতে পারে, তবে এরা বাম নয়। অন্তত, আমি আপনি সমাজতন্ত্রী বলতে যা বুঝি, তা এরা নয় তো বটেই।

*********
আরএসএস-এর দুর্গা মমতা ব্যানার্জি অবশ্য ইস্ট জর্জিয়া থেকে বামপন্থার যে সংজ্ঞা শিখে এসেছেন, তার সাথে এদের এই দেখনদারি বিপ্লবীপনা বেশ মানানসই। উনি এদের পুষে রাখতে চান। যাদবপুরে যতদিন পর্যন্ত না তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সরাসরি শক্তি সঞ্চয় করছে, ততদিন পর্যন্ত এই ছায়া-ছাত্রমঞ্চগুলোর মাধ্যমেই এসএফআই-বিরোধিতার পথ খোলা রাখবে তৃণমূল। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিয়ন আর মেইন হস্টেলের মৌরসীপাট্টা বজায় থাকলেই এদের চলে যায়। এরাও, যথেষ্ট খুশিমনেই, মমতার মধ্যে লেনিন খুঁজে পেয়ে যায়। 
এদেরই ছেলেপুলে ধরা পড়ছে রোজ স্বপ্ন-হত্যার র্যায়গিংয়ের ঘটনায়। যাদবপুর থানা তো মেইন হস্টেলের পাশেই। পুলিশ উপরতলার নির্দেশেই, এদের মৌচাকে ঢিল মারে না কখনো, কিন্তু জানে তো সবই। তথাপি, মমতা ব্যানার্জি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, আগমার্কা সিপিএমরাই এই ঘটিয়েছে।
এরা বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করেছিল। যাদবপুরে ফ্যাস ভেঙে টিএমসিপি তৈরি হয় ২০১২ সালে। তার আগে অবধি টিএমসিপির রাজ্য সভাপতিরা ফ্যাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আসতেন। ২০১৭-তে ডিএসএফ ভেঙে তৈরি হয় যাদবপুরের এবিভিপি। এই সেদিন, ২০২১ সালে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এদেরই বেরাদর আইসি ভেঙে তৈরি হয় টিএমসিপি’র প্রেসিডেন্সি শাখা। 
এই চলমান আন্দোলনের মাঝেও বারবার আক্রান্ত হয়েছে এসএফআই। কখনো এই তথাকথিত ‘স্বাধীন’দের হাতে, কখনো সরাসরি তৃণমূলের হাতে। মিথ্যে চিঠি লিখে বাচ্চা ছেলেটার সই জাল করে এসএফআই কর্মীকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এই ঠান্ডা মাথার অপরাধীরা। পরিষ্কার বলতে হবে। তৃণমূলের আশ্রয়েই বেড়ে ওঠা মেইন হস্টেলের ওই র্যারগিংবাজদের ঠেকের। পুলিশ কর্তৃপক্ষ সরকার সবাই ঘুঘুর বাসা ভাঙার উদ্যোগ নিলে আজ বগুলা থেকে আসা স্বপ্নময় চোখদুটো নিথর হয়ে যেত না। 
*******
তৃণমূল-বিজেপি এখানে এসেছে স্বার্থের রুটি সেঁকতে। স্বপ্ন-খুনের বিচার তাদের মূল অ্যাজেন্ডা নয়। মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা আর গুপ্ত রাখতে দেননি তৃণমূলের এক কচুবন-খ্যাত নেতা। কদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মাইকে দাঁড়িয়ে বলেছেন, র্যা গিং মুক্ত-ফুক্ত তো ঠিক আছে, আসল কথা হলো, কমিউনিস্ট-মুক্ত করতে হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। 
ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে গেছে। এই তৃণমূল নাকি লড়বে আরএসএস-এর বিরুদ্ধে। মিলে সুর মেরা তুমহারা, তো সুর বনে হামারা। 
আচ্ছা, জেএনইউ-তে তো সিসিটিভি আছে। নাজিব আহমেদকে খুঁজে পেয়েছিল সেই সিসিটিভি? আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সিসিটিভি আছে। তাতে করে উপাচার্যের টেবিলে চড়ে কুৎসিৎ গালিগালাজ করতে বেধেছে টিএমসিপি নেতার? কে বিরোধ করেছে প্রয়োজনীয় সিসিটিভির? কে বলল, যাদবপুরে কোত্থাও সিসিটিভি নেই? গণ্ডা গণ্ডা সিসিটিভি আছে বিভিন্ন লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি ও প্রশাসনিক দপ্তরে। আরো দুটো নিরাপত্তার স্বার্থে লাগলে লাগবে, কে আটকাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তায় আছি, নজরদারিতে নেই। সকলের সাথে আলোচনা করে যে কোনোরকম নিরাপত্তার বন্দোবস্তে আমরা আছি। কোনো অসুবিধা নেই। 
তবে, পঞ্চায়েত ভোটেও তো সিসিটিভি ছিল, তাতে কি তৃণমূলের ব্যালট খেয়ে ফেলা আটকানো গেছে?

মিডিয়ার আরেকটি প্রিয় শব্দ হলো, বহিরাগত হঠাও! কিন্তু শুধু যাদবপুর থেকে হঠাও। যেই আমরা বলছি, একদম ঠিক বলেছেন! শুধু যাদবপুর কেন, পশ্চিমবঙ্গের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্টেল, ইউনিয়ন রুম, গভর্নিং বডির মাতব্বরি করার লাইসেন্স কেড়ে নাও বহিরাগতদের হাত থেকে, অমনি আর মুখে রা নেই কারো। রাজি আছে টিএমসিপি? ছাত্রভোট করে, গঠনমূলক ছাত্রসংসদ বানিয়ে বর্তমান ছাত্রদের হাতে যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দিয়ে প্রাক্তনী আর বহিরাগতদের দাপাদাপি বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন তৃণমূল?? ব্লক সভাপতিরা কলেজ ইউনিয়নের মধুভাণ্ডার ছাড়তে রাজি হচ্ছে না, নাকি?
র্যা গিং, বহিরাগত, অপসংস্কৃতি কোনোটাই টার্গেট নয়। লক্ষ্য একটাই। বামপন্থীদের বদনাম করো। যাদবপুরকে ভিলেন বানানোর আড়ালে, বামপন্থাকে ভিলেন বানাও।   
********* 
আস্তে আস্তে খসে পড়ছে মুখোশ। অপরাধীদের সাথে তৃণমূলের ‘বচপন কা পেয়ার’ প্রকাশ্যে আসছে একটু একটু করে। উত্তর তাই আমাদের নয়, উত্তর দিতে হবে ওদের। আমাদের ডিফেন্সিভ হবার প্রশ্নই নেই। তৃণমূল-আশ্রিত ছাত্রমঞ্চগুলির নেতাদের হাতে খুন হয়ে গেল ১৭ বছরের ছেলেটা। এরা র্যা্গিং, অসহিষ্ণুতা এবং আধিপত্যের সংস্কৃতির চাষ করে সর্বত্র। জেএনইউ’তে এবিভিপি নামে, কলকাতা বা বর্ধমান বা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি নামে, আর যাদবপুরে ফ্যাস-ডিএসএফ-ডব্লিউটিআই নামে। এদের ক্ষমা নেই। 
রাজ্যের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে এই অব্যবস্থা আর ছাত্রখুন। শিক্ষামন্ত্রীকে দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। পুলিশমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে পুলিশি অপদার্থতার। তিনি বিলক্ষণ বোঝেন, আবার যে কোনো দিন এরা কাজে লেগে যাবে। আমাদের আশঙ্কা, কিছু গ্রেপ্তারি হতে পারে, যথাযথ সুবিচার তৃণমূল সরকারের হাতে কোনোদিনই মিলবে না। 
আমরা স্বপ্ন-খুনের ঘটনায় নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি। 
************
স্বপ্ন, তুমি আমার ভাই,
তোমার খুনের বিচার চাই।
 

Comments :0

Login to leave a comment