সত্যব্রত ভট্টাচার্য: কলকাতা
একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করার পরেও মাত্রাছাড়া বিল আসায় মাথায় হাত রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থার গ্রাহকদের। ভোটের মরশুমে চুপিসারে স্ল্যাব কমিয়ে ৩ গুণ মাশুল ধার্য করা হচ্ছে! এর ফলে এরাজ্যে বিদ্যুতের দাম আচমকা বেড়ে গিয়েছে, যার হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এককথায় চালাকি করে ইউনিট প্রতি দাম না বাড়িয়ে, হঠাৎ করে ইউনিট ব্যবহারের স্তরের মাত্রা (স্ল্যাব চেঞ্জ) কমিয়ে দিয়ে মোট বিদ্যুতের বিল বেশি আদায় করা শুরু হয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এলাকায়। নবান্নের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা।
অন্যদিকে, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে ইলেকটোরাল বন্ডে ৪৪৪ কোটি টাকা ‘চাঁদা’ দিয়েছে সিইএসসি’র মালিক। বিনিময়ে বৃহত্তর কলকাতায় বিদ্যুতের বিল বেড়েই চলেছে সিইএসসি’র সৌজন্যে। অথচ কয়লার দাম কমেছে প্রচুর, জিএসটি’ও প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই সিইএসসি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) স্ল্যাব চেঞ্জের কায়দায় গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে বিদ্যুৎ মাশুল আদায় শুরু করেছে বলে অভিযোগ।
সাম্প্রতিক একটি বিদ্যুৎবিলে এনার্জি ডিটেইলস’এ ওল্ড ট্যারিফ এবং নিউ ট্যারিফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্ল্যাব বদল করে কিভাবে মানুষের ওপর বাড়তি মাশুল চাপানো হচ্ছে। গ্রাহকদের বক্তব্য, দেখা যাচ্ছে এতদিন যত ইউনিটের জন্য যা দাম দিতেন, তার থেকে কম ইউনিট ব্যবহার করে একই দাম দিতে হবে। চুপিসারে এভাবেই বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম।
দেখা যাচ্ছে, গ্রামীণ ডোমেস্টিকে প্রতি ৩০০ ইউনিটের জন্য তিন মাসের বিল ট্যারিফ অনুযায়ী আসার কথা ১৬৯৯.৫০ টাকা। স্ল্যাব পরিবর্তনের ফলে সেই জায়গায় বিল ১৯৫৯.০৩ টাকা! তেমনই ২৫০ ইউনিট উঠলে বিল আসার কথা যদি হয় ১৫৬৩ টাকা, স্ল্যাব পরিবর্তনে বিল ১৭৪৮ টাকা!
এমনই একটি বিদ্যুৎ বিলে দেখা যাচ্ছে, যেখানে এনার্জি ডিটেলস’এ পুরানো হার (ওল্ড ট্যারিফ) অনুযায়ী প্রথম ৭৭ইউনিটের জন্য ৫ টাকা ৪ পয়সা করে, পরের ৫৮ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৩৩ পয়সা করে, তারপরের স্ল্যাব ৯০ ইউনিটের জন্য ৭ টাকা ১২ পয়সা করে মাশুলের হার ধার্য হওয়ার কথা রয়েছে। এরপরের ২২৫ ইউনিটের জন্য ৭ টাকা ৫২পয়সা করে এবং ১৯৬ ইউনিটের জন্য ৭ টাকা ৬৯ পয়সা ধার্য হবে। ওই বিলে ঠিক তার নিচেই লেখা রয়েছে নতুন হার (নিউ ট্যারিফ)। সেখানে দেখা যাচ্ছে ইউনিট প্রতি চার্জ এক রেখে ইউনিটের পরিমাণ কেটে তিন ভাগের এক ভাগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে! গ্রাহকদের অভিযোগ, ইউনিট কমিয়ে, চার্জ বাড়িয়ে এক ধাক্কায় ৩ গুণ বিদ্যুৎ মাশুল নেওয়া হচ্ছে এভাবে। অথচ তা জানানো হচ্ছে না গ্রাহকদের!
বিদ্যুৎকর্মী ও প্রযুক্তিবিদ আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা প্রশান্ত নন্দী চৌধুরি এব্যাপারে বলেন, এখনো পর্যন্ত যে ট্যারিফ অর্ডার রয়েছে তার সঙ্গে সাম্প্রতিক বিলের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে, এটি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। অর্ডারে নেই, অথচ বিল করা হচ্ছে, অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে সর্বত্র। সুতরাং ভুল স্বীকার করে এই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে ডব্লিউবিএসইডিসিএল-কে। এছাড়াও রাজ্য সরকারকে জবাব দিতে হবে যে পুজোর সময়ে বা অন্যান্য উৎসবে বিদ্যুতে যে ছাড় দেওয়া হয়, তার জন্য বাজেটে কোনও বরাদ্দ রাখা হয় না কেন? এই বিপুল দায় বা দেনা সম্পূর্ণ চেপে বসে ডব্লিউবিএসইডিসিএল’র ওপর। আমাদের দাবি, ওই ছাড়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দ করতে হবে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং তা নগদে মেটাতে হবে।
Comments :0