INSAF JATRA

রাত জাগলো শহীদের গ্রাম গেন্দাগছ

রাজ্য

বিশ্বনাথ সিংহ- উত্তর দিনাজপুর


আর কহো কইভেনি, মাই ভোক লাগিছে, ভাত দেনি, ডুকরে ডুকরে কেঁদে বললেন,শহীদ মনসুর আলমের মা। 
শহীদ মনসুর আলমের হত্যার ইনসাফ চাইতে শীতকে উপেক্ষা করে রাত জাগলো চোপড়ার গেন্দাগছ। ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে  এগারোটা। চোপড়া ব্লকের  দাসপাড়ার গেন্দাগছ গ্রামের আট থেকে আশি সবার মুখে একটাই আওয়াজ শহীদ মনসুর আলমের খুনের ইনসাফ চাই। মঙ্গলবার রাতে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জী আসবেন খবর পেয়ে ভিড় বাড়তে থাকে গ্রামে। মধ্যরাতে সেই ভিড় জন প্লাবনের রূপ নেয়। উপচে পড়া মানুষের সামনে মিনাক্ষী মুখার্জী বলেন, মানুষ নিজের যন্ত্রণায় ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছেন। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী তৃণমূলের হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমে খুন হয়েছিলেন তরুণ ডিওয়াইএফআই কর্মী মনসুর আলম। সেই মাটিতে ইনসাফ চাইতে এত রাতেও কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করে জানাচ্ছেন তাদের যন্ত্রণার কথা। 
শিলিগুড়ি থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলার সোনাপুর গ্রামে পৌছায় ইনসাফ যাত্রা সেখানে সিদ্ধান্ত হয় জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হকের সাথে রাজ্য যুব নেতৃত্ব দাসপাড়া গেন্দাগছ গ্রামে যাবেন শহীদ মনসুর আলমের পরিবারের সাথে দেখা করবেন ও শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
পুলিশ বেকে বসে, যুব নেতৃত্বকে গেন্দাগছ গ্রামে যেতে দেবে না। কিন্তু স্পর্ধার ইনসাফ যাত্রা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ মনসুর আলমের গ্রামে পৌঁছায়। ইনসাফ যাত্রা আসছে এই খবর চাওর হতেই জনতার ভিড় বাড়তে থাকে শহীদ মনসুর আলমে গ্রামের  বাড়ির দিকে। রাস্তায় কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করে থাকেন এবং মনসুর আলমের হত্যার ইনসাফ চান। সেখানে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল মনসুর আলম শহীদ হয়েছেন। তাঁর আত্মত্যাগ আমরা বিফলে যেতে দেব না। রাজ্যে শিক্ষা থেকে শুরু করে রেশন সর্বস্তরের দুর্নীতি। এর যোগ্য জবাব দিতে আমরা জনতার দরবারে ইনসাফ চাইতেই এই ইনসাফ যাত্রার আয়োজন করেছি। শহীদ কমরেড মনসুর আলমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে  পরিবারকে সান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি সমবেদনা জানান। সেখানেই যুব নেত্রীর হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে শহীদ কমরেড মনসুর আলমের মা বললেন, আর কহো কইভেনি, মাই ভোক লাগিছে, ভাত দেনি। 


 

মঙ্গলবার ইসলামপুরে রাত্রিবাস করার পর বুধবার সকালে ইনসাফ যাত্রা শুরু হয়। ইসলামপুর বাস টার্মিনার্সে একটি পথসভা হয়। ওই পথসভায় মীনাক্ষী মুখার্জী বলেন,মানুষ নিজের যন্ত্রণা নিয়ে রাস্তায় নামছে- মানুষই শেষ কথা বলবে। মানুষ আজ বিপন্ন। বিপন্ন মানুষ নিজের অধিকারের দাবিতে আমাদের ইনসাফ যাত্রায় শামিল হচ্ছেন। রাজ্যে চোরের সরকার চলছে। এই চোরের হাত থেকে মুক্তির জন্যই আমাদের ইনসাফ যাত্রা। যুব সমাজ কাজ চায়। কাজের দাবিতে আমাদের ইনসাফ যাত্রা। এদিন ইসলামপুরের পরে গুনজুরিয়া ও ধনতলায় পথসভা হয়। 
ইনসাফ যাত্রার পথ যতই এগোতে থাকে মানুষের ঢল ততোই নামতে থাকে। জাতীয় সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আর্শিবাদ ও অভিনন্দন জানাতে থাকন। 
মানুষের দাবিকে মর্যাদা দিতেই সুর্যাপুর হাটের সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন কলতান দাসগুপ্ত, মিনাক্ষী মুখার্জী। যুব নেতৃত্ব বলেন, গর্বের দেশকে রক্ষা করতে হলে এই ধরণের ইয়ং ব্রিগেড সমাবেশের খুবই প্রয়োজন। সভায় মিনাক্ষী মুখার্জী বলেন, ভোটের জন্যে প্রার্থী বাছাই করতে এই পদ যাত্রা নয়। এটা ইনসাফ যাত্রা অধিকারের যাত্রা, হিসেব বুঝে নেওয়ার যাত্রা। মাথা উচু করে বেঁচে থাকার জন্যে লড়াই, হাটতে হাটতে, হেসে হেসে ৭ জানুয়ারি ইনসাফ যাত্রা কলকাতা পৌছেবে। মানুষের হাতে হাত ধরে ইনসাফ যাত্রা এগিয়ে চলবে রাজ্যের সব এলাকা জুড়ে। বুধবার দীর্ঘপথ অতিক্রম করে ইনসাফ যাত্রা পৌছালো ডালখোলা শহরে। সেখানেই হবে রাত্রিবাস। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর শহরে পৌছাবে ইনসাফ যাত্রা। সেখানেই হবে জেলা যুব সমাবেশ।

Comments :0

Login to leave a comment