শুক্রবার হামাসের হেপাজত থেকে ইজরায়েলে ফিরেছেন ২৪জন পণবন্দি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পণবন্দিরা শারীরিক ভাবে সুস্থ অবস্থাতেই ফিরেছেন। তাঁদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বন্দি হস্তান্তরের চুক্তি অনুযায়ী, ৩৯জন প্যালেস্তিনীয়কে মুক্তি দিয়েছে ইজরায়েল।
ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের নাবলুস শহরে মুক্তি পাওয়া প্যালেস্তিনীয়দের নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের ফুলের মালা পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। মুক্তি সমারোহে প্যালেস্তাইনের পতাকার পাশাপাশি হামাসের পতাকারও দেখা মিলেছে। অপরদিকে মুক্তি পাওয়া ইজরায়েলীদের নিয়ে কোনও উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি।
শুক্রবার হামাস হেপাজত থেকে মুক্তি পাওয়া ২৪জনের মধ্যে ১০জন থাইল্যান্ডের নাগরিক। বাকি ১৪জনের মধ্যে ৪জন মহিলা এবং ৪জন শিশু।
মুক্তি পাওয়া মহিলা এবং শিশুদের ইজরায়েলের স্নাইডার শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের শীর্ষ আধিকারিক এফরাত ব্রন-হারলেভ জানিয়েছেন, ‘‘প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা ভালো।’’
হারলেভ আরও জানিয়েছেন, ‘‘৮জনের শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও পরীক্ষা চলছে।’’
বাকি ৬জন ইজরায়েলী উল্ফসন মেডিক্যাল সেন্টারে রয়েছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থাও ভালো বলে রুশ সংবাদসংস্থা আরটি জানাচ্ছে।
যদিও ইজরায়েলের নেতানিয়াহু প্রশাসন মুক্তি পাওয়া ইজরায়েলীদের সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ড হতে পারে।
থাইল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ১০জন থাই নাগরিক ইজরায়েলের কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন। ইজরায়েলের ৪৮ ঘন্টা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবেন তাঁরা। তারপর তাঁদের থাইল্যান্ডে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। থাই বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, তাঁদের আরও ২০জন নাগরিক প্যালেস্তিনীয়দের হেফাজতে রয়েছে।
৭ অক্টোবর গাজা ভূখণ্ডের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ইজরায়েলে অভিযান চালায় হামাস। ইজরায়েলের দাবি, ১২০০ মানুষ প্রাণ হারায় সেই হামালায়। পণবন্দি বানানো হয় ২৪০ জনের বেশি ইজরায়েলী এবং বিদেশি নাগরিককে।
পণবন্দিদের মুক্ত করতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইজরায়েলী বাহিনী। বিমান থেকেও বোমাবর্ষণ হয়। ইজরায়েলী হামলায় ১৫ হাজারের কাছে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশ মহিলা এবং শিশু।
৩ সপ্তাহের কাছাকাছি সময় ধরে গাজায় অভিযান চালায় ইজরায়েল। গাজা শহরের ১০ লক্ষের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও পণবন্দিদের উদ্ধার করতে পারেনি ইজরায়েলী সেনা। ইজরায়েলের ঘোষিত নীতি হল, ‘সন্ত্রাসবাদী’দের সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়। হামাসকেও সন্ত্রাসবাদী বলে থাকে ইজরায়েল। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সেই হামাসের সঙ্গে বন্দি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসনকে। ইজরায়েলী বন্দিদের বদলে বেশি সংখ্যক প্যালেস্তিনীয়কে মুক্তি দেওয়ার দাবি প্রথম থেকে জানিয়ে আসছিল হামাস। সেই দাবিও কার্যত মেনে নিয়েছে ইজরায়েল।
বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ৪দিনের যুদ্ধবিরতি। যুদ্ধবিরতি লাগু করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে কাতার, মিশরের মত দেশগুলি।
Comments :0