Jalpaiguri

বর্ষবরণের রাতে বাড়িতেই ধর্ষণের পর খুন ছাত্রীকে

রাজ্য

বর্ষবরণে রাতে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার পরে খুনের ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানারই অন্তর্গত একটি গ্রামে। বাড়িতে একা থাকার সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবকই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার বছরের পয়লা তারিখেই এলাকায় এবং কোতোয়ালি থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, দফায় দফায় অভিযুক্তদের ঘর ভাঙচুরও করেছেন। 
রবিবার কোতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত ছাত্রীর বাবা। পুলিশ এদিনই অভিযুক্তদের একজনকে আটক করেছে, তার নাম গোপাল তন্ত্র (২০)। বাকি অভিযুক্তরা ফেরার বলে জানা গিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত প্রক্রিয়া চলবে।  


নিহত কিশোরীর এক দিদি এবং এক ভাই রয়েছে। ময়নাগুড়িতে বাসবাসকারী তাঁদের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে কিশোরীর বাবা মা ও ভাই ময়নাগুড়িতে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। কিশোরীর দিদি প্রাইভেট টিউশনে পড়তে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় কিশোরী যখন একাই ছিল তখনই বাড়িতে ঢুকে স্থানীয় কয়েকজন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং তারপরে খুন করেছে। নিহত ছাত্রীর বাবা থানায় গোপাল তন্ত্র সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গোপাল তন্ত্র, ধনঞ্জয় রায় সহ স্থানীয় এই যুবকেরা আমার ছোটোমেয়েকে আগেও উত্ত্যক্ত করেছে। তা নিয়ে আগেও গ্রামে ঝামেলা হয়েছিল, সালিশি সভাও হয়েছিল। এরপর ওরা আমার মেয়েকে একেবারে মেরেই ফেলল। 
নিহত ছাত্রীর পরিবারের এবং প্রতিবেশীদের বয়ান থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, গ্রামে দুষ্কৃতীদের দাপটে মেয়েদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা তলানিতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোনও আইনি পদক্ষেপে নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। গ্রামের কিছু ছেলে নেশা করে উচ্ছৃঙ্খল কাজকর্ম করত এবং অশান্তি তৈরি করে যাচ্ছিল অবাধে। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একা থাকা অবস্থায় দরজা ভেঙে অন্তত চারজন ঘরে ঢুকেছিল। তারা শারীরিক নির্যাতনের পরে মেয়েকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছে। শনিবার এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় পিকনিক চলছিল, সাউন্ড বক্স বাজছিল, তাই প্রতিবেশীরা ঘটনার সময় কিছু টের পাননি। 
তাঁদের আরও অভিযোগ, কিশোরীকে খুন করার পর তার দিদিকে মোবাইলে ফোন করে কেউ বলে ‘তোর বোন শেষ। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা।’ ওই ফোনটি এসেছিল স্থানীয় আরেকটি ছেলে হৃদয় দেবনাথের ফোন থেকে। ফোন পেয়েই দিদি প্রতিবেশীদের ফোন করলে তাঁরা বাড়িতে ছুটে এসে দেখেন অন্ধকার ঘরে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে নিহত ছাত্রীর দেহ। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ নিয়ে যায় ময়নাতদন্তের জন্য। 


বর্ষবরণের রাতের ঘটনার জেরে বিক্ষোভ শুরু হয় রবিবার সকাল থেকে। ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন স্থানীয়রা। অভিযুক্তদের বাড়ির লোকজন রাতেই এলাকা ছেড়ে পালান। এদিন সকাল দশটা নাগাদ উত্তেজিত জনতা এক অভিযুক্তের বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এরপর এলাকার লোকজন জড়ো হন কোতোয়ালি থানায়। সেখানেও থানার সামনে জমায়েত করে কয়েকঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ দেখান, পুলিশের সঙ্গে বচসাও বাঁধে। পরে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হয়। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পরে এদিন বিকালে ছাত্রীর মৃতদেহ বাড়িতে আনা হলে নতুন করে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। আরও একজন অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ পুলিশ যদি এই তৎপরতা আগে দেখিয়ে দুষ্কর্ম রোধে সক্রিয়তা দেখাতো তাহলে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না। 

Comments :0

Login to leave a comment