Md Salim

যাদের ঘরে চুরি-দুর্নীতির টাকা, তারা ডিএ’র গুরুত্ব বুঝবে না

রাজ্য

যাদের ঘর থেকে চুরি দুর্নীতির কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধার হয় তারা কর্মচারীদের প্রাপ্য মহার্ঘ্য ভাতার গুরুত্ব কী করে বুঝবে! মহার্ঘ্য ভাতা অস্বীকারে মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবকে এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

শনিবার নবান্নের সামনে সরকারী কর্মচারীদের বিক্ষোভে শামিল হয়ে তিনি বলেছেন, ডিএ কোনো ভিক্ষা নয়, এটা কর্মচারীদের হক। সরকার মূল্যবৃদ্ধি থামাতে পারছে না, কর্মচারীদের প্রকৃত আয় কমছে, অথচ ব্যয় বাড়ছে। এতে সমতা আনতে মহার্ঘ্য ভাতা দিতে সরকার বাধ্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কেন সেটা অস্বীকার করেন?
নবান্নের সামনে এদিন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রাপ্য মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় বিক্ষোভকারীরা নবান্নের সামনেই বিক্ষোভে অনড় ছিলেন। সেই বিক্ষোভ সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, যাদের কাছে গোরু চুরি, কয়লা চুরি, চাকরি চুরির কোটি কোটি পাওয়া যায় তারা মহার্ঘ্য ভাতার মর্ম কি করে বুঝবে! যারা মেহনত করে সৎ পথে থেকে সংসার চালান তাঁদের কাছে মহার্ঘ্য ভাতার গুরুত্ব অনেক। যে সরকার ডিএ দিচ্ছে না, কর্মচারীদের দাবি শুনতে চাইছে না, তারাই কোটি কোটি টাকা খরচ করে আইনজীবী লাগিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেছিল। আন্দোলনের চাপে মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করতে। বড়দিনের কেক খাওয়ার টাকা দিচ্ছেন? উনি কি নিজেকে রাজা রানি আর বাকিদের প্রজা মনে করেন? হক আদায়ে কর্মচারীরা ধক দেখাচ্ছেন। আজ ধরনা উঠে গেলেও, প্রাপ্য ডিএ এবং ঠিকা ও স্কিম ওয়ার্কারদের স্থায়ীকরণের দাবিতে লড়াই চলবে। এই লড়াইতে আমরা ওদের পাশে আছি।

মহম্মদ সেলিম বলেন, হান্নান মোল্লার নেতৃত্বে যখন কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছিলেন তখন পুলিশ দিয়ে সেই আন্দোলন ভেঙে দিতে চেষ্টা করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আর আমাদের রাজ্যে শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা যখন কাজের দাবিতে আন্দোলন করছেন তখন সেই আন্দোলনও পুলিশ দমনের চেষ্টা করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। রাজ্য সরকার অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে অল্প টাকায় তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে, প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন না, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সামান্য টাকা দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। অন্যদিকে স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে রেখেছে। তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা চাকরির জন্য কলকাতার রাজপথে ধর্না দিচ্ছেন, আদালতে ঘুরছেন কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না। কলকাতার রাজপথে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা যাতে ধর্নায়  বসতে না পারে তারজন্য পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাস্তায় ধরনায় যারা বসে আছেন তাঁরা যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারেন তার জন্য শৌচাগারে তালা দিয়ে বন্ধ করেছিল পুলিশ। এভাবে আন্দোলন দমনের চেষ্টা হলে বেকার ছেলেমেয়েরা নবান্নে এসে নবান্নের গেটে তালা দিয়ে দেবেন। কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন নবান্নে আছড়ে পড়বে। তিনি বলেন, নবান্নের সামনে কর্মচারীদের বিক্ষোভ একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, সারা রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় সাধারণ মানুষ কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পাশে আছে। 
শনিবার কর্মচারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভ কর্মসূচির শেষে সাংবাদিকদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে ভাস্কর ঘোষ জানান, দীর্ঘ ১১ মাস ধরনা চললেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধি এসে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সারা রাজ্য জুড়ে জনসংযোগ যাত্রা শুরু হবে। আগামী ১৯ জানুয়ারি হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন ও হাজরা মোড় থেকে তিনটি মহামিছিল হবে। সেই তিনটি মহামিছিল কলকাতার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়াও আগামী জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা তিন দিনের ধর্মঘটে শামিল হবেন। যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে লাগাতার ধর্মঘট করার হুঁশিয়ারি দেন ভাস্কর ঘোষ। 

Comments :0

Login to leave a comment