parliament

সংসদ ভন্ডুল করে দিল শাসক দলই

জাতীয়

parliament

 মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির শেয়ার বাজারে কারচুপি জালিয়াতি নিয়ে যৌথ সংসদীয় তদন্তের দাবিকে উড়িয়ে দিতে সোমবার সংসদে দেদার হট্টগোল চালিয়ে সভা ভন্ডুল করে দিল শাসক দল বিজেপি। এদিন শাসকের হট্টগোল সংসদের ইতিহাসে একটা নজির সৃষ্টি করল। বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী লন্ডনে দেশের গণতন্ত্রের কন্ঠরোধের কথা বলায় দেশের অপমান হয়েছে ধুয়ো তুলে হট্টগোল চালালো শাসক। রাহুল ক্ষমা না চাইলে সভা চলতে দেওয়া হবে না বলে তা ভন্ডুল করে দিল  শাসক বিজেপি। সংসদের দুই কক্ষ বিজেপি-র হট্টগোলে দফায় দফায় ভন্ডুল হয়ে যাওয়ায় তা সারা দিনের জন্য মুলতবি হয়ে যায়।
সোমবার শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্বের বাজেট অধিবেশন। এদিকে হট্টগোলেই অর্থ মন্ত্রী সংসদে প্রশ্নের লিখিত জবাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আদানির জালিয়াতি কারচুপিতে অর্থ লোপাটের অভিযোগ নিয়ে কোনও তদন্ত হবে না। বাজারে কোনও নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা নিয়ম মতো দেখে থাকে সেবি। তা তারা দেখছে বলেই দায় সেরেছেন অর্থ মন্ত্রী। বিরোধীরা আদানি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। কিন্ত তা আড়ালে চলে যায় বিজেপি-র সাংসদদের চিৎকার চেচামেচি হট্টগোলে। অন্যদিকে সংসদের দুই কক্ষেই ত্রিপুরায় বিজেপি-র সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনায় মুলতবি প্রস্তাব আনেন বামপন্থী সাংসদরা। হট্টগোলে তা আলোচনায় আসেনি।
এদিন তৃণমূল কংগ্রেস বাদে বিরোধীরা একজোট হয়েই আদানির শেয়ায় কেলেঙ্কারি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি তোলেন। লোকসভায় আদানি নিয়ে তদন্তের দাবিকে আড়াল করতে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা গেল স্বয়ং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে। তিনি রাহুল গান্ধীর লন্ডনের ভাষণকে এতে অজুহাত করলেন। তিনি রাহুলের ভাষণে ভারতের অবমাননা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। শুধু ইশারাই যথেষ্ট। হই হই করে উঠলেন বিজেপি সাংসদরা। সিং বাড়তি কিছু বলার আগে বিজেপি সাংসদরা রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে চিৎকার শুরু করে দেয়। বিরোধীদের কোনও কথাই বলতে দেয় না শাসক দল। এই হট্টগোলের মধ্যেই শোনা যায় আদানির কারচুপি জালিয়াতির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি চাই বলে স্লোগান তুলছেন বিরোধীরা। সিং বিরোধীদের দাবিকে আমল না দিয়েই সেই সময় অধ্যক্ষ ওম বিড়লার উদ্দেশে বলেন, আপনি এখনই রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিন। বিজেপি সাংসদরা চিৎকার করে ওঠে বলেন, রাহুল ক্ষমা না চাইলে সভা হবে না। চাপা পড়ে যায় আদানির তদন্ত কমিটির দাবি। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী কংগ্রেস আমলের জরুরি অবস্থা ঘটনা তুলে শাসকের হট্টগোলকে আরও উসকে দেন। সভায় একটা অরাজক অবস্থা তৈরি করে শাসক নিজেই। দফায় দফায় সভা শাসক নিজেই সভা ভন্ডুল করার পর  সারা দিনের জন্য সভা মুলতবি করে দেন অধ্যক্ষ।
এদিকে একই চিত্র ছিল রাজ্যসভায়। মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মতোই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল রাজ্যসভায় রাহুল গান্ধীর লন্ডনের ভাষণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেন রাহুল মোদীর ভারতে গণতন্ত্র কন্ঠ রোধ করা হচ্ছে বলেছেন তা নিয়ে সংসদের নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। বিরোধীরা একই ভাবে আদানি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি তুলতেই রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে হই হই করে চেঁচাতে থাকেন শাসক সাংসদরা। এরপর সুর পালটে গোয়েল দাবি করেন, রাহুল গান্ধীকে এই মুহুর্তে রাজ্যসভায় এসে ক্ষমা চাইতে হবে। এই দাবি শুনে হতবাক হয়ে গেছেন সকলেই। বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খারগে বলেন, আমরা হতবাক হয়ে গেছি মন্ত্রীর এরকম দাবি শুনে। রাহুল গান্ধী লোকসভার সদস্য, তিনি রাজ্যসভায় আসবেন কী করে? সংসদের ইতিহাসে কেউ কোনদিন এরকম দাবি শোনেননি। বিরোধীদের কথায় কোনও আমল দেননি বিজেপি সাংসদেরা। তাঁরা পরিস্কার জানিয়ে দেন রাহুল রাজ্যসভায় এসে ক্ষমা না চাইলে সভা হবে না। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেন আমার সংসদে ৪৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এরকম ঘটনা দেখেনি। যেখানে সংসদে সভা সরাসরি ঘোষণা করে ভন্ডুল করছে শাসক দল নিযেই। এটা কি গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ নয়? তবে কেন গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের কথা বলার জন্য রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে? সভা এতে কয়েক দফা ভন্ডুল হলে সভা সারাদিনের জন্য মুলতবি করে দেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। 
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে শাসক দলের সংসদ ভন্ডুলের ঘটনা উল্লেখ করে কংগ্রেস নেতা খারগে বলেন, বিরোধীরা দল আদানি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির দাবি  তোলাতেই হট্টগোল লাগিয়ে দিয়ে সভা ভন্ডুল করেছে শাসক দল। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী বিদেশে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার কথা বলায় দেশের অপমানের কথা বলছেন। এদিকে মোদী নিজেই যে বিভিন্ন দেশে তাঁর ভাষণে দেশ নিয়ে নানা কটূ মন্তব্য করেছেন তার জবাব কে দেবে? সংসদে সভা ভন্ডুল বিজেপি-র পরিকল্পিত উদ্যোগ বলে জানান খারগে।

Comments :0

Login to leave a comment