woman is not well

'দুর্মূল্যের বাজারে ভালো নেই শহরের ‘লক্ষ্মীরা

কলকাতা

woman is not well

 

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত: কলকাতা

এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে যারা সংসার টানেন সেই সব মহিলারা কেমন আছেন?
কলকাতা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডোমপাড়া বস্তি। মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজের উলটো দিকের গলি ধরে হেঁটে শ্যাম পার্ক মাঠের পাশ দিয়ে গেলেই ডোমপাড়া বস্তি। সরু গলির দু’ধারেই ছোট ছোট ঘর। স্বল্প পরিসরের ঘরগুলির মধ্যেই রয়েছে ব্যস্ততা। সকাল হতেই অধিকাংশ বাড়ির পুরুষ বেরিয়ে গেছেন কাজে। অনেক বাড়ির পুরুষ হয়তো কলকাতাতে থাকেন না। ভিনরাজ্যে গেছেন পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। বাড়ির মেয়ে বউরা কেউ কাজ করেন, আবার কেউ করেন না। কেউ আবার ব্লাউজ-সায়া সেলাইয়ের কাজ করে থাকেন। 

 

আবার কেউ আয়া, মাসির কাজ করেন। বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করার জন্য নানা ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেন। কাজ আকাল, তাই সমস্যা আরও বেড়েছে। সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে ‘গৃহলক্ষ্মীদের’। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলো নেই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নামে ৫০০ টাকায় সংসারের কিছুই হয় না। সঙ্গে যে কাজ চাই। হাত গুলো কাজ করতে চায় কিন্তু মমতা ব্যানার্জির শাসনে রাজ্যে কাজের অভাব। শুধু ৫০০ টাকার দয়ায় জীবন চলে না।
কলকাতার মতো শহরে কাজের অভাব সেই সঙ্গে জিনিসপত্রের মারাত্মক দাম, জীবন সঙ্কট অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান পদ্ম বৈদ্য। এই ডোমপাড়া বস্তিরই বাসিন্দা পদ্ম ছিলেন একজন আইসিডিএস কর্মী। পেনশন পান না। টানা লকডাউনের পর এখনও কাজের অভাব। কীভাবে চলে পদ্মার? 'বললেন নিজের জমানো সঞ্চয় ভেঙেই দিন গুজরান হয়। মাঝে মাঝে একটি বাড়িতে কিছু ঝাড়পোছের কাজ করে দিলে তারা খেতে দেয়। আর পোলিও দিদিদের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাচ্চাদের পোলিও খাওয়ালে কিছু টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু পোলিও তো এখন আর প্রতি মাসে হয় না। এই সব মিলিয়ে যে টাকা জোটে তাতেও একজনের পেট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তার ওপর সিলিন্ডারের যা দাম!'


'গ্যাসের দামটা মারাত্মক হয়ে গেছে' বললেন রচনা বৈদ্য। 'সিলিন্ডার প্রতি প্রায় ১,২০০ টাকা। বলুন তো, গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে এই দামে সিলিন্ডার কেনা সম্ভব? আমি গৃহ পরিচারিকার কাজ করি। মাসে হয়তো সব মিলিয়ে আমার যায় ধরুন ওই ৫হাজার টাকার কাছাকাছি। তার থেকে ১২,০০ টাকা কেটে নিলে কী থাকে। তার ওপর ডাল, ভাত, মাছ সবজি তো আর ফ্রিতে পাওয়া যায় না! বাড়িতে সবাই মিলে কাজ করলেও তা মাসে ১২-১৫ হাজারের বেশি যায় না। খাব কী আর জমাবো কী?'

 


একটি বেসরকারি স্কুলে বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন রাধা চক্রবর্তী। 'যতটা খাটনি ততটা মাইনে পাই না' আক্ষেপ করে বলেন বছর ৫০'র রাধা। 'আসলে কলকাতায় সবাই খাটিয়ে নেবে কিন্তু টাকা কেউ দেবে না। আসলে বাজারে কাজ না থাকলে যা হয়। তৃণমূল সরকার ভাবে ৫০০ টাকা দিলেই হয়ে যায়। কিন্তু কাজের কোনও ব্যবস্থা করবে না। এই যে সিলিন্ডারের দাম বাড়ল মমতা ব্যানার্জি কিছু বলেছে বিজেপি’কে? রোজগার কমেছে, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে আর মুখ্যমন্ত্রী চুপ।'
পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আলেয়া ফিরদৌসিও থাকেন এই বস্তিতেই। তিনি একজন স্বাস্থ্যকর্মী। শিশুদের পোলিও খাওয়ান আর বাকি সময় যেরকম কাজ পান সেটা করে থাকেন। আলেয়ার বক্তব্য বস্তিতে এখন বহু শিক্ষিত ছেলে মেয়ে আছেন। অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ আবার কেউ কেউ কলেজ পাশ করে টিউশনি করছেন। সেই সব ছেলে মেয়েরা কাজ চায়। তিনি বলেন, 'শিক্ষিত মেয়েরা শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে সন্তুষ্ট নয়। আর ছেলেদের তো কোনও ভাণ্ডার নেই তারা তো কাজ চায়। ভিন রাজ্যে অনেকেই চলে যান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যা হোক রোজগার করে আর পেট চলছে না। জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দাম সঙ্গে রোজগার নেই। কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি তারা।'
 

Comments :0

Login to leave a comment