100 DAYS WORK

১১ অক্টোবর রাজ্যে রেগা ডে পালন , বকেয়া টাকা ও কাজের দাবিতে মিছিল হবে গ্রামে

রাজ্য

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS রেগায় বকেয়া টাকা ও কাজের দাবিতে গ্রামে গ্রামে হবে লাল ঝান্ডার মিছিল। ছবি প্রতিকী।

রাজভবনের সামনে তৃণমূলের ধরনা কর্মসূচির দায়িত্বে রাজ্যের পূর্ত দপ্তর! ধরনা যতদিন চলবে, পূর্ত দপ্তর দিনরাত এক করে ধরনা মঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। 
রেগার টাকা আদায় নিয়ে রাজভবনের উত্তর গেটের সামনে গত ৫ অক্টোবর থেকে ধরনা শুরু করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। পুরোদস্তুর রাজনৈতিক এই কর্মসূচি যাতে সফলভাবে পালিত হয় তারজন্য কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে যাবতীয় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে পূর্ত দপ্তরকে। 


গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজভবনে সামনে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধরনায় বসেছে তৃণমূল। ওইদিনই কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি কমিশনার পূর্ত দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার(সিভিল) ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার(ইলেকট্রিক্যাল)কে একটি চিঠি দেন। নবান্নে পাঠানো সেই চিঠিতে পূর্ত দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে সাংসদের সভার জন্য কীকী ব্যবস্থা করতে হবে তার পূর্ণ বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। 

এমনকি যতদিন রেড ক্রস বিল্ডিং’এর উল্টো দিকে রাজভবনের উত্তর গেটের কাছে ধরনা চলবে ততদিন পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকদের দিনরাত এক করে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া আছে। 
গত দু বছর ধরে এরাজ্যে বন্ধ রেগার কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারের চরম অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রেগার কাজ বন্ধ হওয়ার পর আইন মেনে ‘৪ ক’ ফরম পূরণ করে ব্লক অফিসে জমা দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন। কিন্তু তার পরেও রাজ্যের খেতমজুরদের কাজ মেলেনি।

 

দু বছর ধরে রাজ্যের শাসকদলকে রেগা নিয়ে একবারের জন্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। লোকসভা নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ জানিয়েছেন,‘‘ কাজ না করে টাকা না পাওয়া একইসঙ্গে ‘৪ক’ ফরম পূরণ করে কাজ না পাওয়া জব কার্ড গ্রাহকদের নিয়ে আমরা পুজোর পর মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তৃণমূল বলছে, বঞ্চনা, আর বিজেপি বলছে চুরি। মাঝখানে কাজের কোনো ব্যবস্থা নেই। অভিষেক ব্যানার্জি ইডি, সিবিআই তদন্ত থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ আদায় করতে এ কোর্ট থেকে সেই কোর্ট দৌড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু রেগা নিয়ে মামলা করার পথে হাঁটছে না। ’’ 


অভিষেক ব্যানার্জি এরাজ্য থেকে নির্বাচিত ৪২ জন সাংসদের একজন। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো ও মমতা ব্যানার্জির পরে দলে তিনিই শেষ কথা। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক সভার জন্য সরকারি দপ্তরকে দায়িত্ব দিয়ে কাজ করানো এরাজ্যে কার্যত নজিরবিহীন ঘটনা। পূর্ত দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরাও বলছেন, ‘‘ মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু একজন সাংসদের রাজনৈতিক সভার জন্য এমন ঘটনা এরাজ্যে অতীতে ঘটেনি।’’


অভিষেক ব্যানার্জির ধরনাস্থলে পূর্ত দপ্তরের দায়িত্ব কী?

ঘড়ির কাঁটার হিসাব ধরে সর্বক্ষণ অভিষেক ব্যানার্জির ধরনা মঞ্চের স্থায়ী ও অস্থায়ী সব ধরনের কাঠামো যা তৈরি হয়েছে তার নিরীক্ষণ করতে হবে। তাঁবু, স্টেজ, ‘ব্যাকড্রপ’, ডায়াস, ইলেকট্রিকের যাবতীয় বন্দোবস্ত, সাউন্ড সিস্টেম থেকে শুরু করে মাইক্রোফোন, চোঙা- সবকিছুই যাতে সচল থাকে তারজন্য কড়া নজরদারি রাখবে পূর্ত দপ্তর। শুধু নজরদারিতেই কাজ থেমে নেই। ফি দিন সকালে থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশের হাতে পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকের হাতে তুলে দিতে হবে ‘ফিট সার্টিফিকেট’। শনিবার সন্ধ্যায় অভিষেক ব্যানার্জি ধরনা মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে কাজ করে কেন টাকা আটকে আছে তার তথ্য না আসা পর্যন্ত এই ধরনা চলবে। ফলে ফি দিন পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকদের এখন কাজ অভিষেকের ধরনা মঞ্চের রক্ষণাবেক্ষণ। 


সাংসদের দলীয় কর্মসূচির কাজ যাতে নিপুণভাবে চলতে পারে তারজন্য সবসময় একজন নোডাল অফিসার যাতে পূর্ত দপ্তর নিয়োগ করে তার নির্দেশ দিয়ে ওই আধিকারিকের নাম ও ফোন নাম্বার কলকাতা পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। 


আগামী লোকসভা ভোটের আগে বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে ১০০ দিনের কাজকেই সামনে আনতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। মূলত কাজ করেও কেন বকেয়া টাকা পাওয়া যাচ্ছে না সেই দাবিতেই ধরনা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে তৃণমূল। 


রেগা নিয়ে তৃণমূলের এই ধরনাকে স্রেফ রাজনৈতিক গিমিক বলে মনে করছেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রেগায় বকেয়া টাকা ও কাজের দাবিতে খেতমজুর ইউনিয়ন কলকাতায় গণ সমাবেশ করেছিল। এদিন সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সেই সমাবেশের পর পর্যালোচনা বৈঠক করে। সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি তুষার ঘোষ জানিয়েছেন,‘‘ আগামী ১১ অক্টোবর গোটা দেশে সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের ডাকে রেগা দিবস পালন করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে তার প্রতিবাদে ও এরাজ্যে বকেয়া মজুরি, কাজ ও রেগায় বরাদ্দের দাবিতে গ্রামাঞ্চলে মিটিং, মিছিল সভা হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment