লাল ঝান্ডা হাতে জমি পুনরুদ্ধার করলেন মণিরামের বর্গা চাষিরা। সোমবার দার্জিলিঙয়ের নকশালবাড়ির বড় মণিরামে মেচি নদীর পাড়ে বর্গাদারদের জমি ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে শামিল ছিলেন সিপিআই(এম) এবং সারা ভারত কৃষকসভার নেতৃবৃন্দ। বর্গাদারদের সঙ্গে নিয়ে ভারত-নেপাল সীমান্ত লাগোয়া ওই এলাকায় জমি বণ্টন করা হলো। ৯৯ বিঘা খতিয়ানে নথিভুক্ত জমি প্রায় ৫৭ জন বর্গাদারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
হাজার হাজার বিঘা জমি বড় মণিরামে মেচি নদীর পাড়ে রয়েছে। এই অঞ্চলে জমি কেনাবেচার চক্র অতি সক্রিয়। অভিযোগ, ভূমি রাজস্ব দপ্তর এবং জমি কেনাবেচা চক্রের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। মুনাফা লুট করছে একশ্রেণির জমি দালাল। মাফিয়ারা জমিগুলিকে কলকাতা, আসাম, শিলং, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। জোতদারদের বংশধররা কলকাতার কিছু বিত্তবানের কাছে জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। বর্গাদার, যাঁরা বর্গা নিয়ে ভাগে চাষ করেন, তাঁদের উত্তরাধীকারীদের না জানিয়ে জমি বিক্রি করা হয়েছিলো। জমিতে চাষ করতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছিল বর্গাদারদের। পুরানো বর্গাদারদেরএই ওয়ারিশরা তদ্বির ও অনুরোধ করেও করেও জমি চাষ করার অধিকার পাননি।
এরপরেই লাল ঝান্ডা আন্দোলনে নামে। শামিল হন বর্গাদাররা। রবিবার নকশালবাড়ির রাজীবচকে সভায় মিলিত হয়ে জোটবদ্ধভাবে মিছিল করে বর্গাদাররা মেচি নদীর পাড়ে ওই জমিতে গিয়ে হাজির হন। সিপিআই(এম) নেতা গৌতম ঘোষ ও সারা ভারত কৃষকসভার দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক ঝরেন রায়ের উপস্থিতিতে বড় মণিরামজোত এলাকার বর্গা উচ্ছেদ বিরোধী কৃষক কমিটির নেতৃত্বে বর্গাদাররা নিজেদের জমিতে লাল ঝান্ডা লাগিয়ে দেন। প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পুনরুদ্ধার করা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে ডাল চাষ শুরু করেন বর্গাচাষিরা।
বড় মণিরামে জমি চাষের অধিকার ফিরে পেয়ে বর্গাদারদের আনন্দের সীমা নেই।
সারা ভারত কৃষকসভার দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক ঝরেন রায় বলেন, ‘‘এই এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় জমি থেকে বর্গাদারদের উচ্ছেদের প্রচুর অভিযোগ আসছে। পোর্টাল থেকে প্রকৃত বর্গাদারদের নাম বাদ চলে যাচ্ছে এমনটাও হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকারের প্রকৃত বর্গাদার উচ্ছেদ বিরোধী যে অধিকার সেই অধিকারকে বাস্তবায়িত করতেই বড় মণিরামে বর্গাদারদের সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আগামীদিনেও আমাদের এই লড়াই জারি থাকবে।’’
সিপিআই(এম) নেতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘বর্গাদারদের অধিকার চাইতে গেলেই টালবাহানা করছে বিএলএলআরও দপ্তর। পুরোনো বর্গাদারদের ওয়ারিশদের অন্ধকারে রেখে কলকাতার পুঁজিপতিদের হাতে জমি বিক্রি করে দিয়েছিল জমি মাফিয়ারা। বর্গাদারদের সাথে নিয়ে তাদের হাতে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হলো। বড় মণিরামের বর্গা চাষিদের এই সাহসিকতা আগামীদের গোটা তরাই অঞ্চলকে উদ্বুদ্ধ করবে।’’
Comments :0